কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন
০৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এবার নদ-নদীর পানি কমছে, সেই সাথে আবারও বাড়ছে ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে নীলফামারি কুড়িগ্রাম ও রংপুর এসব জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, ফসলি জমি। কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কেল্লা। অন্যদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ। যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে টাঙ্গাইলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের বসতভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের ফলে গৃহহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়, বাঁধে ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে ভাঙনকবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল, মসজিদসহ বহু স্থাপনা।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিন থেকে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি কমলেও ভাঙন বেড়েছে। ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব নদ-নদী অববাহিকায় পাঁচটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি বাজার ও শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হতে শুরু করেছে।
গতকাল বাংলাদেশ পাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। গত তিন দিন থেকে এই পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পানি কমলেও এসব নদ-নদীর অববাহিকার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী ২০টির বেশি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলের স্রোত কমে এসে জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গাধর নদের পানি কমতে শুরু করেছে। এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় এবং পানি কমার সময়ে ভাঙন আগ্রাসী আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা, নামাজের চর, দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পুরা বসুনিয়াপাড়া, ঠুটাপাইকর, থেতরাই ইউনিয়নের রামনিয়াশা গ্রাম, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট, রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াশাম, কালিহাট বাজার, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রথম আলো চর, চর রাউলিয়া এবং নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীর চর, বল্লভেরখাস ইউনিয়নের রামদত্ত, মাঝিপাড়া, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নয়ারহাট গ্রাম, থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামে নদ-নদী ভাঙনের তা-ব দেখা গেছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনা এলাকায় তিস্তা নদীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে তিন শ পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আজ সোমবার সকালে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকায় উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লাহাট গ্রামের বাসিন্দা সোবাহান আলী বলেন, গত এক মাসে ব্রহ্মপুত্রর ভাঙনে উত্তর বালাডোবা (মুসল্লিপাড়া), সরকার পাড়া, রসুলপুর গ্রামের প্রায় ৭০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে যমুনা, ধলেশ^রী, ঝিনাই, বংশাইসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদী ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরের হাজারো মানুষ। চোখের সামনে নিমিষেই নদীর পেটে চলে যাচ্ছে- বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ফলে ভাঙন কবলিত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল। কালিহাতী উপজেলার আলীপুর ও হাট আলীপুর। সদর উপজেলার চরপৌলি, মামুদনগর। নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা ও কৃষ্ণ দিয়ার কুল, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক, ছিটকি বাড়ি ও মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, পারদিঘী, থলপাড়া, সুতানরি, গোবিন্দপুর, মটেশ্বর, বহনতলী ও মহেড়া ইউনিয়নের টেঘুরি, গোড়াকী ও আদাবাড়িসহ বেশকয়েকটি গ্রামসহ শতাধিক গ্রামে নদী তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। ভাঙনের কারণে গৃহহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়, বাঁধে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে ত্রাণ সহায়তা নয় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানায়।
স্থানীয়রা জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে যমুনাসহ অন্যান্য নদীতে আশঙ্কাজনকহারে পানি বাড়ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত বুধবার দুপুরে ধলেশ^রী নদীতে ভেঙে পড়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙন কবলিতরা।
যমুনার ভাঙনের শিকার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এক দিনেই তার বসতভিটা যমুনার পেটে চলে গেছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও যমুনা গিলে খেয়েছে। এখন সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। জিও ব্যাগও কোনো কাজেই আসছে না। তাই ভাঙন কবলিত জিলকদরা ত্রাণ চান না, ভাঙনরোধে বাঁধ চান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ