ব্যাংক ঋণ ৯২ হাজার কোটি টাকা
১২ জুন ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
চলতি অর্থবছর প্রায় শেষে এসে নিজেদের তহবিল সুরক্ষিত করতে দেশের ব্যাংক খাতে ঝুঁকছে সরকার। অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের চাহিদা বাড়িয়েছে সরকার। শুধু মে মাসেই এসব ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ০১৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও একই মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ঋণ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। মে শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের এগারো মাসে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে (কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছে ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ব্যবসায় মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীদের অনেকেই কম কর দিচ্ছেন। সরকারের ব্যয়ও খুব বেশি কমছে না। একরকম বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। যে অংক অনেক বড় হয়ে গেছে। কারণ, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে গেছে। নতুন করে কেনার চেয়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন বেশি গ্রাহকেরা। তাই সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের চাহিদা বাড়িয়েছে। উল্টো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফিতি বেড়ে যাচ্ছে; এরই মধ্যে সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মে) পর্যন্ত এগারো মাসে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে (কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছে ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সরকার ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে গত এক বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই নেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। কর্মকর্তারা জানান, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়। এ ঋণের অধিকাংশই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। অবশ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ধার নেয়া হয়েছে, সেটা হাই পাওয়ার্ড মানি। এটার একটা ইনফ্লেশনারি ইফেক্ট তো আছেই অর্থনীতিতে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া লোন প্রাইভেট সেক্টরে লোনেবল ফান্ডের পরিমাণ কমিয়ে দেব। তবে রাজস্ব আয় টার্গেটের চেয়ে কম হওয়ায় সরকারকে খরচ মেটানোর জন্য লোন করতে হচ্ছে। কীভাবে দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ বাড়িয়ে সরকারের খরচ কমানো যায়, সেদিকটাতে এখন সরকারকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। তা না হলে ইনফ্লেশনকে কন্ট্রোল করা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।
যদিও আগের অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩২ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এছাড়া, তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে চলতি অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা; যদিও আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারের যে উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো উচিত, সেখান থেকে না বাড়ার কারণে ঘাটতি বাজেটের জন্য ব্যাংক ঋণ বাড়িয়েছে সরকার। তিনি বলেন, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের চেয়ে তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এই ঋণ বাড়লে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের দশমাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৭ শতাংশ।
আরেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত কয়েকমাসে ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ; বাড়ছে যার কারণে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এছাড়া, বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোও সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের আমানত দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৮ লাখ কোটি টাকা। মার্চ মাসে এটি ছিল ১৫ দশমিক ২৩ লাখ কোটি টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত