নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
০৫ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, ফসলি জমি। কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কেল্লা। অন্যদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ। যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে টাঙ্গাইলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের বসতভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের ফলে গৃহহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়, বাঁধে ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে ভাঙনকবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল, মসজিদসহ বহু স্থাপনা।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধশাতাধিক গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নদী তীরের মানুষ। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বার বার বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থায়ী গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর। এছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ, তপুসহ অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার ও বেকু) দিয়ে বালু তোলা হয়। এ কারণে অনেকের বসতভিটা নদীর পেটে চলে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য তারা অনেকের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
নদী ভাঙনের শিকার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এক দিনেই আমার বসতভিটা যমুনায় চলে গেছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে বহু আগেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার থাকার জায়গাটুকুও আর নেই। আমরা ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চাই না, ভাঙনরোধে বাঁধ চাই।
একাই গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা নদী ভাঙন এলাকার মানুষ। চোখের সামনে বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। যারাই আসে- তারা শুধু দেখে চলে যায়। আর বলে আগামী বছরই বাঁধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু ফের বন্যা আসে, শুরু হয় ভাঙন। প্রভাবশালীরা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় জিওব্যাগ ফেলে। আমাদের বসত-ভিটা রক্ষায় কেউ কথা রাখে না। অন্যের জায়গায় থাকতে হচ্ছে।
এদিকে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়াসহ ভাঙনের শিকার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির। তিনি ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াসহ বাঁধ নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এসময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বার বার বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থায়ী গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর। এছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে। এতে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষরা। অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য জায়গায়। আবার কেউ বা সব হারিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে সরকারি বাঁধে। সরেজমিনে দেখা যায়, নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প এলাকায় রয়েছে দুটি মাদরাসা, স্কুল ও দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি মুজিব কেল্লা। অথচ খামখেয়ালিপনার কারণে উপজেলা যাওয়ার একমাত্র বাঁধটি ভাঙতে বসেছে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের বসতবাড়িসহ বিলীন হয়ে যাবে সরকারি বেসরকারি সব স্থাপনা।
নাওডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাসেন আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের চর গোরকম-প বাঁধটি অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। গ্রামটির প্রায় দুইশো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে আছে হাজার পরিবার। ভাঙনের মুখে পড়েছে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মুজিবকেল্লা, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দু-একদিনের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ওই গ্রামগুলোর মানুষেরা বিশাল দুর্ভোগে পড়বে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চর গোরকম-প এলাকা ধরলা নদীর বাম তীরে ভাঙনকবলিত হচ্ছে। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এছাড়া জেলায় ২৬টি পয়েন্টে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অতি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। সাড়ে চার কিলোমিটার নদীভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত মালামাল রয়েছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নদ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার ফতেপুর বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী গবিন্দ পাল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সর্বনাশা ভাঙনে চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দোকান ঘর, বাড়ি ও রাস্তা ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। শুধু গবিন্দ পালের দোকান নয়, ঝিনাই নদীর ভাঙনে আরও ২০টি দোকান ঘরসহ ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে ফতেপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফতেপুর। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন দোকানপাট ও গৃহহারা পরিবারগুলো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে