আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি
২৬ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি নিয়ে এসেছি, সংশোধনীর ওপর আলোচনা করছি। পরবর্তিতে সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটা রুপরেখা আসবে বলে আমরা আশা করছি।
গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে, তাদের শুভ বুদ্ধি উদয় হোক। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে তারা একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করা, এর আগে তাদের পদত্যাগ করা। এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে কোনো মতেই নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হবে না। সেজন্য আমাদের বক্তব্য পরিস্কার এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে কনসেনসাসের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকার যেটা আমরা নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার বলছি যেটা করতে হবে।
শিগগিরই সরকার পতনের একদফার আন্দোলনের ঘোষণা আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি, মূলত একদফার আন্দোলনেই আছি। এটা একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে তা খুব শিগগিরই দেখতে পারবেন.. শিগগিরই।
আন্দোলন বেগবান হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঈদের পরে আমাদের আন্দোলন আরও জোরদার হবে, আরও বেগবান হবে।আমরা যারা আমাদের সঙ্গে একসাথে যুগপৎ আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সাথে আলোচনা করে আন্দোলনকে আরও বেগবান করবো। আন্দোলন বেগবান হবে।
বিএনপি মহাসচিব ঈদ উদযাপনসহ দলীয় কর্মসূচিতে মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও যাচ্ছে। এবার তিনি সেখানে ঈদ উদযাপন করবেন এবং বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন।সেজন্য এবার বিএনপি মহাসচিব ঢাকায় ঈদের দিন থাকছেন না। এর আগে সাংবাদিকদের ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিদেশীদের চাপ ও প্রভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার মানে হচ্ছে যে, সরকার নেই। সেন্ট মার্টিন না দিলে যদি আপনার ক্ষমতায় না থাকা হয় তাহলে তো নেই। বলেছেন যে, উনি দেবেন না। তাহলে উনি নেই। আবার উনি গ্যাস বিক্রি না করলে থাকা যাবে না। তাহলে উনি নেই। মানেটা তো সেটাই দাঁড়ায়। আসলে এই বক্তব্যটা উনার (প্রধানমন্ত্রী) নিজের, উনার, উনার দলের। আমাদের তো সেটা না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, আমরা বরাবরই বলে আসছি যে, তাদের দু:শাসন এবং গণতন্ত্র বিরোধিতা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে আমি। এটা এমন এক পর্যায় চলে গেছে যে, সমগ্র দেশের মানুষ না আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব সেখানে তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, তোমার এখানে মানবাধিকার নেই, তোমার এখানে গণতন্ত্র নেই। আমরা মনে করি যে, দেয়ার ইজ দ্য ট্রুথ।
তিনি বলেন, ওদেরটা (বিদেশী) আপনারা বেশি শুনেন আরকি। আর আমরা গত ১২ বছর ধরে বলছি, চিৎকার করছি, আমাদের ৬‘শ মানুষ গুম হয়ে গেলো, আমাদের সম্প্রতি রাস্তায় ১৭ জন নেতা-কর্মী গুলি খেয়ে মারা গেলো, তখন কিন্তু সেটাকে আপনারা গুরুত্ব দেন না। দ্যাট ইজ দ্য প্রবলেম।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গার্ডিয়ানে লেখা না হবে, স্টেটসম্যানে না লেখা হবে, যতক্ষণ বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা না বলা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চান না। তবে আরেকটা কারণ হচ্ছে আপনারা (বাংলাদেশের গণমাধ্যম) এমন একটা যাতাকলে পড়েছেন যেটা বাস্তবতা আপনারা সব কথা বলতে পারেন না, লিখতে পারেন না, দেখাতে পারেন না, সম্ভব হচ্ছে না। কেনো? কারণ মিডিয়া কনট্রোল, মিডিয়া ডিপপ্রেশন, বিভিন্ন নিবর্তন মূলক আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিভাবে চলতে পারে?
মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্বাস করেন আমার মাঝে মধ্যে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে, এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি ভাই, ১৯৭১ সালে এরজন্য আমরা যুদ্ধ করেনি,মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এমন একটা পরিবেশ আমরা দেখতে চাইনি।‘ আগেকার দিনগুলোতে কি উৎসবের মতো পোস্টার-টোস্টার দিয়ে সকাল বেলা রান্না-বান্না করে ভোট দেয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুতি নিতো। আর এখন ভোটের আশে-পাশে নেই। কারণ কি যে, এখানে ভোট দিয়ে লাভ নাই, ভোট দিলে উল্টো দিকে চলে যায়। এই এক কঠিন অবস্থা। এই একটা অবস্থার মধ্যে আমরা কি করে আশা করতে পারে যে, এখানে এই সরকার থাকবে আর সেখানে সুষ্ঠু ভোট হবে। আর উনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রতিদিন বলে যাচ্ছে, প্রমাণিত।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতি ভালো এই ধরনের মিথ্যাচার তো তারা ক্রমাগত করে চলেছে। মানুষকে বোকা বানিয়েম ভুল বুঝিয়ে বলা যে, অর্থনীতি খুব শক্ত আছে, ভালো আছে, সবল আছে.. দেশের অর্থনীতিবিদদের সাথে কথা বলেন, তারা সবাই বলবেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকটটা বড় রকমের সংকট। আপনি আমদানি করতে পারছেন না, ব্যাংক থেকে টাকা পাচার হয়ে চলে গেছে। জনগণের যে ন্যূনতম পণ্য সামগ্রি চাল-ডাল-তেল .. সেইগুলো মূল্য কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য কোনো কার্যকর কাজ করতে পারছেন না। ইনফ্লেশন কমানোর জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বাজেট ও মুদ্রানীতিতে ইনফ্লেশন কমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। অর্থাত মূল জায়গাগুলো বা সমস্যাগুলোতে এডড্রেস করার কোনো পদক্ষেপ নেই। উপরন্তু কালকেই, ব্যাংকের পরিচালনকদের আবার ১২ বছর করেছেন। যেটা প্রস্তাবেও ছিলো না। কার ইঙ্গিতে, কার হুকুমে এটা হলো, এই দেশ কিভাবে চলে আমরা জানি না। সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবই করা হয় নেই। হঠাৎ করে দেখলাম একজন সদস্য বললেন, সরকার মেনে নিলো। এই সরকারের সাধারণ জনগনের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাদের দায়বন্ধতা শুধু মাত্র যারা লুট করছে, বিদেশে অর্থ-বিত্ত তৈরি করছে তাদের কাছে। ১০% ধনীর হাতে ৪১% আয়। মানুষ যাবে কোথায়? যেদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির তাদের আয় বাড়ছে না, তারা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না সেই দেশে আপনি কিভাবে এটাকে জনগণের সরকার বলতে পারেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আওয়ামী লীগ না থাকলে নাকী দেশের উন্নতি হয় না। কোথায় উন্নতি? একটু দেখেন। উড়াল সড়ক, টানেল, আজকে কাঁচা মরিচের দাম তিন‘শ টাকা পার হয়ে গেছে, চার‘শ টাকা। তাহলে কোথায়? হোয়ার ইজ দ্যা গভমেন্ট, গভমেন্ট আছে কি?‘ এতো ভয়াবহ পরিস্থিতি। আপনি দেখেন ট্রাফিক কনট্রোল হয় না, জিনিস পত্রের দাম কমানোর ব্যবস্থা নেই, আপনার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। রিজার্ভের অর্থ খরচ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সিডিপি এরা বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট করেছে সেখানে পরিস্কার দেখা গেছে যে, আসলে রিজার্ভের টাকাটা যেটা করেছে, সেটা হচ্ছে যে, ইম্পোর্ট কস্ট দেখিয়ে বেশি করে ওয়ার ইনভেয়স করে টাকা বের করে নিয়ে চলে গেছে। আর রিজার্ভের টাকা থেকে লোন(আইডিএফ) দেয়া হয়েছে সেটা রিজার্ভের টাকা থেকে খরচ করতে পারে না। এভাবে তারা (সরকার) রিজার্ভ থেকে টাকা বের করে নিয়ে নিজেরাই পাচার করেছে।
কোরবারি পশুর বাজার নিয়ে তিনি বলেন, এবার গরুর দাম চড়া, ক্রেতার সংখ্যা কম। যে দাম বেড়েছে সেটার জন্য মানুষ কিনতে পারছে না। কস্ট অব প্রাইজ, তারা যে গরু নিয়ে এসেছে, গরুগুলো পালন করতে তাদের যে খরচটা হয়েছে সেই খরচ এতো বেশি ছিলো যে তারা দাম কমাতে পারছে না। যার ফলে বিক্রি হচ্ছে না। এবারের বাজার খুব চড়া। এবার ক্রেতা নেই কারণ চড়া বাজারের কারণে।
সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের একাউন্টধারীরা অর্থ তুলে নেয়ার প্রসঙ্গটি তুলে বলেন, টাকা পয়সা যাদের বেশি হাতে আছে তারা টাকা কোথায় রাখছে কেউ জানে না। এরা আবার এখন সুইস ব্যাংক থেকে সব টাকা বের করে এসছে? এসব টাকা, কাতারে যাচ্ছে না মধ্য প্রাচ্যের যাচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা সত্য যে,সুইস ব্যাংকের টাকা বেরিয়ে আসছে। বিএনপি মহাসচিব দেশবাসীকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছাও জানান।####
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের