৭ জেলায় বন্যা
০৩ জুলাই ২০২৩, ১১:২৩ পিএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে-নিচে ওঠানামা করছে। এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চরের বাসিন্দারা। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জে উব্দাখালী ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসী মানুষ। নেত্রকোণার কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। নীচু এলাকার মুষের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে, তারা ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে। জুলাই মাসে মৌসুমি ভারি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ পূর্বাভাসই সত্য হচ্ছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটে। ভারি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে মহানগরের। জলমগ্ন সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলছে যানবাহন ও মানুষজন। ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে সিলেটের। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এ বছর সিলেটে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। আগামী কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়। গত রোববার (২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয় আগামী ৪৮ ঘণ্টা এবং পরবর্তী ৫ দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের ১৩ টি উপজেলার স্থানীয় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সবকটি উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতীয় ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে-নিচে ওঠানামা করছে। এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চরের বাসিন্দারা। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে।
গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ওঠানামা করছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যারাজের সবকটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে রবিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৭ সেন্টিমিটার, বেলা ১২টায় ১০ সেন্টিমিটার এবং বেলা ৩টায় ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসী মানুষ। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগরসহ ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। সুনামগঞ্জের নিচু এলাকা ও সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৫-৬ লাখেরও বেশি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে বসতভিটার গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র নৌকায় নিয়ে ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে কোনো রকম ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় ৪৪৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২২ লাখ টাকা ও দুই হাজার শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নি¤œঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার সুরমা, চেলা, মরাচেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপচে পড়া পানিতে হাওড়, খাল-বিল ও মাঠঘাট ভরে গিয়ে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দোয়ারাবাজারের ৯টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা। উপচেপড়া স্রোতে সুরমা ইউনিয়নের রাবারড্যাম সংলগ্ন খাসিয়ামারা নদীর উভয় তীরের রাস্তা গড়িয়ে হু হু করে পানি ঢুকায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ ঢলের তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে রবিশস্যসহ শত-শত হেক্টর আমনের বীজতলা। শঙ্কিত রয়েছেন উপজেলার শতাধিক মাছচাষি খামার মালিকরা।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় উব্দাখালী, মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী, গুমাই ও গণেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তা, বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে কলমাকান্দা উপজেলার বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ প্রায় ৬০টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলা মোড়-মুক্তিরচর, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধারা, কলমাকান্দা-বিশরপাশা পাকা রাস্তা, গোরস্থান-সাউদপাড়া, গজারমারী-খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও কাঁচা রাস্তাসহ আরও অন্তত ১০টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত