অভয়নগরে মিশ্রপদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে সফল চাষি মফিজুর রহমান

Daily Inqilab নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে

১৭ জুন ২০২৩, ১১:২৫ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

যশোরের অভয়নগরে সাদা মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান দপ্তরী। সাদা মাছ ও গলদা চিংড়ি একই সাথে চাষ করে লাভবান হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই মিশ্রপদ্ধতির মৎস্য চাষ। তিনি জানিয়েছেন, সাদা মাছ যেমন, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলবর মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করলে ঝুঁকি কম থাকে। যে কারণে এচাষে ঝুঁকি কম থাকে এবং লোকসানের আশঙ্কা কম থাকে এবং অধিক লাভবান হওয়া যায়।

সরেজমিনে গেলে মৎস্য ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান জানান, মে-জুন মাসে সাগরে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ি পোনা জন্মায়। সেই রেনু-পোনা আহরণ করে তা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করা হয়। এই রেনু-পোনা প্রতি পিচের দাম নেয় ২-৩ টাকা। আবার একটু বড় সাইজ হলে তার ক্রয় মূল্য ৫-৭ টাকা হয়। সেই রেনু-পোটা মৎস্য ঘেরের নির্দিষ্ট নিরাপদ কোনে ছোট জায়গা গভীর করে প্রায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে ছাড়তে হয়। এসময় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিমের কুসুম, গম বা ভুট্টার গুড়া কিংবা ডিমের কুসুমের সাথে মিশিয়ে ছোট ছোট কনা তৈরী করে সেগুলি দিয়ে নার্সিং করা হয়। ২-৪ সপ্তাহ পর ওই রেনুপোনা যখন একটু বড় হয় তখন পকেট খুলে সমস্ত ঘেরে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় খাবার হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানীর জিরো ফিড ব্যবহার করা হয়। এর ১-২ সপ্তাহ পর ওই পোনার মধ্যে একটু বড় সাইজ অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৩-৪ পিচ হয় এমন বিভিন্ন প্রজাতীর সাদা মাছ আনুপাতিক হারে দেয়া হয়। তখন সাদা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কোম্পানীর ফিডসহ নানা জাতীয় সুসম দানাদার খাবার। পাশাপাশি সময়ে সাথে সাথে চিংড়ির রেনু-পোনার খাবারের তালিকায় পরিমাণ ও সাইজ বাড়তে থাকে। এভাবে প্রায় ৮ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত এক নাগাড়ে খাবার খাইয়ে নার্সিং করতে হয় এবং প্রয়োজনমত ওষুধ, সার, খৈলসহ নানা জাতীয় প্রোটিন খাবার ব্যবহার করতে হয়।
তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝে মাছ ধরে চেক করতে হয়, কোন প্রকার ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে কিনা। এছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে একটি আদর্শ খামার হিসেবে পরিগণিত হয়।

তাছাড়া ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি ইনকিলাবকে জানান, যেহেতু চিংড়ি মাছের রোগবালাই বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় এ চাষ থেকে দুরে থাকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে এই পদ্ধতিতে চাষ করা হলে লোকসানের আশঙ্কা থেকে অনেকটাই দুরে থাকা যায়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু মিশ্র পদ্ধতির চাষ তাই যদি কোন কারণে চিংড়ি মাছ কোন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলে সাদা মাছে ওই লোকসান পুষিয়ে দিয়ে যায় বলে মৎস্য চাষীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে দুরে থেকে যায়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে মৎস্য চাষীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। কারণ একটি প্রজাতির মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হলে অন্য প্রজাতির মাছ দিয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে বেশি বড় জায়গা ব্যবহার না করে ছোট ছোট জায়গা ব্যবহার করা অধিক উত্তম। কারণ একটি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অন্য পুকুরগুলি নিরাপদ থাকে। তাই মৎস্য চাষির পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে চাষ করলে অবশ্যই মৎস্য ব্যবসায়ী লাভবান হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, দেশের একটি মোটা অঙ্কের রেমিটেন্স আসে চিংড়ি তথা সাদা স্বর্ণ খ্যাত এই মাছ রফতানি থেকে। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি এই মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয় তাহলে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এছাড়া অভয়নগর উপজেলায় অনেক মৎস্য ঘের রয়েছে, যা থেকে অনেক মাছ উৎপাদন করা হয় এবং অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হয়ে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
আরও

আরও পড়ুন

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন