কাঁচামরিচের দাম একদিনেই দ্বিগুণ
০৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩১ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে পৌঁছানোর পরে গত সোমবার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছিল। প্রতিকেজি ৬০০ টাকা থেকে নেমে এসেছিল ৩০০ টাকায়। গত মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৪০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
কিন্তু গতকাল বুধবার বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। আর এলাকাভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা তা বিক্রি করছে ৫০০ টাকা কেজিতে। তাছাড়া, চাহিদা থাকলেও আড়ত থেকে কাঁচা মরিচ সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগও করেছেন ব্যবসায়ীরা। মিরপুরসহ রাজধানীর একাধিক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কাঁচা মরিচের দামের ঊর্ধ্বগতির এই চিত্র।
মিরপুর ২ নম্বরের একটি এলাকার ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা মো. আল আমীন বলেন, কাঁচা মরিচের দাম আবার বেড়ে গেছে। বুধবার ২৫০ গ্রাম মরিচ বিক্রি করছি ১২৫ টাকায়। প্রতি কেজি মরিচ ৫০০ টাকায় বিক্রি করছি। অথচ মঙ্গলবার ২৫০ গ্রাম বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আরেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা কিনি বেশি দামে, তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। আমরা তো আর বেশি করে কিনে রাখি না যে কম দামে পাবো। আমরা প্রতিদিন ২-৩ কেজি করে কিনি, সেটাই বিক্রি করি।
মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজারের মরিচ বিক্রেতা সিরাজুল বলেন, বুধবার ৪০০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করছি। মঙ্গলবার বিক্রি করেছি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। দাম বাড়ার বিষয়ে বলেন, আড়তে গিয়ে দেখি মরিচ বিক্রি করছে না। বস্তা বেঁধে ফেলে রাখছে। আগামীকাল আরও বেশি দামে বিক্রি করবে বলে দিচ্ছে না। আমি কষ্ট করে ১০ কেজি এনে বিক্রি করছি।
আরেক মরিচ বিক্রেতা আসাদুল জানান, তিনি দেশি মরিচ ৩৫০ টাকা ও ভারতীয় ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, আড়ত থেকে মরিচ ঠিকমতো দিচ্ছে না। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আড়তে মরিচ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, কালকে বেশি দামে বিক্রি করবে বলে। অন্য সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত বিক্রি করে। আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা মরিচ কিনি দুই তিন পাল্লা করে (এক পাল্লায় ৫ কেজি)। আর আড়তদার তো বস্তায় বস্তায় কিনে রেখে দেয়। দাম বাড়লে পরে ছাড়ে।
কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতারা গতকাল কাঁচা মরিচ বিক্রি করছে ৪৮০ টাকা কেজিতে। এক্ষেত্রে দেখা যায় কাঁচা মরিচ বিক্রেতা ও সবজি বিক্রেতারা একই মরিচ বিক্রি করছেন ৮০ টাকার পার্থক্যে। এক সবজি বিক্রেতা বলেন, আমি এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) মরিচ বিক্রি করছি ১২০ টাকায়। তাহলে প্রতি কেজি পড়ছে ৪৮০ টাকা। একই মরিচ বাজারে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ওরা শুধু মরিচই বিক্রি করে। তাই ওরা কমে বিক্রি করতে পারে।
বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতাকেই মরিচের দাম জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমনই এক ক্রেতা অবদুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা তা-ই করছে। আজকে একদাম তো কালকে আরেক দাম। তাও আবার দাম দশ-বিশ টাকা বাড়ে না, দ্বিগুণ হয়ে যায়।
বাজার করতে আসা শাহীন বলেন, এরা (ব্যবসায়ী) শুধু একজন আরেক জনের ওপর দোষ চাপায়। আসলে দামটা বাড়ায় কে? আবার আলুর দামও বাড়তেছে। কে যে কখন কোন জিনিসের দাম বাড়ায় কিছুই জানি না। মিরপুর এক নম্বরে কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আলু বিক্রেতা রাহাত বলেন, আলুর নাকি স্টক কম, তাই দাম বাড়তি। আর তো কিছু আমার জানা নাই। আরেক বিক্রেতাকে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে অন্য সবার মতোই জানান, তার কেনা দাম বেশি বলেই বিক্রির দামও বেশি।
এদিকে কাঁচা মরিচের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বুধবার সারা দেশের ৪০টি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযানে কাঁচা মরিচ ছাড়াও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামের বিষয়েও তদারকি করা হয়। এসময় পণ্যের মূল্য কারচুপি, মূল্য তালিকা ও ভাউচার না থাকায় ৯৫ ব্যবসায়ীকে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।
গতকাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে একযোগে কাঁচা মরিচ ও চিনির মূল্য এবং মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকির লক্ষ্যে অভিযান পরিচালিত হয়। এরমধ্যে ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করে তিনটি টিম। এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ মোট ৩৭টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
ঢাকা মহানগরীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার, তেজকুনিপাড়া কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার, দয়াগঞ্জ কাঁচাবাজার, ধলপুর কাঁচাবাজার, ডেমরা কাঁচাবাজার, শনির আখড়া কাঁচাবাজার ও মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার এলাকায় মরিচের বিক্রয়মূল্য ও ক্রয়মূল্য যাচাই করা হয়। কাঁচা মরিচের মূল্যের পাশাপাশি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সারাদেশে একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়, যা তিনদিন ধরে অব্যাহতভাবে চলছে।
উল্লেখ্য, আমদানি শুরুর খবরে গত সোমবার কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি নেমেছিল ২০০ টাকার ঘরে। এরপর মঙ্গলবার দাম কিছুটা বেড়ে ৩০০-৩৫০ টাকায় ওঠে। একদিনের ব্যবধানে গতকাল আবার ৫০০ টাকা ছাড়িয়েছে কাঁচা মরিচের কেজি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে