ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

বর্ষায় অপরূপ হাকালুকি

Daily Inqilab মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী

২৭ জুন ২০২৩, ১০:২৬ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

 থৈ থৈ পানির সাথে হিজলের মিতালি : সমুদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চির সবুজ প্রকৃতি সর্বদা আর্কষণ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সাগর, পাহাড়-নদী, খাল-বিল ও সবুজ অরণ্যঘেরা প্রকৃতি। তেমনি এক অপরূপ সৌন্দর্য্যরে আধার এশিয়ার অন্যতম সর্ববৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। হাকালুকি যার অর্থ ‹লুকানো সম্পদ›। সত্যি এই হাওরে কত সম্পদ যে লুকিয়ে আছে তার কোন কুলকিনারা নেই। বর্ষায় এর সম্পদ মাছ আর শীতে সোনালী ধান আর অতিথি পাখির মিলমেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব এই হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে এই হাওড়টি একটি অথৈ সাগরে পরিণত হয়। সমুদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি। আবার শীতকালে সবুজের মাঝে অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির রব স বাইকে মুগ্ধ করে।
বর্ষাকাল আসার আগ পর্যন্ত হাওরের তলদেশ শুকনো ছিল। হাওরের শুকনো মাঠ পানির জন্য খা খা করছিল। বর্ষাকাল অর্থাৎ আষাঢ়ের শুরুতে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাওরের চেহারা পাল্টে যায়। ফিরে পেতে থাকে বর্ষাকালে হাওরের প্রকৃত রূপ। আস্তে আস্তে পানিতে ভরপুরহয়ে এখন থই থই করছে পূরো হাওর। এশিয়ার অন্যতম এই হাকালুকি হাওরটি মৌলভীবাজার ও সিলেটের ৬টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। হাওরের আয়তন ১৮১.১৫ বর্গ কিলোমিটার। হাওরের ৭০ ভাগ পড়েছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায়। ৩০ ভাগ পড়েছে, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। দেশীয় প্রজাতির মাছের আবাসস্থল হিসেবে এখানে রয়েছে ২৩৮টি বিল।
হাওরের উল্লেখযোগ্য বিলসমূহ হলো- চাতলা বিল, চৌকিয়া বিল, ডুলা বিল, পিংলারকোণা বিল, ফুটি বিল, তুরাল বিল, তেকুনি বিল, পাওল বিল, জুয়ালা বিল, কাইয়ারকোণা বিল, বালিজুড়ি বিল, কুকুরডুবি বিল, কাটুয়া বিল, বিরাই বিল, রাহিয়া বিল, চিনাউরা বিল, দুধাল বিল, মায়াজুরি বিল, বারজালা বিল, পারজালাবিল, মুছনা বিল, লাম্বা বিল, দিয়া বিল।
হাওর পাড়ের মানুষ ও মৎসজীবীদের মতে, এবার অনাবৃষ্টি ও দীর্ঘ মেয়াদি খরায় হাওরের প্রকৃত রূপ ফিরে আসতে অনেক দেরি হয়েছে। দেরিতে হাওর পানি পাওয়ায় জলজ উদ্ভিদ জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জেলে পল্লীর মানুষরা বলছেন হাওরের পানির সঙ্গে আছে তাদের জীবন সংগ্রামের অনেক হিসেব-নিকেশ। হাওরে পানি আসলে মাছ আহরণ করে সংসার চালান। হাওরের তৃণলতা গুলো গোখাদ্য হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। তা দিয়েই চলে হাওরপাড়ের জেলে পরিবারের টানাপোড়নের সংসার। হাওরে পানি হলে পেশাদার জেলেরা নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপারেও তাদের সৃষ্টি হয় আরেকটি উপার্জনের ব্যবস্থা।
বিষেজ্ঞদের মতে হাকালুকি হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ প্রায় বিলুপ্ত। প্রতিবছর এই হাওরে শীতকালে নানান জাতের অতিথি পাখির সমাগম হয়। হাকালুকি হাওর টেকসই উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকোট্যুরিজম শিল্প বিকাশের অন্যতম স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এবারের দীর্ঘ মেয়াদি খরায় হাওর শুকিয়ে যায়। এতেকরে দেশি মাছের সঙ্গে হাওরের অনেক জীববৈচিত্র্য জলজ উদ্ভিদও হারিয়ে যেতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর পাড়ের শাদিপুর গ্রামের জমির আলীর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে জানান, হাওরের পানি শাদিপুর বাজার সহ আসেপাশের গ্রাম গুলোর কাছাকাছি চলে আসছে।
ভুকশিমইল এলাকার বেলাল মিয়া বলেন, ‘এবার হাওর পারের মানুষ মাঠে মরা। গেল বোরো মৌসুমে ধানের ফলন কম হয়েছে। বøাস্ট রোগে কারণে এলাকার অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। দেরিতে হাওরে পানি হওয়ায় এখনো মাছ ধরা শুরু করতে পারিনি। হাওর থেকে আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস ধান ও মাছ। বর্তমানে অভাব অনটন নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে যাচ্ছি।
মৎস্যজীবী বশির মিয়া জানান, গত কয়েক বছর থেকে হাওরে মাছ কমে আসছে। এবার দীর্ঘ খরায় হাওর শুকিয়ে যায়। যা গেল ৪০ বছরেও তিনি হাওর শুকনো দেখেননি। এবছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। হাওরে দেশি জাতের টেংরা, পুঁটি, বাইম, গোলসা, পাবদা, চাপিলা, শিং, মাগুর, কৈ, চান্দুসহ গুঁড়া মাছের সংখ্যা কমে গেছে।
ভুকশিমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিুজুর রহমান মনির জানান, বর্ষার ঢল হাওরপাড়ের মানেুষের অন্যরকম অনুভূতি আসে। পানির নিচে হাওরের জমি ডুবায় উর্বরতা বাড়ছে। অনেক জলজ উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করছে। দীর্ঘকাল থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে বৈশাখ মাসে ছোটবড় জাতের মাছ ডিম ছাড়ে। আর আষাঢ়ে মাছগুলো বড় হয়ে ওঠে। এবার হাওরে চিত্র ভিন্ন। বৈরী আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। পানি হলে হাওরে শাপলা শালুক ভেসে উঠে। প্রায় ২মাস পর আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় হাওরের ভেতর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন থই থই করছে। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সেই চিরচেনা বুকভরা ঢেউ হাওরে শুরু হয়েছে। ফিরতে শুরু করেছে হাওরের প্রকৃত রূপ। পাশাপাশি জেলে পরিবারের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চলতা ফিরতে শুরু করেছে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি   - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট