ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে স্কুল বসতবাড়ি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি

বাড়ছে পানি বাড়ছে ভাঙন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৪ জুলাই ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, ফসলি জমি। কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কেল্লা। অন্যদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে অসহায় নদীপাড়ের মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে। এতে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষরা। অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য জায়গায়। আবার কেউ বা সব হারিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে সরকারি বাঁধে। সরেজমিনে দেখা যায়, নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প এলাকায় রয়েছে দুটি মাদরাসা, স্কুল ও দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি মুজিব কেল্লা। অথচ খামখেয়ালিপনার কারণে উপজেলা যাওয়ার একমাত্র বাঁধটি ভাঙতে বসেছে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের বসতবাড়িসহ বিলীন হয়ে যাবে সরকারি বেসরকারি সব স্থাপনা।
চর মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু বক্কর বলেন, ধরলা নদী যে হারে ভাঙছে দু-একদিনের মধ্যেই গোরকম-প জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। চর গোরকম-প এলাকার বাসিন্দা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, গত একমাসে এ গ্রামের প্রায় ১৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলাচলের একমাত্র বাঁধটিও বিলীনের পথে।এ মুহূর্তে সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটিও রক্ষা করা যাবে না। এ বাঁধটি ভেঙে গেলে এ অঞ্চলের ৮-১০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ভাঙনের শিকার মো. আহাদ আলী বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল বাপদাদার ভিটেমাটিতে আজীবন থাকবো। কিন্তু ধরলার ভাঙন সেই আশা শেষ করে দিলো। গতকাল ভিটেমাটি নদীতে চলে গেছে। উপায় না পেয়ে বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছি। জানি না কপালে কি আছে।
নাওডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাসেন আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের চর গোরকম-প বাঁধটি অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। গ্রামটির প্রায় দুইশো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে আছে হাজার পরিবার। ভাঙনের মুখে পড়েছে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মুজিবকেল্লা, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দু-একদিনের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ওই গ্রামগুলোর মানুষেরা বিশাল দুর্ভোগে পড়বে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চর গোরকম-প এলাকা ধরলা নদীর বাম তীরে ভাঙনকবলিত হচ্ছে। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এছাড়া জেলায় ২৬টি পয়েন্টে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অতি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। সাড়ে চার কিলোমিটার নদীভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত মালামাল রয়েছে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নদ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার ফতেপুর বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী গবিন্দ পাল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সর্বনাশা ভাঙনে চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দোকান ঘর, বাড়ি ও রাস্তা ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। শুধু গবিন্দ পালের দোকান নয়, ঝিনাই নদীর ভাঙনে আরও ২০টি দোকান ঘরসহ ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে ফতেপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফতেপুর। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন দোকানপাট ও গৃহহারা পরিবারগুলো।
এলাকাবাসী জানায়, গত ২০ জুন ওই এলাকায় ঝিনাই নদীর ভাঙন শুরু হয়। এর তিনদিন পর ফতেপুরের শতাব্দী প্রাচীন বাজারের পূর্ব অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙনে বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ১৮টি বাড়ির অর্ধশত ঘর ও ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কের কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে যায়। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান।
ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুরণী-ফতেপুর পাকা সড়কের এক টাকার (হিলড়া) বাজার এলাকার বেশ কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে এলাকার উত্তরাংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি।
বানকাটা গ্রামের ওমর শরীফ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বানকাটা ও ফতেপুর পালপাড়া গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা রাস্তাও ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
পালপাড়া সংলগ্ন সৌদি আরব প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী জীবনের অর্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে বাড়িটি করেছি। মুহূর্তের মধ্যে ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এই বয়সে আর অর্থ উপার্জন করে বাড়ি করা সম্ভব নয়। নদীভাঙনে গৃহহারা পালপাড়ার জিতেন পাল বলেন, ছোট একটি ছাপড়া ছাড়া বাড়ির পুরো অংশই ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কোনো সহায়তা দেননি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ