লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

Daily Inqilab এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশী

২১ জুন ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

হজ্জ অথবা ওমরাহ এর এহরাম বাঁধার পর সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঙ্গ করা ওয়াজিব। এতদ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ কাবা ঘরের হজ্জ অথবা ওমরাহ সম্পন্ন করে, এ দু’টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোনো গুনাহ নেই। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ’। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৫৮)

এই আয়াতে কারীমায় ‘শায়াই রিল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। শায়ায়ের শব্দটি শায়ীরাতুন শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। শায়াই রিল্লাহ বলতে সে সব আমলকে বোঝায় যেগুলোকে মহান আল্লাহ তায়ালা দ্বীন ইসলামের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, আরবী হজ্জ শব্দটির শাব্দিক অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা পোষণ করা। আল কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় হজ্জ হচ্ছে বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থায় বাইতুল্লাহ শরীফে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে বিশেষ ধরনের কিছু কর্ম সম্পাদন করা। আর ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীয়তের পরিভাষায় ইহরামসহ আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফে হাজির হয়ে তাওয়াফ ও সাঈ প্রভৃতি বিশেষ কয়েকটি ইবাদত সম্পাদনের নাম ওমরাহ।

বস্তুত সাফা এবং মারওয়া বাইতুল্লাহর নিকটবর্তী দু’টি পাহাড়ের নাম। হজ্জ কিংবা ওমরা আদায় করার সময় কাবা ঘরের তাওয়াফ করার পর এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একে সাঈ বলা হয়। অন্ধকার যুগেও যেহেতু এই সাঈর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, এ জন্য মুসলমানদের মধ্যে কারো কারো মনে একটা সন্দেহ ও দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধহয় এই সাঙ্গই অন্ধকার যুগের কোনো অনুষ্ঠান এবং ইসলামের যুগে এর অনুসরণ করা হয়তো গোনাহের কাজ। কোনো কোনো লোক যেহেতু অন্ধকার যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করত, সে জন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তারা একে অন্ধকার যুগের কুসংস্কার হিসেবেই গণ্য করত। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে মহান আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বাইতুল্লাহ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে এ আয়াতে কারীমায় বাইতুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরো একটি সংশয়ের অপনোদন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ (কাবা) কাবা ঘরের হজ্জ বা ওমরাহ সম্পন্ন করে, এ দু’টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোনো পাপ নেই।’ তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সাফা ও মারওয়ার মাঝখানের সাঈ প্রমাণিত। এর জন্য দেখুন, মুসনাদে আহমাদ : ৬/৪২১, ৪২২। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেস এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের জন্য গোনাহ মোচনকারী। আর যে গোনহ ও খারাবি থেকে মুক্ত হয়ে হজ্জ করে, জান্নাতই হলো তার পুরস্কার। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

স্মরণ রাখা দরকার যে, হজ্জের ফরজ ৩টি। যথাÑ (১) ইহরাম বাঁধা, (২) আরাফায়অবস্থান করা, (৩) তাওয়াফে জিয়ারত করা। এই ৩টি ফরজসমূহের কোনো একটি আদায় না করলে হজ্জ আদায় হবে না। আর হজ্জের ওয়াজিব ছয়টি। যথাÑ (১) মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করা, (২) মিনায় শয়তানসমূহের ওপর কংকর নিক্ষেপ করা। (৩) হজ্জে কিরান বা তামাত্তু পালনকারীদের জন্য কুরবানি করা, (৪) সাঈ করা (সাফা-মারওয়ায় সাতবার দৌড়ানো), (৫) ইহরাম খোলার পর মাথা মু-ন করা, (৬) তাওয়াকুল বিদা বা সর্বশেষ তাওয়াফ করা। আর হজ্জের সুন্নাতসমূহ এগারোটি।

যথাÑ (১) ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা অযু করা, (২) দু’টি নতুন বা ধৌত করা সাদা কাপড় পরিধান করা, (৩) ইহরামের নিয়ত করার পর দু’রাকাত নামায পড়া, (৪) বেশি বেশি তালবিয়াহ বা লাব্বাইকা পড়া (৫) মক্কার অধিবাসী ব্যতীত অন্য লোকদের তাওয়াফে কুদুস (প্রথম তাওয়াফ) করা, (৬) মক্কায় থাকাবস্থায় বেশি বেশি তাওয়াফ করা, (৭) তাওয়াফ করাকালীন সময়ে চাদরের এক পাশ ডান হাতের বগলের নীচ দিয়ে অন্য পাশ বাম কাঁধের উপর রাখা, (৮) তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্কর হেলেদুলে চলা, (৯) সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ করার সময় দ্রুত চলা, (১০) প্রতি চক্করের শেষে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা, (১১) কুরবানির দিন মিনায় অবস্থান করা। আসুন, আমরা যাথযথভাবে হজ্জ আদায় করতে মনোযোগী হই। আমীন!


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
কুমারখালীতে রাতের আঁধারে সড়কের অর্ধশতাধিক গাছ কর্তন
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ