মোদির ভারত : বহুজাতিক বিনিয়োগের বধ্যভূমি
১৯ জুলাই ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
সম্প্রতি রাতারাতি ভারত ত্যাগ করেছে অ্যাপলের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা ফক্সকন। গত ১০ জুলাই ফক্সকনের মূল সংস্থা ‘হন হাই’ হঠাৎ করেই একটি বিবৃতি জারি করে যে, ভারতের উইস্ট্রন কর্পোরেশনের সাথে ১হাজার ৯শ’ ৫০ কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর উৎপানের যৌথ উদ্যোগ তারা চালু রাখবে না। থেকে গত বছর উইস্ট্রন কর্পোরেশনের সাথে একটি কারখানা নির্মাণ চুক্তিতে পৌঁছানোর পর ফক্সকন এ ঘোষণা দিল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা চালিয়ে যাবে না। ফক্সকন অপ্রকাশিত বিনিয়োগ সহ প্রাথমিকভাবে ১শ’ ১৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল। বিদেশী গণমাধ্যমগুলির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠনাটির ভারত থেকে বেরিয়ে আসার কারণ হল যে, ভারত সরকার তার প্রতিশ্রুত ভর্তুকি এবং কর সুবিধাগুলি পূরণ করেনি। ফক্সকনের প্রস্থানের সাথে বিনিয়োগ ছিনতাইকারী হিসেবে তকমা পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি শাসিত ভারত।
গত বছরের মে মাসে মোদি সরকার অন্যায়ভাবে চীনা নির্মাতা শিয়াওমির ৮ বছরের বিনিয়োগ ৪৮কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করে। শিয়াওমি ভারতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেও এই অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। তারা এমনকি ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০শতাংশ হারে স্থানীয় উপাদান সংগ্রহের পরিকল্পনাও ঘোষণা করে। কিন্তু ১৩ জুন ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত তহবিল বাজেয়াপ্ত করতে একটি আদেশ জারি করে। ফক্সকনের প্রধান নির্বাহী লি জুন সম্ভবত সেই মুহুর্তে সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতে কারখানা তৈরি করার জন্য ভারতয়ি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণটি একটি নির্লজ্জ ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারত এখন সমস্ত চীনা প্রযুক্তি নির্মাতাদেরও লক্ষ্যবস্ত করেছে। মোদি সরকার শিয়াওমি, আ্যাপল এবং ভিভোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষপদগুলিতে শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের সিইও, সিওও এবং সিটিও হিসাবে নিয়োগের দাবি করেছে। অন্য কথায়, ভারতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলিকে শুধুমাত্র অর্থ বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয় এবং বাধ্যতামূলকভাবে ভারতের জন্য শ্রম প্রতিষ্ঠান হিসবে কাজ করতে হয়।
এখন বহুজাতিক সংস্থাগুলির বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে ভারত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুসারে, কয়েকে দশক আগে ভারতে মোট ৫হাজার ৬৮টি বহুজাতিক কোম্পানি ছিল। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে সংখ্যাটি ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১৭শ’ টিরও বেশি বহুজাতিক কোম্পানি সম্পূর্ণরূপে প্রস্থান করেছে এবং শুধুমাত্র ৩০ শতাংশ এখনও সক্রিয় রয়েছে। যদি বিদেশী নির্মাতারা ভারতে কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তাদের অবশ্যই সমস্ত শীর্ষ নির্বাহী পদ খালি করে মোদি সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। সংক্ষেপে, তারা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলিকে কৌশলে অধিগ্রহণ করে এক পয়সাও খরচ না করে সমস্ত সুবিধা আদায় করছে। শিয়াওমির সম্পদ হরণ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে, উইস্ট্রন ভারত থেকে তার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ঘোষণা করে এবং সেখানে তার সমস্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিত্যাগ করে। উইস্ট্রনের ভারতের মাটিতে তার ১৫ বছরের বিনিয়োগ সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানটির কারাখানাগুলি কোনো উস্কানি ছাড়াই ভাংচুর করা হয়। ৩ বছর ধরে প্রতিরোধ করার পর চাপ সহ্য করতে না পেরে ভারত ছেড়েছে উইস্ট্রন।
ভারতের আইন এখন মোদি সরকারের কাছে ছেলেখেলায় পিরণত হয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছা আইন পরিবর্তন করে এপর্যন্ত ২০টিরও বেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ হাজার ৩শ’ ৫০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত জরিমানা জারি করেছে। এমনকি মার্কিন বিশাল খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট, ভারতে মাত্র ২ বছরের জন্য ব্যবসা খোলা রাখতে পেরেছিল, কিন্তু তার বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। পরিবর্তে ওয়ালমার্টকে কয়েক কোটি ডলার জরিমানা করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ভারত মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইবিএম’র ৮৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার জব্দ করেছে। এবং বছরের পর বছর মামলা চালিয়েও এটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি তারা। মার্কির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড ভারতে তার অষ্টম বছরের বিনিয়োগে ২শ’ কোটি ডলারের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অসংখ্য বাধা তাদের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এবং অবশেষে যখন তারা প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের বহু লাখ ডলার গচ্চা দিয়ে যেতে হয়েছে। ফিনল্যান্ডের নকিয়া ভারতে ৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার খুুইয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হল ভোডাফোনের। ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থাাটি ১৩ বছর ধরে আদালতে লড়াই করেছে। কিন্তু মোদি সরকার সংস্থাটির অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য এমনকি ৫০ বছর আগের আইন পরিবর্তন করেছে, বিশেষ করে, ‘ওভারসিস কোম্পানি ইক্যুইটি ট্রাঞ্জাকশন্স ট্যাক্স’ এর ওপর একটি নতুন আইনি ধারা তৈরি করেছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে যে, এটি পূর্ববর্তীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রত্যাশিতভাবে ভোডাফোনও ভারতে মামলায় হেরেছে এবং ২শ’ কোটি ডলারের জরিমানা ছাড়াও অতিরিক্ত ৩শ’ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।
অনেক প্রতিবেদন বলছে যে, শুধু বিদেশী বিনিয়োগ আত্মসাৎ করাই নয়, ভারত পণ্য আমদানি ক্ষেত্রেও প্রায়ই অযৌক্তিক দাবি করে এবং সম্পূর্ণ অর্থ প্রদানে বিলম্ব করার জন্য পণ্য পাওয়ার পর বিভিন্ন অজুহাত ব্যবহার করে। ভারত শিয়াওমি এবং ফক্সকনের ৪শ’ ৮০ কোটি ডলারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। অ্যাপল এবং স্যামসাং প্রস্তুতকারকও রাতারাতি ভারত থেকে পালিয়ে গেছে। ভারতের মতো একটি দেশ, যার বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে, তার চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের কারখানার হওয়ার খেতাব ছিনিয়ে নেয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা নিছক তামাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেমী বিনিয়োগ সংস্থাগুলির ভারতে যে পরিণতি ঘটছে, তা অন্যান্য সংস্থাগুলির জন্য একটি সতর্কবাণী। যে সমস্ত উদ্যোক্তা এখনও ভারতের মাধ্যমে ভাগ্য তৈরির স্বপ দেখে, তাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, তারা হয়ত ভারতে বড় মুনাফা দেখছে, কিন্তু ভারত সরকার তাদের পুঁজি হাতানোর লক্ষ্যে রয়েছে। সূত্র : সিএনই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর চিঠি নিয়ে যা জানাল ভারত
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান