হিন্দুবাদীদের অনুকরণে বাড়ছে কট্টর ইসলামিক ট্রল

ভারতে মুসলিম নারীদের উদ্ধারের নামে নিপিড়ন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০৪ জুলাই ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতে ডানপন্থীদের ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘লাভ জিহাদ’ নামক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে, যা অভিযোগ করে যে, দেশটির মুসলিম পুরুষরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দু মহিলাদের প্রলুব্ধ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। সম্প্রতি, ভারতে মুসলিম নারীদের উদ্ধারের নামে কট্টর হিন্দুবাদীরা একটি ইসলাম বিদ্বেষী নারী-জাতীয়তাবাদী আখ্যানও সৃষ্টি করেছে, যেখানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির সাথে যুক্ত প্রভাবশালী মহিলারা মুসলিম মহিলাদেরকে কথিত ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিন্দু পুরুষদের বিয়ে করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামকে মহিলাদের জন্য নিপীড়নমূলক ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে তারা বলছে যে, নিপীড়িত মুসলিম নারীদের মুক্তির জন্য হিন্দু পুরুষদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ক্ষমতাসীন সরকার মুসলিম শরিয়ার তিন তালাক বা তাৎক্ষণিক তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করতে দেশের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য কৃতিত্ব দাবি করেছে। এর ফরে ভুগতে হচ্ছে দেশটির মুসলিম মহিলাদের। বিগত মাসগুলিতে ভারত জুড়ে বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মুসলিম মহিলাদের হিন্দু বলে সন্দেহ করা পুরুষের সাথে বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে দেখা গেলে, মুসলিম পুরুষদের স্ব-নিযুক্ত নীতি পুলিশ গোষ্ঠীগুলি কট্টর হিন্দুবাদীদের মতোই ব্যাপকভাবে হেনস্থা করছে।
গত কয়েক বছরে, তরুণ হিন্দুত্ববাদীরা যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি তৈরি করেছে, সেগুলির একটির নাম সুল্লি ডিল্স, অন্যটির নাম বুল্লি বাই অ্যাপ, যা ভারতে বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের অপদস্থ করতে বিভিন্ন ছবি ও বিবরণ পোস্ট করেছে। দ্য কুইন্ট প্রকাশনার সাংবাদিক ফাতিমা, যিনি ভারতে ক্রমবর্ধমান ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন, তিনি ‘ভাগ্য লাভ ট্র্যাপ’ প্রচারাভিযান নিয়ে একটি গল্প লেখার পর অনলাইন ট্রলগুলির লক্ষ্যবস্তু হন। তিনি টুইট করেছেন, ‹কেন নৈতিক খবরদারি একচেটিয়াভাবে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত? মুসলিম পুরুষরা যখন এই নারীদের রক্ষায় টুইট করেন, তখন তাদেরও অপবাদ দেওয়া হয় এবং ট্রলদের দ্বারা আক্রমণ করা হচ্ছে।’
প্রায় এক দশক ধরে একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনের অধীনে গণহত্যার পুনরাবৃত্তি, ক্রমবর্ধমান ঘৃণামূলক অপরাধ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাতে মুসলিমদের নিত্য নিপিড়ন সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি অস্তিত্ব সংকট তৈরি করেছে, যার ফলে একটি উদ্বেগজনক সংস্কৃতির প্রজনন হচ্ছে, যেখানে ফাতিমা একজন অ-হিজাবি মহিলা হওয়ায় তার মুসলিম নাম এবং তার ধর্ম বিশ্বাসের বৈধতাকে কেন্দ্র করে ট্রোলিং করা হয়েছে। ইন্টারনেটে অসংখ্য ফলোয়ার সহ থাকা নাবিয়াকে অমুসলিম পুরুষ বন্ধুদের সাথে বসে থাকতে দেখানোর ছবির কারণে তাকে লক্ষ্যবস্ত করা হয়েছে। কট্টরপস্থী মুসলিম ট্রলরা প্রচার করছে যে, তারা হিজাবের অসম্মান করেছেন। মুসলিম ট্রলরা মুসলিম নারীদের আক্রমণ করছে, ঠিক একই হিন্দু বিশ্বাসকে অনুকরণ করে যে, নারীর হিজাব তার বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এটি পুরুষদের কাছে তাদের অধীনতার প্রতীক।
ক্রমবর্ধমান ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থেকেও ফাতিমা এবং নাবিয়ার মতো নারীদের কেউ কেউ সম্প্রদায়ের বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করছেন। এখন মুসলিম নারীরা এই নতুন, ক্রমবর্ধমান নিপিড়নের কাছে নীরবে নতি স্বীকারের জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন। এর ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং এমনকি শারীরিক সহিংসতা বাড়তে পারে, যার সবই তাদের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার উপর গভীর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এই চাপ শুধুমাত্র সহিংসতার বিরুদ্ধে মুসলিম নারীদের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতাকে সীমিত করছে না, বরং তাকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। তাকে একটি পূর্ব-লিখিত বাধ্যকতা থেকে বেছে নিতে বাধ্য করছে, যেখানে তাকে হয় হিন্দু পুরুষের দ্বারা ‘স্বাধীন’ বা মুসলিম ব্যক্তি দ্বারা ‘সুরক্ষিত’ করার কথা বলা হচ্ছে। সূত্র:আল জাজিরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

বিহারীরা কেমন আছে

বিহারীরা কেমন আছে

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার