নির্বাচনী বছরে চ্যালেঞ্জে আর্থিক খাত
১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৫০ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ বলেছে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন সংকট ও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাড়ছে আর্থিক সংকট। ডলার সংকটে গত কয়েক মাস ধরে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমে গেছে। এতে শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। অর্থনীতির সব সূচক মন্দা ছাড়াও বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে চাপ বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অথনীতির ওপর। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের চাপে পড়েছে। এর মধ্যে সরকার ব্যস্ত রাজনৈতিক ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে; অর্থনীতির এই ভয়াবহ অস্থিরতা ও সংকট নিরসনের ভ্রুক্ষেপ নেই। ফলে সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, নির্বাচনী বছরে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ দেখছি। প্রথমত মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়ত সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, তৃতীয়ত শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সমস্যা তিনটি। এখনো ডলার সংকট বিরাজমান। নির্বাচনী বছরের অনিশ্চয়তা আছে। বহির্বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা আছে। মূল্যস্ফীতি যদিও জুনে সামান্য কমেছে কিন্তু সেটাও গেড়ে বসেছে, যা নামতে চাইছে না। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষাও বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিককালে আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এটাকে যদি আমরা না থামাতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
মহামারি করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। যার প্রভাব বাংলাদেশেও অর্থনীতিতেও পড়েছে। অবশ্য করোনার বিপর্যয় কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল, জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাবে নানামুখী চাপে পড়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে আছে মানুষ, অবনমন হচ্ছে জীবন মানের। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, আমদানি না থাকায় রফতানিতে ধ্বস, দেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ দশমিক ১৪ লাখ কোটি টাকা। তারপরও রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়া এবং বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। আবার আমদানি ব্যয় বাড়ালে তা মিটানোর মতো পর্যাপ্ত রিজার্ভও হাতে নেই। আইএমএফ’র হিসাব মতে, দেশের রিজার্ভ বর্তমানে ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আর এসব কারণে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি। এদিকে আগের বছরের থেকে কিছুটা বাড়লেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পূরণ হয়নি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। আর নতুন বছরে ৭২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। কারণ রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস পোশাকশিল্পে চলছে অস্থিরতা। পশ্চিমা দেশগুলোর বাজারে প্রতিদিনই কমছে রফতানি কার্যাদেশের সংখ্যা। জ্বালানি ও বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য, ব্যাংকের কাছে দেনা বৃদ্ধিতে অর্ডার কমে আসায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের কারখানাগুলোর। অনেক মালিকেরাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এরমধ্যে শ্রমিকরা নূন্যতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানাচ্ছে। আর তাই আসন্ন লোকসানের মুখে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে, বিকল্প উপায় হিসেবে কারখানা ইজারা দেয়ারও চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকরা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, অর্ডারের সংখ্যা কমে যাওয়ার তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পে। এতে গত কয়েক মাস ধরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববাজারে মন্দাভাব অব্যাহত থাকায়, ব্যবসার সার্বিক পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়- তা স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা যে, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ডলার সংকট দূর না হলেÑসদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের চেয়েও চেয়েও রফতানি কমে যাবে। পাশাপাশি পোশাক রফতানি গার্মেন্ট তারা বলেছেন, ডলার সংকটের কারণে যদি এলসি খোলা না যায়, এবং গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে যদি সক্ষমতা অনুযায়ী শিল্প-কারখানা সচল রাখা না যায়, তাহলে গত অর্থবছরের রফতানির তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জন হবে? এছাড়া, আগামী নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিয়শ্চতা সৃষ্টি না হওয়া এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অর্থনৈতিক কর্মকা- থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি নতুন বা অপ্রচলিত বাজারে (নন-ট্রাডিশনাল মার্কেট) রফতানি বাড়ানোর জোর দেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে যদি শিল্প-কারখানাই অচল থাকে এবং ডলারের অভাবে যদি প্রয়োজনীয় পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয়, তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবেন রফতানিকারকরা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)- এর সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন খুবই সহজ হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটই এখন আমাদের মাথাব্যথার বড় কারণ।
এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সঙ্কট, রিজার্ভ কমে যাওয়া, আমদানি-রফাতানিতে সমস্যা, মাথাপিছু ঋণসহ কয়েকটি খাতের পুঞ্জীভূত সংকট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে নতুন অর্থবছর। নির্বাচনী বছর হওয়ায় নানামুখী সংকটের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মোটাদাগে ত্রিমুখী চ্যলেঞ্জে পড়তে হতে পারে অর্থনীতিকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো কঠিন হবে।
অবশ্য গত মাসেই প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ বলেছে, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন সংকট ও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাড়ছে আর্থিক সংকট। ডলার সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। জ্বালানি সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রেও চাপ বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অথনীতির ওপর। এদিকে বিশ্বব্যাংকই নয়; খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকই সম্প্রতি প্রকাশিত ত্রৈমাসিক দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের চাপে পড়েছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতার কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, রয়েছে বহিরাগত প্রভাব। এসব কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পরিস্থিতি রাতারাতি সমাধান হবে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনায় সতর্ক থাকার কথা বলেছে।
সূত্র মতে, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ আমদানি। অথচ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আমদানি কমেছে আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৯৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, এলসি খোলার পরিমাণ এক অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২৭ শতাংশ কমেছে। এমনকি সর্বশেষ মাস জুনে আমদানি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে কম। ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুন মাসে ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৪৪ শতাংশ। তথ্যে আরো দেখা যায়, মে মাসে প্রায় ৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়, এপ্রিলে খোলা হয় ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি।
বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এলসি খোলার হার কমে যাওয়া মানে দেশের অর্থনীতি এখন মন্থরগতির দিকে যাচ্ছে। কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। অর্থাৎ আমাদের বিনিয়োগ কমবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে।
ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু পণ্যের আমদানিতে শতভাগ মার্জিন থাকায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তাদের মতে, সামনে নির্বাচন। নির্বাচনী বছরে নানামুখী চাপ অর্থনীতিতে পড়ে। আর অমদানি কম হওয়ায় শিল্পায়ন, বিেিনয়াগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই সামনে আর্থিকখাত বড় ধরণের চাপে পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র মতে, দেশের মাথাপিছু ঋণ বর্তমানে ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। দুই-তিন বছর আগেও বাংলাদেশের এত বৈদেশিক ঋণ ছিল না। যা নির্বাচনের আগে সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ এই সময়ে এটি পরিশোধ করাও কষ্টসাধ্য হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও আর্থিকখাতের বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতি অনেকটাই অস্থির, আবার নির্বাচনের বছর। দুই-তিন বছর আগেও বাংলাদেশের এত বৈদেশিক ঋণ ছিল না। গত তিন বছরে বেড়েছে অনেক। বাংলাদেশ এখনো সামাল দিতে পারছে। ভবিষ্যতেও পারবে বলে আশা করা যায়। তবে সব কিছু মিলিয়ে কিভাবে সামাল দিবে সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন থেকে মূল্যস্ফিতির প্রভাবে দৈনন্দিন জীবন-যাপনে ত্রাহি অবস্থা। মহামারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। চলছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। পাশাপাশি গত কয়েকমাস রাজধানীর বড় বড় মার্কেটগুলোতে আগুন লেগে হাজার হাজার ব্যবসায়ী বিপাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পণ্যের অতিরিক্ত দাম। যা দেশের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
এদিকে সর্বশেষ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটিত হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এনবিআর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশি^ক মন্দার প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি সামাল দেয়ার পাশাপাশি কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যরোধে রাজস্বে ছাড় দেয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। ডলার সংকট ও আমদানি কড়াকড়িতে শুল্ক আদায়ে ধস নেমেছে। একই অবস্থা আয়কর আদায়েও। এদিকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি হওয়ায় সরকারের ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণ করেছে। বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সকল বকেয়া মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৩১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যা বিদায়ী অর্থবছরের একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ ঋণ। বিদায়ী অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৭৮৯ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি।
এদিকে দেশের আর্থিকখাতের ভিত্তি কতোটা শক্তিশালী তা বোঝা যায় দেশের খেলাপি ঋণের অবস্থা দেখলে। আর দীর্ঘদিন থেকেই আর্থিকখাতের মাথা ব্যথার কারণ এটি। সূত্র মতে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি বেশি বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। আইএমএফ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে। আর তাই খেলাপি ঋণ কমানোসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন আমাদের প্রবৃদ্ধিতে ছাড় দিয়ে কিভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়, সেদিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের রিজার্ভ নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারি সেটার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করা, ঘাটতি অর্থায়ন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সতর্কভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প বাছাই, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা
মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে
ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা
নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা
সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে