ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

বরিশালের সন্দেশ যাচ্ছে বিদেশ

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

০৬ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুধ চিনি ও কিসমিসে তৈরি অত্যন্ত সুস্বাদু
শত প্রতিকুলতার মাঝেও ঐতিহ্যের ধারা অক্ষুন্ন রেখে শত বছর ধরে টিকে আছে বরিশালের গুঠিয়ার সন্দেশ। দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এখনো নানা স্বাদ ও বৈচিত্রের খাটি মিষ্টির সমারোহ ভোজন রসিকদের রসনা তৃপ্ত করলেও উজিরপুর গুঠিয়ার সন্দেশের স্বাদ এখনো সবার জিহŸায় লেগে থাকে। শতাধিক বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে গুঠিয়ার সন্দেশের নাম ছড়িয়ে আছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে। ২০০৫ সালে গুঠিয়াতে দৃষ্টি নন্দন ‘বায়তুল আমান জামে মসজিদ’ গড়ে তোলার পরে সেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লীয়ানসহ পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধির সাথে গুঠিয়ার সন্দেশের কদরও বাড়তে থাকে। দিন দিন এর আরো খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে ছাড়িয়ে বিদেশেও। তবে সা¤প্রতিককালে চিনি ও দুধ সহ কারিকরদের মজুরী বৃদ্ধির ফলে সন্দেশের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে গুঠিয়ার সন্দেশও।
সড়কপথে বানারীপাড়া যাবার পথে দারোগার হাট ও গুঠিয়া বাজার। বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতে দীঘদিন ধরে এসব সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। বৃটিশ যুগে মিষ্টির কারিকর সতীশ ঘোষ প্রথম এ সন্দেশ তৈরির সূচনা করেন। বংশ পরম্পরায় সে ঐতিহ্য এখনো বহমান। দারোগার হাট ও গুঠিয়া বাজারে আরো অন্তত ১০টি মিষ্টির দোকানে বর্তমানে এ সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি হয়। বেশ কয়েকজন বয়োজেষ্ঠ্য ইনকিলাবকে জানান, বাবুগঞ্জের মাধবপাশায় জমিদার বংশের পত্তন ও প্রাচীন জনপদ চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী হয়ে ওঠার সাথে এই সন্দেশের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। তবে সে ইতিহাস সঠিকভাবে কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
অন্য সন্দেশ সাধারণত নরম হলেও গুঠিয়ার সন্দেশ কড়াপাকের হওয়ায় কিছুটা শক্ত ও শুষ্ক। সুস্বাদু এই সন্দেশ এক পলার। দুধ, চিনি ও কিসমিস দিয়ে তৈরী এ সন্দেশ এতটাই মুখরোচক যে এ সন্দেশ একবার খেলে তা সবার মনে থাকে অনেক দিন। এমনকি এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ, বরিশালে ভাসমান পেয়ারার বাজার, দূরগাসাগর দিঘি, বানরীপাড়ার ভাসমান ধান-চালের হাট ও গুঠিয়া মসজিদ দেখতে এসে ভোজন তালিকায় গুঠিয়ার সন্দেশকেই রাখছেন।
খাটি দুধের ছানা গুঠিয়ার সন্দেশের মূল উপকরণ। এসব ছানা তৈরির পর বড় লোহার কড়াইতে পাকে বা জ্বাল দেয়া হয়। কাঁচা ছানার সাথে সামান্য কিছু ময়দাও মিশিয়ে পাকের পর তা মিহি করা হয়। পাক কম-বেশির ওপরেই এ সন্দেশের স্বাদ ও গুণগত মান নির্ভর করে। পাকের পর তা চুলা থেকে নামিয়ে ছোট ছোট গোলা করে হাত দিয়ে জোড়ে পরিচ্ছন্ন কাপড়ের ওপর ছুঁড়ে ফেলে চ্যাপ্টা করা হয়। এরপর তার ওপরে মাঝখানে একটি পরিষ্কার কিচমিচ দানা বসিয়ে দেয়া হয়। এতে সন্দেশের সৌন্দর্য ও স্বাদ আরো বাড়ে।
গুঠিয়ার সন্দেশের রং সাদা। স্বাদে অনন্য এ সন্দেশে গরুর দুধের টাটকা গন্ধ ভোজন রসিকদের রসনাকে তৃপ্ত করে।এখানকার বেশ কয়েকজন কারিকর প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যের ও বিখ্যাত এ সন্দেশের সুনাম ধরে রাখছেন। ৬০ বছরের নিকুঞ্জ মিস্ত্রি তাঁদেরই একজন। বিখ্যাত এই সন্দেশের প্রস্তুত প্রণালি শিখিয়েছেন ছেলেকেও । নিকুঞ্জ মিস্ত্রি সাংবাদিকদের জানান, সাধারণত ৬-৭ কেজি দুধে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে পরিমান মত চিনি মিশিয়ে অল্প জ্বাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই সন্দেশের কাঁচামাল তৈরি। এরপরে কাঠের ওপরে পরিস্কার কাপড় বিছিয়ে সন্দেশের আকার দেয়া হয়। তবে সন্দেশ তৈরির প্রধান বিষয় হচ্ছে খাটি দুধ। এরসাথে পরিমাণ মতো আঁচ ও পাক অন্যতম অনুষঙ্গ।
গুঠিয়া বাজারের ৮/৯ জন এখনো এই সন্দেশের ঐতিহ্য আঁকড়ে আছেন। কারিকরদের মজুরী বৃদ্ধির সাথে দুধ, চিনি আর কিসমিস-এর অগ্নিমূল্যের পরেও গুঠিয়া সন্দেশের কেজি সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। কেজিতে ২০ থেকে ২৫টির মতো সন্দেশ থাকে। নিকুঞ্জ মিস্ত্রির মতে, শীতকালে এবং বৈশাখে সন্দেশের চাহিদা বাড়ে। তবে সব উপকরণসহ শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এখন সন্দেশ তৈরি করে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করেন না বলেও জানান নিকুঞ্জ মিস্ত্রী।
গুঠিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওরঙ্গজেব হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রায় শত বছর ধরে গুঠিয়ার সন্দেশ দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সন্দেশের দামও বেড়েছে, সে কারণে অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে এ সন্দেশ। ফলে চাহিদা কমায় সন্দেশ তৈরির কাজে নিয়োজিতরা এখন প্রতিনিয়ত পেশায় টিকে থাকার লড়াইয়ে রয়েছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান