ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের বাড়িসহ চাঁদনী রাতে সৌন্দর্য দেখতে ভ্রমণপ্রেমীদের আগ্রহ বেশি

ভরা বর্ষায় হাওরে পর্যটক ঢল

Daily Inqilab মো. হেলাল উদ্দিন, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে

১১ জুলাই ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

কিশোরগঞ্জের রূপসী হাওর অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিকলী হাওর। এখন হাওরে বর্ষার যৌবনের রাজটিকা পড়ে আছে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে। যেদিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। নতুন পানির ঢেউয়ে গর্জে উঠে যৌবনের তরঙ্গ। ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত বা ছুটির দিনগুলো শুক্র শনিবার নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘুরতে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। হাওরের বিশাল বুকে নৌকা স্পিটবোট নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে মানুষের ঢল। কেউবা চাঁদনী রাতে নৌকা নিয়ে হাওরে রাত যাপন করছেন আবার অনেকেই চাঁদনী রাত দেখতে নিকলীর আবাসিক হোটেলগুলোতে রাতে অবস্থান করেন। ভ্রমণ পিপাসুদের সাড়ে সাড়ে নৌকার বহরে মুখরিত হাওর অঞ্চল। হাওরের অলওয়েদার সড়ক সাবেক প্রেসিডেন্ট এড. আব্দুল হামিদের বাড়ি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ রূপসী হাওরের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষায় ঢেউয়ের ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য সরকার কর্তৃক সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বেড়িবাঁধা এলাকায় নির্মাণ করা হয় পর্যটকদের বসার জন্য টেবিল, রাতে নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে লাইটিং। এছাড়া উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের ভাঙনরোধে রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সারাদেশের মানুষ বর্ষা মৌসুমে ছুটে আসে নিকলীর হাওরে। তাই এ উপজেলাকে মিনি পর্যটনকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে। দিন দিন এই স্থানটি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিবছর সারাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। বিশাল জলরাশি ও দিগন্ত ছোঁয়া নান্দনিক হাওরের অপরুপ দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। আর এ কারণেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে শত শত মোটরবাইক এবং প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এখানে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের আগমনে উপজেলার কয়েক হাজার হতদরিদ্র পরিবারের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, ঢাকাসহ কিশোরগঞ্জের আশপাশের জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন নিকলীতে বেড়াতে আসছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে একদিনের ট্যুরে এসেছেন ফারুক, ফয়সাল, সাগর, তন্ময়, জুবায়ের, জসিম, রনি, হাফিজ, প্রান্ত, জুয়েল, স্বপন, ফাহিম। তারা বলেন, আমরা ১২ জন চার মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ঈদের ছুটিতে ইচ্ছে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি মিঠামইন কামালপুরে যাবো। আমরা এই সময়টাকে আরও বেশি উপভোগ করতে পারতাম যদি রাতে নৌকায় হাওরে ঘুরতে পারতাম। কথা হয় নরসিংদী উপজেলার নিলক্ষীয়া গ্রামের কলেজ ছাত্র ইমরানের সাথে ইমরান বলেন, এখাকার শীতল বাতাস মনকে উজ্জীবিত করে সুন্দর পরিবেশ আমার মনে এ এলাকাটি আরও উন্নত পরিসরে চলে যাবে। তাছাড়া রাস্তায় প্রচুর যানজট ও রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও উপভোগ করেছি।
নিকলীর ট্রলারচালক সুজন বলেন, এ বছর হাওরে পানি হওয়াতে আমরা নৌকা ও ট্রলার চালকরা খুশি ইতোমধ্যে পর্যটক আসতে শুরু হয়েছে। এখানে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া নেয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি সঠিক নয়। আমাদের সমিতির নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া কেউ আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ বলেন, হাজার হাজার পর্যটক এসেছে যার জন্য করগাঁও থেকে নিকলী পর্যন্ত প্রচুর যানজট। পর্যটক দেখে আমরা খুবই আনন্দিত। পর্যটকদের জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি যেন তারা হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। সেদিকে স্থানীয় সামজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখেন। পর্যটকরা যাতে কোনো ভোগান্তিতে না পড়ে বা প্রতারিত না হয়। উচ্চপদস্থা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, এমপি, মন্ত্রীরাও সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসেন।
নিকলী থানার ওসি সারোয়ার জাহান বলেন, ঈদের পর থেকে নিকলীতে পর্যটকদের ভিড় অনেক বেশি হবে তাই বেড়িবাঁধে আসার আগে দুই জায়গায় চেকপোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ এলাকায় সিভিল পুলিশ এবং পোশাকধারী পুলিশ সার্বক্ষণিক পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। নিরাপদে ভ্রমণ করার জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব রকম সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
আরও

আরও পড়ুন

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী