বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছে
১৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
দেশে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি। এতে জেলার ৯ টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। এদিকে যমুনা নদীর পানি এখনো বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। গাইবান্ধায় তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়াসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। লোকালয় ও নিম্নাঞ্চলসহ নতুন নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ঘরে পানি ওঠায় অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছেন। কেউ উপায় না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে, নৌকার মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। নেত্রকোনার কলমাকান্দার সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। একইসঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জেও ভারি বৃষ্টি হওয়ায় আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত জেলার সব কটি নদ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি। এতে জেলার ৯ টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি ঘর বাড়ি তলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষজন। তিস্তা ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মুপুত্র নদের অববাহিকায় নিচু স্থানের ঘর বাড়ি গুলো নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এসব ঘর বাড়ি গুলো পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বানভাসিরা আসবাব পত্র, গবাদিপশু পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানগুলোতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে বানভাসি মানুষ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী জেলার ধরলা নদীর পানি কমে সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেমি, দুধকুমার নদের নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সেমি পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কাউনিয়া পয়েন্ট তিস্তা নদীর পানি ১৫ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন কদমতলা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, গত দুদিন ধরে পানি বেড়েই চলছে। পানি বাড়ার কারনে এলাকার অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ধানের বীজতলা, পটলের ক্ষেত এখন পানির নিচে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোন উপায় নাই।
কুড়িগ্রাম সদরের চরজগমন গ্রামের মোঃ হযরত আলী বলেন,পানি ঘরে ঢুকে খাট তলিয়ে গেছে। রান্নার চুলা পানির নিচে। ঘরে চাল থাকলে আগুন জ্বালানোর কোন উপায় নাই। শুকনো খাবারের প্রয়োজন মনে করছে অনেকে। চর জগমন গ্রামের ছালেহা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে পানি উঠে সাথে সাথে নেমে গেছে। এবার পানি বাড়ার ধরন আলাদা। ঘরে অর্ধেক পানিতে ডুবে গেছে। গত দুদিন ধরে ঘরের জিনিস পত্র,হাস মুরগী নিয়ে তাবু টাঙিয়ে ব্রিজে আছি। আমাদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা ৩ থেকে ৪দিন পর্যন্ত উঠা নামা করতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে বন্যায় ১২হাজার পরিবার পানিবন্দী এবং নদী ভাঙনের শিকার ১৫০০ পরিবার। এসব বন্যাকবলিতদের জন্য সাড়ে ৮লাখ টাকা, ২৭৫মেট্রিক চাল এবং ৩শ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা পেলে উপ-বরাদ্দ দেয়া হবে। গত ১৪ জুলাই শুক্রবার বিভিন্ন বন্যা এলাকা পরিদর্শন করে জেলায়শ ৮শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েকদিন ধরে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৬১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা : ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।
অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১৪.৮০ মিটার)।
দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরের চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাড়ছে যমুনার পানি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে চরাঞ্চলের হাজারো পরিবারের।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার সুরমা, চেলা, মরাচেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপচে পড়া পানিতে হাওড়, খাল-বিল ও মাঠঘাট ভরে প্লাবিত হয়ে পড়েছে দোয়ারাবাজারের ৯টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা। উপচেপড়া স্রোতে সুরমা ইউনিয়নের রাবারড্যাম সংলগ্ন খাসিয়ামারা নদীর উভয় তীরের রাস্তা গড়িয়ে হু হু করে পানি ঢুকায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ ঢলের তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে রবিশস্যসহ শত শত হেক্টর আমনের বীজতলা। শঙ্কিত রয়েছেন উপজেলার শতাধিক মাছের খামার মালিকরা।
সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আবারো কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে জেলার সকল উপজেলা অচিরেই বন্যা উপদ্রুত হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান বলে জানান তিনি। দোয়ারাবাজারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মোর্শেদ মিশু জানান, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, ত্রাণ বিতরণ ও জরুরি ক্ষেত্রে বন্যা মোকাবেলায় মনিটরিংসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই