ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্র আমদানি কমানোয় শঙ্কায় গার্মেন্টস মালিকরা রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশের পোশাক খাত :: বেকার হয়ে পড়বেন লাখ লাখ গার্মেন্টস বালিকা :: মার্কিন বাজারে রফতানির নেতিবাচক ধারা বছরের শেষ নাগাদ অব্যাহত থাকবে : শহিদউল্লাহ আজিম :: গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকে থাকতে নীতি সহায়তা প্রয়োজন : ফারুক হাসান

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক শিল্প

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১০ জুন ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত গার্মেন্টস পণ্য। আর এই সেক্টরে কাজ করছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে আবার নারীর সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশের নারীদের বানানো এই পোশাকের একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো গার্মেন্টস পণ্যের অন্যতম বাজার। কিন্তু গত ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্র গার্মেন্টস পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা দেয়া হবে; না হলে অন্যচিন্তা। গার্মেন্টস পণ্যের এই ‘দুই বৃহৎ বাজার’ নিয়ে শঙ্কিত গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকটে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে, ডলারের সংকটে উৎপাদন খরচ বাড়ছে; তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গার্মেন্টস পণ্য আমদানি কমিয়ে দিলে গোটা সেক্টর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে। নতুন বাজার খুঁজতে গেলে পণ্য উৎপাদন স্বাভাবিক করতে যে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সাপোর্টের প্রয়োজন সেগুলো নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের উৎপাদিত গার্মেন্টস পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে মহাসংকটে পড়ে যাবে এই শিল্প খাত। বেকার হয়ে পড়বেন লাখ লাখ নারী শ্রমিক।

সূত্র জানায়, চলতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। এই বাজারে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শীর্ষ রফতানিকারক দেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে যে নির্ভরতা সেটা ভারত ও চীনের নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি কমালেও ভারত বা চীনের কোনো সমস্যা হবে না। তবে বাংলাদেশের চরম সংকটে পড়ে যাবে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দেয়া দেশ থেকে কোনো পণ্য ক্রয় করবেন না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তাদের মূল এজেন্ডা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও কূটনৈতিক মহলে চলছে উত্তেজনা। এ অবস্থায় বাংলাদেশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ না হাঁটলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা থেকে বিরত থাকার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন গ্রার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে তা পোশাক খাতে এখনো পড়েনি। তাই পোশাকের রফতানি কমা এখন পর্যন্ত স্বভাবিক বলেই মনে করছি। কারণ তারা পোশাক খাতে এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে কম ব্যয় করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানির নেতিবাচক বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ প্রধান এই বাজারে ভোক্তাদের ক্রয় চর্চায় বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কম দিচ্ছেন। পোশাকে রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও ইদানীং বিভিন্ন শর্ত ও শ্রমিক আইন নিয়ে কথা বলছে। তাই আগামীতে কি হবে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে আশাবাদী তারা পোশাক খাত নিয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না। আর নিলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে গত বছরও ৯ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে রেখেছিল বাংলাদেশ। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে বাইরে থেকে রফতানি হওয়া প্রতি দশটি পোশাকের একটি বাংলাদেশ থেকে গেছে। অবশ্য গত বছরের রফতানির ধারা চলতি বছরে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল থেকে চলতি বছরের একই সময়ে রফতানি কমেছে ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছর এই সময়ে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল, কিন্তু এই বছর এটি হয়েছে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি মূল্যমান বিবেচনায় ১৯ শতাংশ এবং আকার বিবেচনায় ৩০ শতাংশ কমেছে। এদিকে গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। গত বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি চিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেন দেশটির ভোক্তারা। যদিও দেশটির মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। গত এপ্রিলে তাদের মূল্যস্ফীতি কমে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ফলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুম থেকে দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ আসা বাড়তে পারে বলে ধারণা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের। তবে গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি প্রায় অর্ধেকে নামলেও বাংলাদেশ সেই সুবিধা নিতে পারেনি। আর তাই বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ক্রমেই বাড়ছিল বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের সব দেশকেই এখন মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির মতো অতিজরুরি পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভোক্তারা বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কেনাকাটায় অগ্রাধিকারের জায়গা থেকে সরে গেছে পোশাক। ভোক্তাদের এ প্রবণতার কারণে ক্রয় কৌশলে পরিবর্তন এনেছে প্রধান প্রধান রফতানি গন্তব্যের ব্র্যান্ড রিটেইলার প্রতিষ্ঠানগুলোও। ফলে রফতানি কমছে দেশগুলোয়।

পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ক্রয়াদেশ কমায় বাংলাদেশের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমেছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মোট রফতানির ভ্যালুতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর তা হয়েছিল ইউনিট প্রাইস ও হাই-ভ্যালু পণ্যের জন্য। বর্তমানে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকে থাকতে আমাদের অনেক নীতিসহায়তা প্রয়োজন হবে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এমনিই কমে এসেছে। এর ওপর আরো চাপ পড়বে, যদি পলিসি সাপোর্ট নিশ্চিত করা না হয়। পাশাপাশি এনবিআর ও কাস্টমসের প্রক্রিয়াগুলোও সহজীকরণের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমলেও নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্য এখনও কম ক্রয় করছেন দেশটির ভোক্তারা। তাই সেখানে বাংলাদেশের পোশাকের রফতানিও কমছে। যা আরও কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে। তবে আশা করি, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পোশাক রফতানি ঠিক হয়ে যাবে। ফারুক হাসান আরও বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি মূল্যমান বিবেচনায় ১৯ শতাংশ এবং আকার বিবেচনায় ৩০ শতাংশ কমেছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী