মধ্যবিত্তের নীরব কান্না
১৬ জুন ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজন এবং নিম্নবিত্তদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। আর নীরব কান্না মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের সাথে সবকিছুর দাম এখন লাগাম ছাড়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। যাতায়েত, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে অনেক। কিন্তু সেই তুলনায় আয় কিংবা কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কেবল বাড়ছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। টিসিবির ট্রাক আর ন্যায্যমূল্যের পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সেখান থেকেও অনেকে ফিরছেন খালি হাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। সন্তানদের পড়া লেখা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষের বসবাস। মহানগরীর বাসিন্দাদের বিরাট একটা অংশ স্বল্প ও সীমিত আয়ের। আছে কয়েক লাখ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী। দিনমজুর মানুষের সংখ্যাও কয়েক লাখ। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, সবচেয়ে বড় ইপিজেডসহ নানা সেক্টরে কাজের সুযোগ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই মহানগরীতে অনেকে ছুটে আসেন জীবিকার টানে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি কলকারখানায় শ্রমিকের চাকরি করেন অনেকে। অর্থনৈতিক মন্দায় সব শ্রেণির মানুষ এখন বিপাকে।
বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দায় আমদানি-রফতানি কমছে। ফলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দার সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কট। রফতানি কমে যাওয়ায় রফতানিমুখি কলকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ছে। অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ডলার সঙ্কটে কাঁচা মালের আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানায় উৎপাদন থমকে গেছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। তাতে বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকেরা। কাজের খোঁজে নগরীতে আসা দিনমজুরেরা কাজ পাচ্ছে না। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
করোনার মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পর অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্ববিরতা নেমে আসে। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, দেশ থেকে অর্থ তথা পুঁজি পাচারের ফলে সঙ্কট তৈরী হয়। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলে। হু হু করে দেশে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজার হয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন। তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠে।
বিশ^বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। বেড়ে যায় যানবাহনের ভাড়া থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের দাম। দফায় দফায় বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দামও এখন লাগামছাড়া। শিক্ষা সামগ্রীর দামও বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে ঘর ভাড়া। মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে জর্জরিত নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবশ্রেণির মানুষ।
সীমিত ও স্বল্প আয়ের লোকজনের আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে ঘরভাড়া ও যাতায়াত খাতে। সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। খরচ বাঁচাতে বাজেট কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে মাছ গোশত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, হয় কমিয়ে দিয়েছেন। পারত পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় করছেন না। স্বল্প আয়ের লোকজনের এখন আর সঞ্চয় বলে কিছু নেই। অনেকের সংসার চলছে ধার দেনা করে।
দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। রাতে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। বাসা বাড়িতে গ্যাসের সঙ্কট চলছে। পানির হাহাকার নগরজুড়ে। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদায় লোনা পানির আগ্রাসনে ওয়ার পানি উৎপাদন ও পরিশোধন অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। গ্রাহকেরা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণেও মানুষের ব্যয় বাড়ছে।
নগরীতে চলছে মশার উৎপাত। মশক নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হলেও তারা এ ব্যাপারে নির্বিকার। কিছু এলাকায় মশক নিধন কর্মসূচি শুরু হলেও তা অনেকটা লোক দেখানো। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। খাল-নালা নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় মশার উৎপাত বাড়ছে। ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক। মশা তাড়াতে নগরবাসীকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তবুও নিস্তার মিলছে না।
সরকারি তরফে উন্নয়নের কথা বলা হলেও তার সুফল মিলছে না। রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো খাতে কিছু উন্নয়ন হয়েছে। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। কিন্তু গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্কট আর অর্থনীতিতে মন্দার কারণে সেখানে কাঙ্খিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যমান কারখানাগুলোও নতুন ইউনিট চালু করতে পারছে না। তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলছে না। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাকিস্তান থেকে জাহাজে এবার যা যা এসেছে
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন