অস্থির চিনির বাজার
২০ জুন ২০২৩, ১১:০৮ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
চিনির দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে চিনি কল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ প্রস্তাবের খবর গত সোমবার বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। ঈদুল আজহার আগে ২২ জুন থেকে অর্থাৎ আগামীকাল থেকে এ বাড়তি মূল্য কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। তবে তার আগেই অস্থির হয়ে উঠছে চিনির বাজার। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল খুচরায় চিনি আরও বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অনেক দোকানে চিনি থাকার পরও বলছে নেই। দাম আরও বৃদ্ধি পাবে এ আশায় দোকানিরা চিনি মজুদ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এ দামে বাজারে চিনি পাওয়া যায় না। এক কেজি খোলা চিনির জন্য ভোক্তাকে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা গুনতে হয়েছে এতদিন। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। কালেভদ্রে দু-এক প্যাকেট মিললেও গুনতে হয় ১৪০ টাকা বা তারও বেশি।
সরকার চিনির দর বেঁধে দিলেও এতদিন খুচরা ব্যবসায়ী থেকে আমদানিকারক কেউই তা মানেননি। সরকারি নির্দেশনা ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করে আসছিল। এখন মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করতে শুরু হয়েছে বাজারে।
চিনির দাম বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবের একদিন পর গতকালই খিলগাঁও,তালতলা, শান্তিনগর ও মালিবাগ বাজারে চিনির দাম আরও বাড়তে দেখা গেছে। খিলগাঁও রেল গেইট বাজারে এক গলিতে অনেকগুলো মুদি দোকান রয়েছে। সেখানে সবগুলোতেই খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা একদিন আগেও ১৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। একই অবস্থা অন্য দুই বাজারের দোকানেও। এর মধ্যে খুব কম সংখ্যক দোকানে আগের দামে চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ দোকানেই প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না।
শান্তিনগর বাজারে মুদি দোকানি সুলতান বলেন, চিনির দাম বাড়ার প্রস্তাবের পর থেকে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বস্তাপ্রতি একশ টাকা বেড়েছে। সে কারণে সবাই দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
জানা গেছে, গত সোমবার মিল মালিকদের সংগঠনটি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠি দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা জানায়। এর আগে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে একটি বৈঠকও রয়েছে বিটিটিসিতে। এরপর এ প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। তবে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আসার আগে মিল মালিকরা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন। যার প্রভাব এরই মধ্যে বাজারে পড়েছে।
ওই প্রস্তাবে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৫০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে, যা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবটিতে। এখন সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেওয়া আছে।
কিন্তু এর আগেই কেন বাজারে দাম বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মালিবাগ বাজারে খুচরা চিনি বিক্রেতা আসলাম হোসেন বলেন, দাম বাড়ার খবর এলেই সেটা বেড়ে যায়। এ দেশে নির্ধারিত সময়ের পরেই যে বাড়বে এমন রেওয়াজ নেই। কারণ দাম বাড়বে সেটা কোম্পানির প্রতিনিধিরা অনেক আগেই জানিয়ে দেয়। এর পরপরই বাজারে সংকট তৈরি হয়। বাড়তি দামে কিনতে হয়।
যদিও পাইকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য বিক্রেতাদের সংগঠন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চিনি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়নি এখনো। সে কারণে মৌলভীবাজার ও বেগমবাজারে চিনির দাম বাড়েনি। বরং আগের প্রচুর চিনি মজুত রয়েছে। সেগুলো তিন-চারদিন একই দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।
খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, খুচরা বিক্রিতারা এখন নিজ নিজ বাজারে সিন্ডিকেট করে। তারা মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত খোঁজে। কোনোকিছুর দাম বাড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। কিন্তু কমলে, কমায় না।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শীর্ষ কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার বর্ধিত দাম মেনে নিচ্ছে না। এর আগের কয়েক দফায় সরকারের সঙ্গে বসে দাম ঠিক করলেও মিল মালিকরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে দাম মেনে নেন ব্যবসায়ীরা। সে কারণে কয়েক মাস বাদেই আবারো দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে চিনির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। ক্যাব জানায়, চিনিকল মালিকদের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ভোক্তা স্বার্থবিরোধী ও অন্যায়। এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। মিল মালিকদের এ ভোক্তা স্বার্থপরিপন্থি সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায় ক্যাব।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি ৮০ থেকে ৮৪ টাকা ছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে, যা অস্বাভাবিক। অন্যদিকে বিটিটিসির তথ্য বলছে, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ৮ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল ৫৫১ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের ৮ জুন তা বেড়ে হয় ৬৭৩ দশমিক ১৫ ডলারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব