বিপথগামী হচ্ছে কোমলমতি কিশোররা
১২ জুলাই ২০২৩, ১১:১৭ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
ডিজটাল বাংলাদেশের সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি দেখা দিয়েছে গ্রামাঞ্চলে। প্রযুক্তির নেশায় বিশেষ করে মোবাইলের মাধ্যমে গ্রামের তরুণরা বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এক সময় গ্রামে সন্ধ্যা হলে ছেলে মেয়েরা পড়ার টেবিলে বসত। পড়া লেখার শব্দ শোনা যেত। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না। প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সবার হাতে এখন মোবাইল। সন্ধ্যা হলেই মোবাইল হাতে নদীর তীরে বা রাস্তার পাশে, ব্রীজের উপর চলে যায। চলে মোবাইলে গেম খেলা না হয় বাচির নামে জুয়া খেলা। কুড়িগ্রাম জেলায় এবং চিলমারীর চরাঞ্চলের শিক্ষাথীরাও অনলাইন গেমিং এবং অনলাইন বাজিতে অর্থৎ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে পড়াশোনা বিমুখ হবার পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না অনলাইন বাজি খেলা।
প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই দেশের দারিদ্র পীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম। শহর-গ্রাম কিংবা চরাঞ্চল। সবার হাতেই রয়েছে স্মার্ট ফোন। আর এই স্মার্ট ফোনের বদৌলতে খুব সহজেই অনলাইন বাজি খেলায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখাযায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শাখাহাতি গ্রামে ৭/৮জন কিশোর টিনসেড চালার নিচে বসে মোবাইলে গেম খেলছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ১৫/২৫হাজার টাকা মূল্যের স্মার্ট মোবাইল রয়েছে। মাথা নিচু করে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ছোট আকারের মোজা পড়ে এক ধ্যানে সবাই মোবাইলে গেম খেলছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে জেলার সর্বত্রই প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তদের হাতে স্মার্ট ফোনের ছড়াছড়ি। এতে করে খুব সহজেই অনলাইন গেমসহ অনলাইন বাজি ( এক ধরনের জুয়া) খেলার প্রবণতা বহু গুণে বেড়েছে। দোকান, ভবন, গাছতলা কিংবা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে মাথা ঝুঁকে এক নাগারে মোবাইলে জুয়ার আসর বসছে দলবদ্ধ ভাবে। ফ্রি-ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি৯৯৯, টেনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারাম বোর্ড, ওয়ান এক্স বেটসহ বহু অনলাইন গেম এবং বাজি খেলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে আগামী প্রজন্ম। অনলাইন বাজির নেশায় কেউ কেউ পড়াশোনা বাদ দিয়েছে অল্প বয়সেই। বাজির এই অনলাইন জুয়া খুবই লোভনীয় আর আকর্ষণের খেলা। মোবাইল গেম, খেলাধুলা, পড়াশোনা, কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় এর মধ্যে পড়ে থাকছে শিক্ষার্থী।
চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি এলাকা মোনারুল ইসলাম বলেন, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। কয়েক বছর আগে পড়াশোনা বাদ দিয়েছি। এই বাজি খেলতে গিয়ে আমার লেখাপড়া শেষ। টাকা জমিয়ে ১৫হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট মোবাইল কিনেছি। আমার ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে একাউন্ট আছে। প্রতিদিন এমবি কিনে মোবাইলে বাজি এবং অনলাইন গেম খেলি। সার্ভার বন্ধ থাকলেও ভিপিএন-এর মাধ্যমে এসব গেম ও বাজি খেলা যায়।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্র জনি বলেন, আমার এ যাবৎ প্রায় ৫০হাজার টাকা চলে গেছে মোবাইলে গেম ও বাজি খেলাতে। কোন লাভ হয়নি। উল্টো পড়াশোনা ক্ষতি এবং চোখসহ শারিরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে। রমনা মডেল ইউনিয়ের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র শরীফুল ইসলাম বলেন, আমার ৭/৮মাসে এমবি কিনতে ১০হাজারের উপর টাকা চলে গেছে। শুধু এগুলো টাইম পাস ছাড়া আর কিছু না। মোবাইলে বাজি বা গেম খেললে ছেলেরা মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে না। একটানা মোবাইলে থাকলে মেধা ও স্বরণ শক্তি কমে যায়। এছাড়াও চরাঞ্চলে ৩য় শ্রেণী থেকে উপড়ের শ্রেণীর বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা এই মোবাইল গেম ও বাজি আসক্ত।
চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি এলাকা আজাদ, আজগার আলীসহ অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ছোট-বড় ছেলেদের দল বেধে গাছ তলা, রাস্তার দু’পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বসে মোবাইলে বাজি আর গেম খেলে। ৩০০ থেকে ৪০০টাকা আয় করছে। এছাড়াও উঠতি বয়সের ছেলেদের নিকট চা, বিড়ি বিক্রি করছে। এই বাজি খেলা বহুলাংশে বেড়ে যাচ্ছে। এই অল্প বয়সে অনেকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল আসক্তি রোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব ছেলে চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কাজে জড়িয়ে পড়া শংকা প্রকাশ করেন তারা। তাই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান অভিভাবকবৃন্দ।
একই এলাকার এইচ এম মেহেদী বলেন, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও পৌঁছে গেছে মোবাইল গেমস। এক সময় সন্ধ্যা নামলে ঘরে ঘরে পড়ার শব্দ শোনা যেতো, এখন সন্ধ্যা নামলে ১৩ থেকে ১৭ বয়সের শিশু কিশোর মোবাইল গেমস খেলার জন্য নদীর তীরে চলে যায়। রাত ২টা ৩টা পযন্ত গেমস খেলে, সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠে। যারা গেমস খেলে তারা এতোটাই বদমেজাজী বাবা মাও তাদেরকে শাসন করতে ভয় পায়।
চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হারেসুল ইসলাম বলেন,অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন বাজি ধরা অ্যাপস-এ বাজি খেলে কেউ হয়েছে নি:স্ব আবার কেউ হয়েছে রাতারাতি কোটিপতি। ইতোমধ্যে উপজেলার আইনশৃংখলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন কে ধরা হয়েছিল তবে তারা আন্ডারএজ হওয়ার তাদের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন আমাদের এই অভিযান অব্যহত থাকবে আমরা চেষ্টা করছি এ অঞ্চলের শিশু কিশোর যাতে জুয়া খেলা সহ অনলাইন মোবাইল গেম এ আসক্ত হয়ে শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পুলিশিং কার্যক্রমে গতি আনতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু
ফারাক্কা বাঁধের কারনে সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির সদস্য হলেন ডুজার সাবেক সভাপতি তুষার
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে -কক্সবাজারে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
আইবিটিআরএ-তে ‘সার্টিফিকেশন কোর্স অন ট্রেজারি ডিলিংস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু
শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় হর্ন বাজানোয় নতুন নির্দেশনা
খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের জরুরী মতবিনিময় সভা
উন্মুক্ত অনলাইন রিটার্ন সিস্টেম, দাখিল ২০ হাজার
চার হত্যা মামলায় ফের ৮ দিনের রিমান্ডে গোলাম দস্তুগীর গাজী
‘দ্রুত’ নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রবাসীদের নতুন এনআইডির আবেদন
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কারে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে না.গঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০
২১ দিনে ১ মাসের চেয়েও বেশি রেমিট্যান্সএলো
সোনারগাঁওয়ে নারীর লাশ উদ্ধার।
হঠাৎ অশান্ত ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া অফিসারদের ধর্মঘটের ডাক
আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মনসুরুল হকের পদত্যাগের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র জনতার সড়ক অবরোধ
চবিতে একদিনেই ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন ২৩ জন
মাদারীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
না.গঞ্জে চাঞ্চল্যকর মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি
কালিয়াকৈরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ