কৃষিপণ্য রফতানিতে হোঁচট
১৮ জুন ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল গোটাবিশ্ব। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর সেই সময়েও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুসংবাদ ছিল কৃষিপণ্য রফতানিতে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছোঁয়া। ২০২০-২১ অর্থবছর ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি হয়। মাঝে একটি বছর। এর মধ্যেই চিড় ধরেছে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের সে অর্জনে। বছরখানেক ধরে সুগন্ধি চাল রফতানিও বন্ধ। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে অন্য কৃষিপণ্যসহ রফতানি লক্ষ্যমাত্রার ওপর। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস (জুলাই-মে) পর্যন্ত ৮০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানি হয়েছে। এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে রফতানি ছিল ১১০ কোটি ডলারের। এ সময়ে কমে গেছে চা, তাজা সবজি, ফুল, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রফতানি।
ইপিবির তথ্য বলছে, ১২ বছর আগেও কৃষিপণ্যের রফতানি আয় ছিল মাত্র ৪০ কোটি ডলার। শেষ ছয় বছর খাতটির রফতানি আয় দ্রুত বাড়ছিল। এর মধ্যে শুধু করোনার শুরুতে প্লেন বন্ধ থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতের রফতানি পাঁচ শতাংশ কমেছিল, যা পরের বছরই ভালো অবস্থানে যায়। এরপর এবছরই বড় হোঁচট খেতে যাচ্ছে এ খাতের রফতানি আয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশকিছু কারণে কৃষিপণ্য রফতানি কমেছে। দেশে অস্বাভাবিক খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য রফতানিকারক দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রফতানিযোগ্য খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি সবজির মতো কৃষিপণ্যের দাম। প্রক্রিয়াজাত পণ্যের কাঁচামালের দামও বেশি। যে কারণে আটা, ময়দা, তেল, চিনির মতো পণ্যগুলোর মাধ্যমে তৈরি হিমায়িত খাবারের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে রয়েছে ডলার সংকটে চলতি বছর কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়া, ব্যয় বাড়া, এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি জটিলতা। পাশাপাশি দেশ থেকে সুগন্ধি চালের রফতানি বন্ধ থাকায় সেই বাজার হারানো এবং সুগন্ধি চালের কারণে অন্য পণ্যের রফতানি আদেশ কমেছে।কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রফতানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুরজাতীয় শুকনা খাবার, ফলের রস (জুস), বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। শেষ ১১ মাসে কোম্পানিগুলো ২৩ কোটি ডলারের এ ধরনের পণ্য রফতানি করেছে, যা গত বছর একই সময়ে ২৭ কোটি ডলার ছিল। এটা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ কম।
প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, স্নাক্সজাতীয় খাবারে আমরা এখন একদম পিছিয়ে গেছি। আমাদের দেশে আটা, ময়দা, তেল, চিনি, ডালডা এসবের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিযোগী ভারত-পাকিস্তানে এগুলোর দাম কম হওয়ায় তাদের খরচও কম। প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। বড় একটি অংশের অর্ডার হারাচ্ছি।
রফতানিকারকরা বলছেন, কৃষিপণ্য রফতানিতে বাড়তি ফ্রেইট চার্জ একটা বড় বাধা। ফ্রেইট চার্জের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এটা একটা বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় রফতানির বাজারে হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাপা জানায়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশের পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ২০টি। প্রাণ ও স্কয়ার গ্রুপ রফতানিতে বেশ এগিয়ে। সবমিলে রফতানি করছে ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানিতে বর্তমানে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তারপরও অধিকাংশ কোম্পানির রফতানি প্রবৃদ্ধি চলতি বছর কমেছে।
এ অর্থবছরের ১১ মাসে তাজা সবজি রফতানি কমেছে ৪০ শতাংশ। রফতানি হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলারের সবজি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, আমরা রফতানিকারকদের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করি। সেখানে অ্যাভারেজ সবজির দাম থাকে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। সেটা বাছাই ও প্যাকিংসহ। সেখানে দেশের বাজারেই এক কেজি সবজি ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ছয়মাসে কার্গো ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এজন্য রফতানি করে লাভ হচ্ছে না। আগ্রহ হারাচ্ছে সবাই।
সুগন্ধি চাল রফতানি বন্ধ থাকায় এবছর সার্বিক রফতানি বেশ কমেছে। কৃষিপণ্যের রফতানিকারকরা বলছেন, কৃষিপণ্যের রফতানি ঝুড়ির একটা বড় অংশ জুড়ে থাকতো সুগন্ধি চাল। ওই চালের রফতানি গত জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ। যদিও সরকার পুনরায় এ চাল রফতানি খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে বন্ধের আগে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল রফতানি হতো। বিশ্বের ১৩৬টি দেশেই এই চাল রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে, যে বাজার প্রতি বছরই একটু একটু করে বাড়ছিল। কিন্তু এক বছর ধরে রফতানি বন্ধ থাকার কারণে এই বাজার হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রফতানিকারকরা। একই সঙ্গে নতুন করে রফতানি শুরু হওয়ার পরও আবার এই রফতানি বাজার পুনরুদ্ধার করা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।
সুগন্ধি চাল রফতানির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী ভারত ও পাকিস্তান। আর ক্রেতা দেশগুলো এসব দেশের রফতানিকারকদের কাছ থেকে সুগন্ধি চালের সঙ্গে অন্য পণ্য একত্রে নেয়। ফলে সুগন্ধি চাল না দিতে পারায় বাংলাদেশের অর্ডারগুলো (ক্রয়াদেশ) যাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানে। ইপিবি অন্য ক্যাটাগরিতে কৃষিপণ্যের একটা রফতানির হিসাব দেয়, যার মধ্যে ৩০ শতাংশই চালের রফতানি। এই ক্যাটাগরিতে রফতানি ১১ মাসে ৪৫ শতাংশ কমেছে, যা ৮১ কোটি ডলার থেকে এখন নেমেছে ৬৩ কোটি ডলারে।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি