ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চীনের সমর্থন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া

‘সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে, প্রত্যাশা বাংলাদেশের’

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৫ জুন ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩, ১২:০৯ এএম

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্নে সবাই সম্মান দেখাবে, সেটাই বাংলাদেশ চায়। চীনের ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে আসে বুধবার। বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ কী যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধক্ষেত্র হতে যাচ্ছে? গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে এক বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক কিছু মন্তব্য সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য সরকারের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে চায়, যে কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশের মত বাংলাদেশও নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সার্বভৌমত্বের চেতনার ভিত্তিতে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রূপকল্প ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্ত নেয় বলেও বার্তায় জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখেছে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া এই মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি গ্রহণের যে সার্বভৌম অধিকার, তার প্রতি সব পক্ষ ‘সম্মান প্রদর্শন করবে’ বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলেছে : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন একটি আয়োজনে বাংলাদেশকে নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখÐতা রক্ষায়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এবং নিজেদের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণের প্রশ্নে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।’ বেইজিংয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা এই কর্মকর্তার এমন প্রতিক্রিয়া আসে। ঢাকায় চীনা দূতাবাস গত বুধবার তাদের ফেইসবুক পেইজে তাদের মুখপাত্রের ওই বক্তব্য প্রকাশ করে।

বাংলাদেশে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, এখানে নির্বাচন নিয়ে ভিসানীতি গ্রহণ এবং বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের চিঠির বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়ত চাইছে না তিনি ক্ষমতায় থাকেন। তিনি এমনও বলেছেন, সাত সমুদ্র ১৩ নদী পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে না গেলে কিছুই হবে না। বাংলাদেশ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে।

ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরাও অবগত। আসলে, নিজেদের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার সমাধান না করে একটি নির্দিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে।’ চীনা মুখপত্রের ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের জনগণের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ করে না, তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথাই বলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্ম : বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের ওপর নজর রাখছে। গুম, খুন, ক্রসফায়ার ইত্যাদি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন থেকে কথা বলছে। মানবাদিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমলোচনা করছে। এর মধ্যেই প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ আলোচনা তৈরি করেছে। ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচুর অর্থ খরচ করে লবিষ্ট নিয়োগ করেও সফলতা আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঢাকা সফর করে জানান, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এক বছরে ক্রয়ফায়ার কমে গেছে এটা খুশির খবর।

গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ‘ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে’। পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষেধাজ্ঞা জারি করলো? যখন আইনশৃংখলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লংঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি জানি না, হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়ত গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভ‚তি।’

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ১৫ মে রাজধানীর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কেনাকাটায় কোনো দেশ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে তাদের কাছ থেকে সরকার কিছু কিনবে না। আমি নির্দেশ দিয়েছি নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশ থেকে কিচ্ছুটি কিনবেন না।’ শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পরও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রি সভা কমিটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি, সয়াবিন তেল ও তুলা কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এসব নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিøঙ্কেন জানান, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যে বা যারা বাধা দেবে, ভোটারদেরকে যারা ভয় ভীতি দেখাবে, তাদেরকে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।’ ওই বক্তব্যে বিøঙ্গেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতির ব্যাপারে ৩ মে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। এ ব্যপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩ মে দিয়েছে, আমরা মানুষকে জানাইনি। তাদের চিঠি আমরা কেন জানাবো? তারা জানাক।’

৪ জুন ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে ওনিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে; সেই মহাদেশের সঙ্গে আমরা যাতায়াত করবো বন্ধুত্ব করবো; আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরো চাঙ্গা হবে।’

চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত বুধবার বেইজিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দেয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের পক্ষে চীনের অবস্থানের কথা জানান।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা