চাপে নমনীয় হব না
২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪১ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
বিদেশি চাপের সঙ্গে গণতন্ত্র-মানবাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই; সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলতে হয়। একজনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনলে আরেকজন চাপ দেয়, যে দেশ নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কিনব না।
১৪ দলীয় জোটগতভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে টানা কর্মসূচি নিয়ে থাকবে ১৪ দল। জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোকেও মাঠে নিজেদের পক্ষে নামানোর সিদ্ধান্ত
দেশি-বিদেশি যতই চাপ আসুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় হবেন না। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতোই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। তবে জাতীয় পার্টিসহ অনুগত ও সমমনা দলগুলোকে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর বিরুদ্ধে মাঠে নামানো হবে। দীর্ঘ ১৬ মাস পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শরীক দলের নেতারা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে তোয়াজ করেছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বলছেন এবং ফের কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় জোগটতভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যত চাপই আসুক তিনি নমনীয় হবেন না। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো নির্বাচন দেবেন না। গত বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এমন দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে কিছু সমমনা দলকে নিয়ে সরকারের পক্ষে মাঠে নামানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে আগামী নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটগতভাবে করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৬ মাস পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন জোটে নেত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাÐারী ও মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহŸায়ক রেজাউর রশিদ খানসহ জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, গণভবনে বৈঠকের শুরুতে জোট নেত্রী শেখ হাসিনার পরে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাÐারী, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম। বৈঠকে উপস্থিত তরিকত ফেডারেশনরে চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাÐারী ইনকিলাবকে বলেন, বৈঠকে আমি বলেছি, যে ১৪ দলীয় জোট আপনার (জোট নেত্রী শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমাদের যথাযথভাবে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে শরিকদলের নেতাদের জোট নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো চাপের কাছে নমনীয় হবেন না তিনি। নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হবে। যথাসময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি সভায় জোট শরিকদের যারা প্রার্থী দেবেন তাদের মাঠে কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। তিনি শরিকদের জানান, এবারের নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো হবে না। নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। তাই এখন থেকে শরিকরা যেন মাঠে নির্বাচনের কাজ শুরু করে।
বৈঠকে সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার দৃঢ় থাকবে। তিনি মনে করেন, দেশের ওপর বিদেশি যে চাপ তার সঙ্গে গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং চাপ প্রতিরক্ষা ক্রয় এবং অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বলে প্রধানমন্ত্রী অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা শরিক দলের নেতাদের কাছে আন্তর্জাতিক শক্তির সরকার যে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে যে বিষয়ে আলোকপাত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই আমার চলতে হয়। একজনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনলে আরেকজন চাপ দেয়। ফলে সবার কাছ থেকেই কিছু কিছু জিনিস কিনব। কিন্তু যে দেশ নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কিনব না। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই বিদেশ নীতি মেনেই বাংলাদেশ ভবিষ্যতেও চলবে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ১৪ দলীয় জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা তোলেন জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে প্রসঙ্গ উঠে। তবে একাধিক শরিক দলের নেতা ওই বিষয়টির বিরোধিতা করেন। তখন জোট আর সম্প্রসারণ না করার বিষয়েই সিদ্ধান্ত জানান জোট নেত্রী শেখ হাসিনা। এর বদলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র করে সরকারের পক্ষে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত দেন জোট নেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে অংশ নেবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে শরিক দলের নেতাদের পক্ষ থেকে যে সকল আসনে শরিকদের প্রার্থী দেওয়া হবে সে সকল আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দিতে শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে জোটে নেত্রী ও দলীয় প্রধান সম্মতি দিয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে জোটের শরিকরা অক্টোবরের মধ্যে জোটের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা মিটমাট করার জন্য হাসিনাকে অনুরোধ করেন। তারা আ. লীগকে তাদের সাম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা ও কাক্সিক্ষত নির্বাচনী এলাকা দেবে বলেও জানান। এরপর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বসে আগামী নির্বাচনের আসন বণ্টন ঠিক করা হবে। এরপর আ. লীগ প্রধান সিদ্ধান্ত নেবেন কোন আসন শরিকদের দেবেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটও সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সারা দেশে জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের মতো ১৪ দলীয় জোটও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।
বৈঠকে থেকে বেরিয়ে গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, ১৪ দল জোটগতভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। ১৪ দল জোটগতভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ছাড়া সমমনা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সমমনা কোনো কোনো দল যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যেতে চান সেটা বিবেচনার অপেক্ষায় আছে। তবে ১৪ দলীয় জোট অক্ষুণœœ থাকবে। এটা আদর্শিক ঐক্য।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের দুর্নীতি ও লেনদেন নিয়ে জোট শরিকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীকে এসব বিষয়ে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। জবাবে জোট নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে শরিকদের জানান। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়েছে শেখ হাসিনা। দুর্নীতির বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জোট নেত্রী।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে জামায়াতকে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়ায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন একাধিক নেতা। তখন ভবিষ্যতে আর জামায়াতকে কর্মসূচি করতে না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা উঠে। এবং নীতিগতভাবে বিষয়টিতে সকলেই একমত হয়েছেন। বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদলের স¤প্রতি এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকের তীব্র সমালোচনা করেন রাশেদ খান মেনন। বৈঠকে নজিবুল বশর মাইজভাÐারী বিএনপি ও জামায়াতের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি তাদের পদযাত্রায় এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছে যে তারা সন্ত্রাসের পথ এড়াবে না। তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দাবি তোলেন।
তবে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বার্তা দিয়েছেন তা হলো, দেশি-বিদেশি কোনো চাপে নমনীয় না হয়ে নতি স্বীকার না করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করবেন। এবং অতীতের মতো শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে মনোনয়ন দেবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু