ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে উত্তরের হতদরিদ্র মানুষ

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী ( শেরপুর ) থেকে

২৭ জুন ২০২৩, ১০:২৬ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

শেরপুরের জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল কাংশা, ধানশাইল, নলকুড়া, হাতিবান্ধা। শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, দার্শিকোনা, চান্দাপাড়া, বকুলতলা, রাঙাজান, খারামোরা, খ্রিষ্টানপাড়া, চুকচুকি, রাজার পাহাড়। নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি রূপনারায়নকুড়া, মরিচপুরান ও কলসপাড় ইউনিয়নসহ কমপক্ষে ৬০ গ্রামের শত শত হতদরিদ্র উপজাতীয় নারী ছাগল পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। গারো পাহাড়ঘেরা তিন উপজেলার ৬০ গ্রামে বসবাসকারী শত শত নারী এখন স্বাবলম্বী ছাগল পালনে। ছাগলের দুধ এবং মাংসের ব্যাপক চাহিদা বিবেচনায় পাহাড়ি নারীরা আয়ের উৎস হিসেবে ছাগল পালনকেই বেছে নিয়েছেন। পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ বলছেন, শেরপুর পাহাড়ি অঞ্চলে ছাগল পালনে খাদ্য খরচ নেই বললেই চলে। পাহাড়ি লতাপাতা ও ঘাস খেয়ে দ্রæত বেড়ে ওঠছে ওই সব ছাগল। উৎপাদন বাড়াতে পরিদর্শন ও ছাগল পালনকারীদের দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শ্রীবরদীর হারিয়াকোনা গ্রামের উপজাতীয় নারী দিনা রাণী চিরান বলেন, আমাদের আয়ের কোনো উৎস্য ছিল না। দেড় বছর আগে ৪টি রাম ছাগলের বাচ্চা কিনি। ৩টি ছাগী, ১টি খাসি। এতেই এখন বেড়ে ২০টি ছাগল হয়েছে। এখন মাসে ১টি করে ছাগল ১৫-২০হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। এ আয়েই তার সংসার চলছে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ছাগল দিনে পাহাড়ি লতাপাতা- ঘাস খেয়েই বেড়ে উঠছে। খাদ্য বাবদ কোন বাড়তি খরচ হচ্ছে না তাঁর। শুধু ঘরে কিছু খাবার দিলেই হয়। পাইকাররা খামার থেকেই ছাগল কিনে নিয়ে যায়। বø্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলসহ উন্নত জাতের ছাগলে খামার বড় করতে চান তিনি। এ ভাবে ছাগলের খামার করে সফলতা পেয়েছেন উপজাতীয় নারী বাসনা রাণী কোঁচনী। তার বাড়ি বাবেলাকোনা গ্রামে। তার ভাই ২বছর আগে ২টি রাম ছাগলের বাচ্চা কিনে দেন। এখন বেড়ে তার খামারে ২৬টি ছাগল। প্রতি মাসে ২টি করে ছাগল বিক্রি করছেন। মাসে আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা। বাসনা রাণী কোঁচ ইনকিলাবকে বলেন, তার খামারে এখন ৫০টি ছাগল ছিল। ২৫টি বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগিয়েছেন। তার পরও মাসে ২টি করে ছাগল বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, ৫বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। সংসারের বোঝা স্বাবাভিক ভাবেই তাঁর কাঁধে পড়ে। ছেলে-মেয়েসহ অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন তিনি। তার পর ছাগলের খামারেই তাঁর সাচ্ছন্দেই সংসার চলছে। ছেলে-মেয়েদেও পড়ালেখার খরচসহ সংসার চলছে ছাগলের খামারেই। তারা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ঝিনাইগাতী শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কমপক্ষে ৬০ গ্রামের শত শত অতিদরিদ্র নারী ছাগল পালনে এখন স্বাবলম্বী। উল্লেখিত গ্রামের আশপাশের পাহাড়ে উঁচু নিচু টিলা ভ‚মির বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর ঘাস ও লতাপাতা খেয়েই ছাগল বেড়ে উঠায় বাড়তি কোন খাদ্য কিনে খাওয়ানোর ও প্রয়োজন হয় না। এতে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। পাহাড়ি অঞ্চলের এসব উপজাতীয় নারীরা এক সময় কর্মসংস্থানের অভাবে পাহাড়ের লাকড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করে অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ক’বছর যাবৎ ছাগল পালনে অনেক উপজাতীয় নারীই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেশীয় ও রামছাগল জাতের ছাগলের খামার করে অল্প দিনেই পেয়েছেন সফলতা। ঝিনাইগাতীর হলদি গ্রামের কৃষক ময়নাল মিয়া বলেন, ছাগলের দুধ সহজে হজম হয় এবং মাংস ও উন্নত মানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। এছাড়া ব্যাপক চাহিদা বিবেচনায় পাহাড়ি গ্রাম্য নারীরা আয়ের উৎস খুঁজে পেয়ে ছাগল পালন করে আসছেন। প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক আতাহার আলী বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ছাগলের গুরুত্ব অপরিসীম। আর জাতীয় অর্থনীতিতে ছাগলের গুরুত্ব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হতে পারছেন। শ্রীবরদীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম স¤্রাট বলেন, আমরা প্রত্যেকটি খামারে নিয়মিত টিকা দেই। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং যমুনাপাড়ি বা রামছাগল বছরে দুই বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার ৩-৪টি করে বাচ্চা দিচ্ছে। এতে অল্প দিনে অনেকেই খামার মালিক হচ্ছেন। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায় ছাগল পালনে খাদ্য খরচ নেই বললেই চলে। সারাদিন পাহাড়ের ঝোপ জঙ্গলের লতাপাতা আর ঘাস খেয়ে দ্রæত বেড়ে ওঠে ছাগল।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মো. ফারুক আল মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ছাগল পালনে স্বাবলম্বি হচ্ছে গারো পাহাড়ের অনেক উপজাতীয় হতদরিদ্র নারী। এটি একটি অনুকরনিয় দৃষ্টান্ত। দেখাদেখি ছাগল পালন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ছাগল পালন করে বহু হতদরিদ্র জনগোষ্ঠি স্বাবলম্বি হয়ে উঠবে এঁটাই প্রত্যাশ করছি।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি   - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার