বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা
০৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
এডিস মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। চলতি বর্ষা মৌসুমে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ১৯৩ জন। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৬৫৫ জনই ঢাকায়। রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা বাড়ছেই। এডিস মশার বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দুই সিটি কর্পোরেশন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এবং ঢাকার মানুষ সচেতন না হলে সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধার করতে পারে।
গত ১ জুন দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১১২ রোগী। আর গতকাল একদিনে ভর্তি হয়েছেন ৪৩৬ জন। যা আগের দিন ছিল ৫০৯ জন। প্রতিদিনই ধাপে ধাপে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এবার শুরু হয়েছে ২/৩ মাস আগেই। দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এ বছর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। মৃত্যু হারও বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের কোন কোন স্থান থেকে মৃত্যুর খবর আসছে। আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে দেরিতে ভর্তির কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াছে। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫৬ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন, তাদের ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে। মৃতদের বড় অংশ কর্মক্ষম। আর বেশি মারা যাচ্ছেন নারীরা। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫০ জনের তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট ৫৬ জন মারা গেলেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৫৩১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৫০৯ জন ঢাকা বিভাগের বাইরের। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ১৯৩ জন। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৬৫৫ জনই ঢাকার। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। যদিও সরকারি এ তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। কারণ অধিকাংশ পরিবারেই ডেঙ্গুর লক্ষণ রয়েছে এমন রোগীর তথ্য রয়েছে। আর তাই মৌসুম শুরুর আগেই ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা বেশি। সেদিক থেকে প্রাক-মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে এ বছর ডেঙ্গুর যে প্রাদুর্ভাব তাতে আক্রান্তের হিসেবে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। অবশ্য ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা সুপারিশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে অনেক আগেই সতর্ক ও সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত ৭ মে এক অনুষ্ঠানে এ বছর মশাবাহিত এই রোগ নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মশা নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির কথা স্বীকার করে ইনকিলাবকে বলেছেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাদের আরও বেশি করে কাজ করা উচিত। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর প্রভাব ছিল। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার প্রকোপ বেশি দেখছি। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। নিজেদের বাড়ি-ঘর ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা যেন না কামড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তাই স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি তিনি জনগণকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে সামনে আরেকটা বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। তাদের মতে, প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর হলে মৃত্যুর আশঙ্কা কম। তবে গর্ভবতী মায়েদের দ্বিতীয়-তৃতীয় দফায় ডেঙ্গু জ্বর হলে, জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর লক্ষণ বা উপস্বর্গে কিছুটা নতুনত্ব এসেছে। তবে ভ্যারিয়েন্টে পরিবর্তন আসেনি। একই সঙ্গে ডেঙ্গু বা এডিস মশা পরিষ্কার ও ময়লা দুই ধরনের পানিতে জন্মায়। কেবল দিনে নয়, এরা রাতেও কামড়াতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া এবং ভয়াবহতা রোধে সবাইকে সচেতনতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সম্মিলিতভাবে দেশব্যাপী কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া ডেঙ্গু শুরুর ২৪ বছর পরেও মিলছে না প্রতিরোধের ভ্যাকসিন। তাই ভ্যাকসিনের আশা না করে, ডেঙ্গু মশা নিধন করতে পারলে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে কমে গেলে, শরীরে রক্ত দিতে হবে এমনটা নয়। বরং রক্তপাত হলেই রক্ত গ্রহণ করা যাবে। তবে সবকিছুই করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসক এবং হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ তাঁর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন অহমেদ বলেছেন, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র মতে, এ বছর ডেঙ্গু যে ভয়াবহতা ছড়াবে তা আগেই আভাস দিয়েছে। আগে এই রোগটিকে শহুরে রোগ বলা হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। গেল বছর মোট ৬২ হজার ৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন। এর বাইরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিতে যা ছিল ১৫ হাজার ৩৫২ জন। এ বছরও ঢাকা শহর ও ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮১ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাইরের ছিলেন ২৩ হাজার ১৬২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, ঢাকা থেকে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার বা ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার যে ব্যবস্থা আছে, সারা দেশে তা নেই। সুতরাং আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার এ বছরের প্রথম ৫০ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে। ১৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে। বাকি ৬ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ১১ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। তথ্য মতে, অধিকাংশ মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। অবশ্য সব বয়সী মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে। তবে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু বেশি। ৬২ শতাংশ মৃত্যু এই বয়সীদের মধ্যে। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা দেশের সবচেয়ে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। তারা কাজের জন্য ঘরের বাইরে থাকেন বেশি। এটাই বেশি মৃত্যুর কারণ কি না, তা নিয়ে গভীর পর্যালোচনা দরকার বলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ডেঙ্গুতে মারা গেছে। ২৯ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে, যাদের বয়স ১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। বাকি ৯ শতাংশের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, অনেকে জানেন না কখন রোগ পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা না করে তারা বসে থাকেন। অনেকে জ্বর হলে পাত্তা দেন না বা আমলে নেন না। অনেকে হাতুড়ে চিকিৎসক বা পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। এসব কারণে রোগ ভালো হয় না, তারা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসেন। এটাই ৭২ ঘণ্টায় বেশি মৃত্যুর কারণ। ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবার অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য বছরের এই সময়ের তুলনায় কয়েকগুন ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৯ সালের দেশে যে ভয়াবহ ডেঙ্গুর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল (রোগী ১ লাখ ছাড়িয়ে ছিল)। আশঙ্কা করা হচ্ছে সে রেকর্ড ভাঙবে এ বছর।
অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর সম্প্রতি মশার উপস্থিতি নিয়ে যে জরিপ করেছে, তাতেও শহরে এডিস মশার আশঙ্কাজনক উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঈদের আগে-পরে ভারী বর্ষণে ঢাকার অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। যা ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়াবে। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার উত্তর সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা এবং মশক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে এসব শাখার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে প্রতিদিনই ভয়াবহতা বাড়ায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধন এবং জলাবদ্ধতা ঠেকাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে।
ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোনোভাবে যে শহরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জনগণের সচেতনতার ওপরও জোর দিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। বাসার ভেতরে, ছাদে ও বারান্দায় কোথাও কোনো পাত্রে যেন পানি না জমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিয়ে মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, টানা ভারী বৃষ্টির কারণে শহরে অনেক জায়গায় পানি জমে। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ পলিথিনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ড্রেনে ফেলবেন না। এগুলোর কারণে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। সবাই সচেতন হলে কাজটা আমাদের কর্মীদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
ইতোমধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা সেবা ও সচেতনতায় সব প্রস্তুতি নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে, উড়ন্ত মশা মারতে হবে এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে পারে। একই সঙ্গে জনগনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সফলভাবে এটি সম্পন্ন করতে হবে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) গত বছরের শেষ দিকের এক জরিপের তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ডেঙ্গু ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন। তবে গত বছর থেকে ডেন-৪ ভ্যারিয়েন্টে কিছু রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০০৩ সালে ডেন-৪ দেখা দিয়েছিল। এর পরে ডেন-৪ ছিল না। গত বছর ১১ শতাংশ রোগী ডেন-৪ এ আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়বার কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসলে তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বেড়ে যায়। এ বছর ইতোমধ্যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু বাড়ার এটি একটি কারণে হতে পারে। আবার অনেক মানুষ আছেন যারা সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে বসে থাকেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা না হলে হাসপাতালে ভর্তি হয় না। এতেও মৃত্যুহার একটু বাড়ছে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ ও পরামর্শ
ডেঙ্গুতে আক্রান্তের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জ্বরের কথা বলেছেন। যা ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা ও চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছে। একই সঙ্গে জ্বর হলে বিশ্রামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন: ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। তবে প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা থাকে; তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরের ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুর তিনটি ভাগ আছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীর সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুই দিন জ্বরের পরে শরীর ঠা-া হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু সবচেয়ে খারাপ। ক্ষেত্রবিশেষে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে ও সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে ওঠে। তবে অন্ধকারে কখনো কামড়ায় না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী