নদী ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ
০৬ জুলাই ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিলীন হচ্ছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি
স্থানীয়দের অভিযোগ শুকনো মৌসুমে নদীতে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু তোলায় বসতভিটা নদীর পেটে যাচ্ছে
ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চায় না
ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ চায়
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে নীলফামারি কুড়িগ্রাম ও রংপুর এসব জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, ফসলি জমি। কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কেল্লা। অন্যদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ। যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে টাঙ্গাইলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের বসতভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের ফলে গৃহহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়, বাঁধে ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে ভাঙনকবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল, মসজিদসহ বহু স্থাপনা। অব্যাহত ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের চিতুলীয়া পাড়াসহ ২০ গ্রামের মানুষ মানববন্ধনসহ সড়ক অবরোধ করে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ভূঞাপুরের চিতুলীয়া পাড়াসহ ২০টি গ্রামে দেখা দিয়েছে যমুনার তীব্র ভাঙন। ভাঙনে নদী গিলে খাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অব্যাহত ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধনসহ সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২ঘন্টা ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের চিতুলিয়া পাড়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। অবরোধের কারনে উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হসেন। তিনি তাৎক্ষণিক ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার ঘোষণা দেন। পরে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
চিতুলীয়া পাড়ার গ্রামের দারা মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংসদ এসে বলে গেল অতিদ্রæত বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। অথচ গত এক সপ্তাহে তিন শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। ভাঙন বন্ধ করতে কোনো কাজ শুরু তো দূরের কথা, কেউ খোঁজখবর নিতেও আসেনি।
উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধশাতাধিক গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নদী তীরের মানুষ। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বার বার বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থায়ী গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর। এছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ, তপুসহ অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার ও বেকু) দিয়ে বালু তোলা হয়। এ কারণে অনেকের বসতভিটা নদীর পেটে চলে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য তারা অনেকের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
নদী ভাঙনের শিকার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এক দিনেই আমার বসতভিটা যমুনায় চলে গেছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে বহু আগেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার থাকার জায়গাটুকুও আর নেই। আমরা ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চাই না, ভাঙনরোধে বাঁধ চাই।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে। এতে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকমÐপ গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষরা। অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য জায়গায়। আবার কেউ বা সব হারিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে সরকারি বাঁধে। সরেজমিনে দেখা যায়, নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকমÐপ এলাকায় রয়েছে দুটি মাদরাসা, স্কুল ও দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি মুজিব কেল্লা। অথচ খামখেয়ালিপনার কারণে উপজেলা যাওয়ার একমাত্র বাঁধটি ভাঙতে বসেছে। এ অবস্থায় দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের বসতবাড়িসহ বিলীন হয়ে যাবে সরকারি বেসরকারি সব স্থাপনা।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নদ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার ফতেপুর বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী গবিন্দ পাল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সর্বনাশা ভাঙনে চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দোকান ঘর, বাড়ি ও রাস্তা ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। শুধু গবিন্দ পালের দোকান নয়, ঝিনাই নদীর ভাঙনে আরও ২০টি দোকান ঘরসহ ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে ফতেপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফতেপুর। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন দোকানপাট ও গৃহহারা পরিবারগুলো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু