নির্বাচনে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম
নির্বাচন তথা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, আমি কারও খাই না। কেউ এসে অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করুক, এগুলো আমরা মেনে নেব না। গতকাল শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন নিয়ে কেউ সংলাপ করে? যুক্তরাজ্যে করে? যুক্তরাষ্ট্রে কেউ (সরকার) নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করে? এগুলো অবান্তর জিনিস। দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে? পাকিস্তান কিছুদিনের জন্য করেছিল।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথা বলবো না। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় কোনো সংলাপে ভালো অর্জন হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আমাদের দেশে একটা নেতিবাচক সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন বিদেশিদের ডেকে এনে দেখানো। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, গুম এগুলা সব ভাঁওতাবাজি। বিভিন্ন দেশেই মানুষ হারিয়ে যায়, আবার ফিরে আসে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলে আমাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হয়। অথচ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে না। তিনি বলেন, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এত মানুষ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য জীবন দেয়নি। বিদেশিদের (যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এটা জানা উচিত। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা দেশে আসেন দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। কিন্তু অনেক সময় তারা (রাষ্ট্রদূত) এমন সব কথা বলেন, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল।
বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা দেখায় উল্লেখ করে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এমপি ও মন্ত্রী বানিয়েছেন। আমি আগে রাষ্ট্রদূত ছিলাম। কিন্তু কোন দেশে তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে প্রশ্ন করিনি। বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের এসব কাজ নয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই-একটা রাজনৈতিক দল না আসলেও বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে আসে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলেন সেই বিদেশিদের নিজের দিকে তাকানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সন্ত্রাসী দল নির্বাচন করতে পারে না। আমাদের দেশে সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে, তারা নির্বাচনে না আসলে কিছু যায় আসে না।
গত কয়েক বছরে দু-একটি বাদে সবকটি নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুলেন, ভবিষ্যতেও আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন করবো। তবে স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সব দল-মতের ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের দিক থেকে উন্নত দেশের থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোতে ২৬-৩০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়। আমাদের দেশে ৭০ ভাগ মানুষ ভোট দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অতীতে সংলাপ করে কোনো লাভ হয়নি। তবে ভালো প্রস্তাব হলে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের ভেতরে জনগণের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। তারা যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না-ও আসে, সেটি দেশের ক্ষতির কারণ হবে না এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলে পরোয়া করি না। দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনও পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে? বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চায়, তবে আমাদের আপত্তি নেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষক এলে ভালো, কিন্তু না এলে আমরা পরোয়া করি না। পর্যবেক্ষক না এলে দেশের কোনও ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিদেশিদের এনে এনে নির্বাচন দেখানোর। আমার মতে, এটি ভবিষ্যতে বন্ধ করা দরকার। আমাদের দেশে অনেক বাড়ন্তি কাজ হচ্ছে এবং এটি বন্ধ করা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কিছু সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তাদের ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় পড়তে যায় এবং তারা সেখানে বাড়ি কেনেন। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। ভিসানীতি তারা প্রণয়ন করেছে এবং সেটি তাদের মাথা ব্যথা। আমাদের (আওয়ামী লীগ) কর্মী, নির্বাচনের পোলিং এজেন্ট তাদেরও কোনও উদ্বেগ নেই আমেরিকা যাওয়ার জন্য এবং তারা কখনও আবেদনও করে না। তবে যারা এসব নিয়ে চিন্তিত তারা হলেন কিছু সরকারি কর্মচারী, কিছু ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের কিছু নেতা ও এনজিও নেতা। তারা সেখানে (আমেরিকা) যান এবং টাকা নিয়ে আসেন। তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়ে এবং সেখানে বাড়ি করেছে। ওরা একটু দুশ্চিন্তায় আছে। আওয়ামী লীগের কোনো দুশ্চিন্তা নেই ভিসা নীতি নিয়ে।
আমরা চীনের ‘লেজুড়’ নই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো দেশের লেজুড় নয় এবং চীনের দিকে কখনো ঝুঁকেও পড়েনি। কারণ, ঢাকা একটি ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাধীন’ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখে চলে। কিছু লোক মনে করে আমরা চীনের দিকে ঝুঁক্ছি, কিন্তু (আসলে) আমরা কারও দিকে ঝুঁকছি না।
তিনি বেইজিংকে উন্নয়ন অংশীদার বলে অভিহিত করেন, তবে, ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়ার কোনও ধরণের আশংকা নাকচ করে দিয়ে বলেন, এটি একটি ভুল ধারণা। কোনো কোনো পন্ডিত এমন কথা বলেন। অনেকে এটা বিশ্বাস করে, বিশেষ করে কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কোনো অবস্থাতেই আমরা ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়ব না। বিদেশী ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই বিচক্ষণ ও সতর্ক। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ নেই না। তিনি বলেন, জনকল্যাণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বৈদেশিক নীতি-‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’ অনুসরণ করে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ককে ‘সুদৃঢ়’ এবং ‘আমরা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সোনালী অধ্যায়ে রয়েছি। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কও ভালো এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতে, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। ঢাকা সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে। সব দেশের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য জাতিসংঘে যে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আমরা জয়ী হই।
আইএমএফের মতে, একটি দেশ ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে যদি এর মোট বৈদেশিক ঋণের ৫৫ শতাংশের বেশি একটি একক উৎস বা দেশ থেকে আসে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, তবে, বাংলাদেশের জিডিপিতে বৈদেশিক ঋণের অংশ মাত্র ১৩.৭৮ শতাংশ। যার মধ্যে ৬১ শতাংশ এডিবি, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরবরাহ করেছে এবং জাপান ১৭ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ একক দেশের ঋণ প্রদানকারী হয়ে উঠেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে বাংলাদেশ ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে, যা মোট জিডিপির ০.৭৫ শতাংশ।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। যুদ্ধ ছাড়া আর সবকিছুই করেছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান চাইছি। তবে মিয়ানমার কখনও বলেনি যে তারা নেবে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বোঝাচ্ছেন, যাতে তারা মিয়ানমারে ফিরে না যায়। সে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্পেও অনেকে বাধা দিচ্ছে। তবে রোহিঙ্গারা তাদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে গেলে নিজেদেরই ভবিষ্যৎ ভালো হবে।
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য রাখেন। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা