ইসলামে আরবি নববর্ষের আগমন ও গুরুত্ব

Daily Inqilab গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

২১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

আমাদের কাছ থেকে ১৪৪৪ হিজরি বিদায় নিয়ে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৫ সমাগত। খোশ আমদেদ হিজরী নববর্ষ ১৪৪৫। ১লা মহরমের মধ্যদিয়ে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৫ এর সূচনা। মুহররম ইসলামী পঞ্জিকা হিজরি সনের প্রথম মাস। ইসলামে এ দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক বিশেষ ও ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী এবং স্মারক। হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবে মেরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে ও তার পূর্বে রোমান, পারসিয়ান ও অন্যান্য জাতির মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা প্রচলিত ছিল। আরবদের মধ্যে কোনো নির্ধারিত বর্ষ গণনা পদ্ধতি ছিল না। বিভিন্ন ঘটনার উপর নির্ভর করে তারিখ বলা হত।
খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে, প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদা হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) খলিফা উমরের (রা.) খেদমতে এ মর্মে পত্র লিখেন যে, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় চিঠি-পত্র কোন সময় , কোন দিনের তা নিরুপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা বিব্রত বোধ করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে। হযরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে হযরত উমর (রা.) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহবান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামি তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। উক্ত পরামর্শ সভায় হযরত উসমান (রা.), হযরত আলী (রা.) সহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওই সভায় ওমর (রা.) সিদ্ধান্ত দেন ইসলামি সন প্রবর্তনের। তবে কোন মাস থেকে বর্ষের সূচনা করা হবে তা নিয়ে পরপস্পরের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রাসুল (সা.)এর জন্মের মাস রবিউল আউয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। আবার কেউ কেউ মত পোষণ করেন রাসুলের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। অন্যান্যের মতে হুজুর (সা.) এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ গণনা করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হযরত উমর (রা.) বললেন, হুজুর (সা.) এর আগমনের মাস থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায় হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের মাস থেকেই খ্রিস্টাব্দের গণনা শুরু করেছিল। তাই রাসলের আগমনের মাস থেকে সূচনা করা হলে বাহ্যত খ্রিস্টানদের অনুসরণ ও সাদৃশ্যতা হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য। পরিশেষে সর্বসম্মতিতে হিজরত থেকেই হিজরী সনের শুরু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার, ১ রা মহররম,২০ জুলাই হিজরী বর্ষের সূচনা হল। অন্যভাবে বললে, জীবনের নির্ধারিত সময় থেকে আরও একটি বছর শেষ হয়ে গেল। এই বর্ষসূচনা আনন্দ-উল্লাস নয়, আত্মজিজ্ঞাসার বার্তা নিয়ে আসে। বিগত বছরের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো পর্যালোচনা করে জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকু ফলপ্রসূ করে তোলার প্রেরণা জাগ্রত করার জন্য এবং আলোকিত জীবন যাপনের একটি উপলক্ষ এই বর্ষসূচনা। সে চান্দ্রবর্ষ হোক কিংবা সৌরবর্ষ। তবে কেবল বর্ষসূচনাই নয়, প্রতিটি মাস, সপ্তাহ, দিন-রাতের আগমন আত্মজিজ্ঞাসার এক একটি উপলক্ষ। হিজরী নববর্ষের সুচনা মাস মহররম। ইসলামের দৃষ্টিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় । এ মাসের রোযা, বিশেষত আশুরার রোযার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাও এমাসে সংঘটিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রা. এই মাসেই শাহাদাত বরণ করেন। হুসাইন রা.-এর শাহাদাত মুসলিম উম্মাহকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে।
মহররম মাস এলে ব্যথিত হয় মুমিন মুসলমানদের হৃদয়। মহররমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য তৈরি করা হয়েছিল। মহররম মাস গুরুত্বপূর্ণ মাস। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। এই মাসকে সন্মানিত মাস হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ হাদিস শরিফে এই মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলা হয়েছে। । আর পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে ‘অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ মাস কে বুঝায়।
আরবি বছরের প্রথম মাস মহররম। মহররম মাসকে আরবের লোকেরা খুবই সন্মান করে। ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই মাসে সংগঠিত হয়েছিল। এই মাসে রোজা রাখার কথা হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)। আরবি নতুন বছর ১৪৪৫ হিজরী নববর্ষ সকলের জীবনে বয়ে আনুক সুখ- শান্তি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি গড়ে উঠুক। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট এই প্রার্থনা করি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
আরও

আরও পড়ুন

গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক

গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক

বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'

বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন

পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের

পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ

পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ

পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়

নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়

জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া

জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল