শ্রীমঙ্গলের সুস্বাদু আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
২১ জুন ২০২৩, ১০:৪১ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
চায়ের রাজধানী বলা হয় শ্রীমঙ্গলকে তবে আনারসের রাজধানী বললেও কম বলা হবে না। দেশের চাহিদা পূরনে সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপন্ন হয় শ্রীমঙ্গলে। এখানকার আনারস দেশজুড়ে সুপ্রসিদ্ধ যা স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। এই ঋতুতে বাজারজুড়ে অন্য ফলের সাথে শ্রীমঙ্গলের আনারসও আধিপত্য বিস্তার করছে।
আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও বটে। আমাদের দেশে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে আনারস চাষ হয়। তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত। শ্রীমঙ্গলের আনারস রাজধানীসহ সারা দেশে রয়েছে এই ফলের চাহিদা। একসময় রপ্তানী হতো বিদেশে এখন দেশে চাহিদা বাড়ায় শ্রীমঙ্গলের আনারস যাচ্ছে দেশজুড়ে।
এখানে দিগন্তজোড়া সবুজ চা বাগান আর পাহাড় এরই মধ্যে রয়েছে আনারস বাগান। যখনই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পথে প্রবেশ করবেন ঠিক তখনই আপনার চোখ পড়বে আনারসের সারি সারি বাগানে দিকে, এই আনারসের গাছগুলো নিচ থেকে টিলার উপরে এমন ভাবে গিয়ে উঠেছে দূর থেকে মনে হবে যেন একদল পিপিলিকা ডানা মেলে সারি বেঁধে উপরে উঠছে। তারপর উঠে আসুন একেবারে আনারস বাগানের চূড়ায়, যতোটুকু চোখ যায় দেখবেন টিলার পর টিলা শুধু আনারস আর আনারস।
জানা যায়, আনারসের আদি উৎপত্তি স্থল ব্রাজিল কিংবা প্যারাগুয়ে তবে বাংলাদেশে এই ফলের সংস্করণ ঘটে টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলে অষ্ট্রাদশ শতকের শেষের দিকে। সেখান থেকে সিলেটের বিয়ানিবাজারের জলঢুপে এই ফলের বিস্তার হলে এর নাম পড়ে জলঢুপি আনারস। তখন এই আনারস সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি বাড়ির পুকুরপাড়, টিলায় কিংবা আঙ্গিনায় পারিবারিক ভাবে আনারসের চাষাবাদ শুরু হয়। এলাকা ভেদে আনারসের নাম ছিল ‘বিরতুং’ কিংবা ‘আনানাছ’। মধু মাসের আম কাঁঠালের সাথে আনারস হয়ে উঠে মেহদারির অন্যতম পণ্য। নতুন দামান্দ (জামাই) গৃহে আম কাঁঠালি দেওয়ার সময় ‘বিরতুং’ হয়ে উঠে অবিচ্ছেদ্য মৌসুমি এই ফল আনারস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভাবে আনারসের চাষাবাদ শুরু হলেও ১৯৫০ সালের পর থেকে শ্রীমঙ্গলে বাণিজ্যিক ভাবে আনারসের বাগান তৈরী শুরু হয়। তখন খাসিয়া উপজাতির পান পুঞ্জির পাশেই ক্ষুদ্র পরিসরে আনারসের বাগান গড়ে উঠে। এরপর ১৯৬০ সাল থেকে পাহাড়ি ছনখলা কেটে আনারসের বাগান তৈরি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আনারস চাষ। উৎপাদিত আনারসের রাজধানী হয়ে উঠে শ্রীমঙ্গল।
এখানে ভোর রাতে ফজরের আজান শোনার সাথে সাথেই শত শত ঠেলাগাড়ি আনারস নিয়ে আসতে শুরু করে শ্রীমঙ্গল বাজারে। এই উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদসহ প্রতিটি এলাকা থেকে প্রচুর আনারস আসে বাজারে। বাজারে আসা ঠেলাগাড়ি গুলোর সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে রাখা আনারসকে ডিসপ্লের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়। যেন দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়ৎদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে সহজে আকৃষ্ট হন। আর এখান থেকেই আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গাড়ি অনুপাতে একেকটা ঠেলাগাড়িতে একশ পঞ্চাশ থেকে ৫০০ পিস আনারস সুন্দর করে ডিসপ্লে করে রাখা হয়। সে গুলো সাইজ অনুযায়ি প্রতি পিস আনারস বড় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি ১৫ থেকে ২০ টাকা, ছোট সাইজের আনারস ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। বাগান মালিক ও আড়ৎদারদের তথ্য মতে বাজারে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন’শ পিস আনারস বিক্রি হয়। বাজারের ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন আড়ৎদার রয়েছেন। যাদের কাছে বাগান মালিকগন তাদের আনারস বিক্রির জন্য দিয়ে থাকেন। তাদের তথ্য অনুযায়ি সেমতে এবারের ফল মৌসুমে বাজারে প্রায় ৫ কোটি পিস আনারস বিক্রি হয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। যা প্রায় ২ শ কোটি টাকার মতো হবে।
আশিক বানিজ্যালয়ের আড়তদার মো. আশিকুর রহমান বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার আনারসের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা ৬ মাস যাবৎ মৌসুমি এই সিজনের আনারস বিক্রি করছি, এবারের বিলাতি আনারসের স্বাধ-গন্ধ অনেক মজার এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনেক হওয়াতে আমরা দামও ভালো পাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমার আড়দে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার পিস আনারস বিক্রি হয় যা সিলেট বিভাগসহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে।
আল আরাফা বানিজ্যালয়ের আড়তদার মো. কামরুল হাসান বলেন, এবার আনারসের বাজার অনেক ভালো, প্রচুর ফলন হওয়াতে কমিশনও ভালো হচ্ছে, হাজারে ৫০টাকা আমাদের হয়, আমার আড়ত হতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স মনজুর আলী আড়তদার মো. মছর উদ্দিন বলেন, আনারসের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু আনারস সংরক্ষণের অভাবে পচে যাচ্ছে। পুক্ত আনারস বেশি দিন বাগানে রাখা যায় না, বৃষ্টি হলে সেই আনারস বাগানেই পচে যায়। সে জন্য আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর দৈনিক ইনকিলাব’কে জানায়, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। এবং বিদেশ থেকে ‘এমভি-২’ নামে একটি আনারাসের ভ্যারাইটি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি চাষ করতে পারলে আনারস উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ