প্রধানমন্ত্রী অনড়
০৬ জুলাই ২০২৩, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরামর্শ উপেক্ষা করে নিজেদের করা ছকে নির্বাচনের পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকে নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে করতেই তিনি বদ্ধপরিকর। নির্বাচন ইস্যুতে যতই বিদেশি ঝড়, সিডর, আইলা, আম্ফান সরকারের ওপর আছড়ে পড়–ক; সংবিধানের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। ক্ষমতার ‘লাটাই’ হাতছাড়া করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতির নির্বাচনে যাবে না আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস অতীতে যেভাবে সবকিছু মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছেন এবারও সেটাই করবেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের কয়েকদিন আগে বলেছেন, ‘আগেই যদি আসন ভাগ-বাটোয়ারা করা হয় তাহলে কিসের নির্বাচন? বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় জামায়াতকে দেয়া হবে ৫০ আসন, আমাদের বলা হচ্ছে সংগঠন আরো শক্তিশালী করুন বেশি আসন পাবেন। আমরা আর সিট ভাগাভাগির নির্বাচন করব না’। জাপা চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। বিএনপি নির্বাচনে না এলে জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো এমনকি হেফাজতকে ‘আসন’ দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামানো হবে। বিএনপির মেরুদÐহীন কিছু নেতাকেও ‘উকিল আবদুস সাত্তারের’ মতো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন’ বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। ঢাকা সফররত যুক্তরাজ্যের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে ৫ জুলাই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘সংবিধানের অধীনে বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সরকার সংলাপে রাজি আছে। তবে তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা নয়’। এটাই মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘চ‚ড়ান্ত বার্তা’। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথাবার্তার গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় প্রধানমন্ত্রী সালমান এফ রহমানকে দিয়ে নিজের অবস্থান সবাইকে জানান দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাদের আন্দোলন ঠেকিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ‘সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো সংলাপে যাবে না বিএনপি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও ক্যারিসমাটিক নেতৃত্বের কারণে আওয়ামী লীগ কার্যত ৪ বার ক্ষমতায় এসেছে। কোনো পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নিতে হয় কার সঙ্গে কেমন কৌশল করতে হয় সেই রাজনৈতিক ক‚ট-কৌশলগুলো তিনি জাদুকরের মতো রপ্ত করেছেন। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন আবার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীতে আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। ১৯৯৬ সালে সেই এরশাদের জাতীয় পার্টি ও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। ‘ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন আমাদের আন্দোলনের ফসল’ বক্তব্য দিয়ে পরবর্তীতে ওই সরকারের ‘নিকুচি’ করেছেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে কওমি মাদরাসা কেন্দ্রীক সংগঠন হেফাজতকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। সেই হেফাজতের নেতারা এখন তার গুণগান করেন; সরকারের ছিঁটানো উচ্ছিষ্ট ভোগ করে বাহবা দেন। শুধু তাই নয় হেফাজতের নেতারা তাকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর যে জামায়াতের ওপর ‘তাÐবের সুনামি’ চালিয়েছেন সেই জামায়াতকে এখন সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এমনকি জামায়াত ও পুলিশের মধ্যে ‘ফুল বিনিময়’ দৃশ্য টিভি পর্দায় ভেসে উঠছে। ২০১৪ সালে ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত এমপিকে নিয়েই জাদুকরি নেতৃত্বে দশম জাতীয় সংসদ টিকিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের অনেক এমপি বছরের পর বছর গণপিটুনির ভয়ে নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেননি। অথচ শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে নেতৃত্বের দৃঢ়তায় সফল্য দেখিয়েছেন। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ করে বিএনপিকে নির্বাচনে এনে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন। সংকট এলেই তা সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে উতরে উঠেছেন শেখ হাসিনা। ফলে আওয়ামী লীগের নেতারা এখন নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভরশীল। তারা মনে করেন নেত্রীই সব সমস্যার সমাধান। শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব আর সফলতার কারণে এরমধ্যে দলে সুবিধাভোগী এবং মেরুদÐহীন কিছু নেতা দাঁড়িয়ে গেছেন। তারা রাজনৈতিক সংকট ও যে কোনো পরিস্থিতিতে নেত্রীর ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকেন। ফলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের ভয়াবহতা বুঝতে পেরেও সুবিধাবাদী নেতারা স্রোতে গা ভাসিয়েছেন; তাদের বক্তব্য ‘নেত্রীর হাতে জাদুর কাঠি রয়েছে; তিনি সবকিছু সমাল দেবেন।’
চলতি অধিবেশনেই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দু’দিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একই কথা বলেছেন। ঈদুল আজহার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ সফরে গিয়ে জনসমাবেশে জনগণকে আবারও নৌকায় ভোট দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। ফলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন, এটা টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছেন। তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) অবস্থান হচ্ছে, ‘দেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত দিয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকার বেআইনি ঘোষণা করেছেন। সে অনুসারে জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। কাজেই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পাতানো নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবেন না; শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের আয়োজনের চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে। গতকালও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিøংকেন বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তিকে ভিসা প্রদানে যখন-তখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। সবকিছুকে থোরাইকেয়ার করে সরকার ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচনের পথে হাটতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কথা মাথায় রেখেই প্রশাসন ঢেলে সাজানো হচ্ছে। প্রশাসনে (সিভিল-র্যাব-পুলিশ) কর্মরত যে সব আমলার পরিবার ও সন্তান যুক্তরাষ্ট্রসহ ওই দেশের বন্ধু রাষ্ট্রে রয়েছেন; এবং যাদের বিদেশে ব্যবসা-টাকা-গাড়ি-বাড়ি (বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ) রয়েছে তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে। বিগত বিএনপির শাসনামলে যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন; তাদের গুরুত্বহীন পদে পদায়ন করা হচ্ছে। এমনকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএসদের জেলা প্রশাসক পদে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছে।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি প্রতিনিধি দল চলতি মাসে ঢাকা সফল করবেন। তারা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ইস্যুতে যেমন আলোচনা করবেন; তেমনি মানবাধিকার, নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে গতকাল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আগামী ১১ জুলাই চার দিনের সফরে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জিয়া বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ওয়াশিংটনের উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধিদলের সফর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বচানকেন্দ্রিক নয়। এখানে অনেক ইস্যু ও বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তার মধ্যে একটা হয়তো থাকবে নির্বাচন নিয়ে, সেটাকে রুল আউট করছি না।
গত ৫ জুলাই ঢাকায় কর্মরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসভবনে ঢাকায় কর্মরত ১২টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার বৈঠক করেন। আগের দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেন। সবগুলো বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথাবার্তা হয়। ৫ জুলাই ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন দুই দফায়। তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রমতে, দুই বৈঠকে সংসদের মেয়াদ শেষের আগের অধিবেশনে আবারও তত্ত¡াবধায়ক সরকার বা যে নামেই হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বা অন্তর্বতীকালীন সরকার ব্যবস্থা চালুসহ অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে মার্কিন সরকারের পক্ষে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকের এক পর্যায়ে পিটার ডি হাস স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে একটি অনুক‚ল পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা যা করা দরকার তা আপনার (বাংলাদেশ) করবেন। তবে যুক্তরাষ্টের সুপারিশ আমলে না নিলে তারা বাংলাদেশ থেকে কোনো গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করবে না এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে আগাম এমন ইংগিত দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খুবই অল্প কথায় সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সংবিধানের বাইরে তার কিছুই করার নেই। তবে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরুপেক্ষ করতে যা যা প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন তাই করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পিটার হাসের বৈঠকের পর দুপুরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এখন কারো কাছে হাতপাতি না। আগে যারা মনে করত আমরা শুধু হাত পেতে চলব, এখন আর সেটা মনে করে না। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিই, হাতপাতি না। তার সুদসহ ফেরত দিই।’
শেখ হাসিনার দক্ষ এবং জাদুকরী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পথে হাঁটছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৮ সালের মতো রাজনৈতিক ক্যারিকেচা এবং বিএনপি নির্বাচনে না গেলে ২০১৪ সালের মতো ক্যারিকেচা করে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হবে। সে লক্ষ্যে বিএনপি যাতে ঢাকায় বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে বা কোনো অঘটন না ঘটাতে পারে সে জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন সামাল দিতে রাজধানী ঢাকায় তৎপর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী। চলতি জুলাই মাস থেকেই দলটির প্রায় প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে রাজধানীতে সমাবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলতি জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদেরকে সফল সমাবেশের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। এসব সমাবেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। গত বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ দেশ এখন নির্বাচনমুখী। সব দল নির্বাচন নিয়ে এগোচ্ছে। আমাদেরও এগোতে হবে। বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সব কর্মসূচি যেন ঐক্যবদ্ধভাবে ও সমন্বিতভাবে হয় সে বিষয়টি নিয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
সুত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করেই নির্বাচন করবে। সরকারি দলটি ধরেই নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, জাপান, যুক্তরাজ্য এমনকি জাতিসংঘ থেকে চাপ আসবে। আবার ভারত মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক চাইলেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো পাতানো নির্বাচনের পক্ষে থাকতে পারছে না কৌশলগত কারণেই। চীন ইস্যুতে ভারতের মোদি সরকারের যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া মোদি সরকারও চায় পাতানো নির্বাচনের বদলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক।
দেশি-বিদেশি চাপে যখন নির্বাচনী ডামাডোল চলছে তখন বৈদেশিক বাণিজ্য, মুদ্রা ডলার সংকটে দেশ। দীর্ঘদিন থেকে আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রণ করেও ডলার সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। এরই মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। গার্মেন্টস রফতানি কমেছে। আইএমএফের ঋণ নেয়ার পরও রিজার্ভ বাড়নো যাচ্ছে না এবং ডলারের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ‘যা হবার হবে’ দৃঢ়তা নিয়েই নির্বাচন করার পথে হাটছে ক্ষমতাসীন দল। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ ভাল নেই। প্রতিটি পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সংসার চালাতে হিমসিম লাখ লাখ পরিবার খাবার কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও গত কয়েক মাস ধরে দেশে হঠাৎ করে সিন্ডিকেট ‘কাঁচা মরিচ’, ‘পেঁয়াজ’ ‘ব্রয়লার মুরগি’ ‘চাল-আলু’সহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে ৪ থেকে ৫ গুণ। এসব করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে অপরাগতা প্রকাশ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে। জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অসৎ বাণিজ্য করছে। সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জেলে ভরানো যায়; তাতে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, এই যে হঠাৎ করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী সঠিক কথাই বলেছেন। কারণ ওই সব ব্যবসায়ীর সহায়তার আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনী ফান্ড গঠন করবে। পাতানো নির্বাচন করতে হলে আমলা-পুলিশ ও কামলাদের মধ্যে টাকা ছিঁটাতে হবে। সে কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী তার অসয়াত্ব তুলে ধরেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু
হাসিনাকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী