ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্বিষহ যন্ত্রণা আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তীব্র যানজটের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা

গতির পথে বিস্তর বাধা

Daily Inqilab কামাল আতাতুর্ক মিসেল

১৭ জুন ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারের একের পর এক উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখলেও ক্রমেই গতিহীন হয়ে পড়ছে এই মহাসড়কটি। যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা আর মহাসড়কের জায়গা দখল করে ব্যবহারের ফলে এই মহাসড়কেই লেগে থাকছে যানজট। বিশেষ করে রাজধানী থেকে বের হতে এবং প্রবেশের সময় এখন সাধারণ যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।

মহাসড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন, দিনে দিনে এ সমস্যা বাড়ছেই। মহাসড়কে পাশে হাটবাজার, অবৈধ গাড়ী পার্কিং, উল্টো পথে বেপরোয়া চলাচল ছাড়াও মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনাই এই সমস্যার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা। অবশ্য মহাসড়কের যানবাহন বৃদ্ধিকেও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলেও যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাচ্ছেন না যানজটের দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই আটকে থাকছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। নষ্ট হচ্ছে শত শত কর্মঘণ্টা। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তীব্র যানজটের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোথাও কোথাও মহাসড়ক ঘেষে হাট-বাজার রয়েছে। কোথাও-বা মহাসড়কের উভয়পার্শ্বে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও বাজারের স্থায়ী কাঠামো। এমনকি মহাসড়কের পাশে প্রায় সব কয়টির যাত্রী-ছাউনীগুলোও ব্যবসাস্থলে পরিণত হয়েছে। এসব যাত্রী-ছাউনীগুলোতে যাত্রী বসার কোন স্থান নেই। এগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীমহল দখল করে দোকান ঘর তৈরি করে ব্যবসা করার কারনে যাত্রীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ীতে ওঠা নামা করে। এতে অনেক সময় যানজট, জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখ যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশজুড়ে রীতিমতো দখলের মহোৎসব চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় ধরনের কাঠামো। তবে অস্থায়ী স্থাপনাই বেশি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারাই এই দখলবাজির সঙ্গে যুক্ত। দিন দিন দখলের মাত্রা বাড়লেও অবৈধ স্থাপনার কোন তালিকা নেই সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বা মহাসড়ক বিভাগের হাতে। এছাড়া অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির বিধান নেই আইনে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী এমনকি ম্যাজিস্ট্রেটও নেই সড়ক বিভাগের অধীনে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দিনের পর দিন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সড়ক দুর্ঘটনা, যানজটসহ যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু বারবার নোটিশ দেয়া হলেও কর্ণপাত করেন না দখলদাররা। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরে মাত্র দুই বার ঈদের আগে ঘরমুখো যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘেœ করতে মহাসড়ক গুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। ঈদ শেষে আবার আগের অবস্থা ফিরে আসে।

বিগত দিনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনার সরানোর জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ দখলমুক্ত করতে এখনই মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে। তখন দু’একদিন তোরজোড় শুরু হলেও সপ্তাহ না জেতেই আগের আবস্থায় ফিরে আসে।

সড়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘ যানজটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়নের সুফল পুরোটা পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৩ ঘন্টায় পৌছার কথা অথচ সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বের হতে মেঘনা ও গোমতী সেতুর মুখে সৃষ্টি হচ্ছে এ যানজট।
বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী প্রতিটি সড়কের মূল রাস্তার অন্তত ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না। আমাদের দেশে সরকারি বিধানেও তা উল্লেখ রয়েছে। তবে এটা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। রাস্তা নির্মাণের পর সংরক্ষিত ভূমি সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি গত ৪৮ বছরেও। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফোর লেন নির্মাণ হলেও সীমানা নির্ধারণ বা রাস্তা থেকে স্থাপনা করার দূরত্ব চিহ্নিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে বারবার রাস্তার দু’পাশ দখলের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুর এলাকার যাত্রীছাউনিটি অবৈধভাবে চা ও কনফেকশনারী দোকান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিন ব্যক্তি। যাত্রীছাউনি দখল করে ব্যবসা করা সম্পর্কে জানতে চাইলে দোকানদারা কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। মহাসড়কের গৌরীপুর এলাকার কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে যাত্রীছাউনিগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারছি না। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নিমসার এলাকায় দেখা যায়, পাইকারি ক্রেতাদের সবজি তোলা হচ্ছে ট্রাকে। আবার কেউ কেউ তুলছেন পিকআপ ভ্যানে। মহাসড়কে এলোপাথারী করে গাড়ী রেখে মালামাল তোলার কারণে যানজট লেগেই থাকছে। নিমসার ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামে বেশ কিছু অংশ এবং ফুটপাত দখল করে চলছে বালু ও পাথরের ব্যবসা। মহাসড়কে পাথর ও বালু রাখায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়াও মহাসড়কের পদুয়ার বাজার, চান্দিনা, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর এবং দাউদকান্দিতে মহাসড়কে পাশে অবৈধ স্থাপনার কারনে যানজট লেগেই থাকে।

হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন ফাঁড়িতে কর্তব্যরত সদস্যরা জানান, সবজি বোঝাই ট্রাক নিয়ে মহাসড়কে উঠতে গিয়ে দু’এক মিনিটের জন্য রাস্তা বন্ধ হলেই বাস ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ শত শত গাড়ি রং সাইডে (উল্টোপথ) দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে দু’দিক থেকেই রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যা যানজট পরিস্থিতিকে বেসামাল করে তোলে। এছাড়াও অবৈধ স্থাপনার কারনে দুর্ঘটনাকবলিত বা আটকেপড়া গাড়ি সরানোর জন্য ঘটনাস্থলে রেকার দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। রাস্তার উপর রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, বাস, মিনিবাস, ট্রাক, লরি কভার্ডভ্যান পার্কিং করা থাকে। এতে দ্রুতগামী গাড়িগুলো আটকা পড়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।

কুমিল্লায় বেড়াতে এসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভ্রমণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন, তিনি বলেন, চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার পর আশাবাদী ছিলাম নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারব। কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, গাড়িতে বসে প্রকৃতি দেখব, গান শুনব। কিন্তু রাস্তায় নেমে অবাক হয়েছি ! উল্টো দিক থেকে হু হু করে গাড়ি আসছে। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্ক করা হয়েছে। বিশাল সড়ক গলিতে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কের উপর গাড়ীপার্র্কিং ও উল্টোপথে গাড়ী চালকদের প্রাথমিক ভাবে সতর্কতা করাসহ মামলা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে জোর করে নিয়ম মানানো সম্ভব নয়। চালক, মালিক, যাত্রী সবাইকে বুঝতে হবে, মহাসড়ক তাদের মহাসম্পদ। এতে গাড়ি পার্ক করলে, উল্টো পথে চললে তাদেরই ক্ষতি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আরও

আরও পড়ুন

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন

শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন

টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ

টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ

লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা

লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা