পুরো দেশ ডেঙ্গুর হটস্পট
২১ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ২১ দিনে এডিস মশা বাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে১০৯ জন। আক্রান্ত হয়েছে ২০৪৬৫ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো ৮৯৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৩ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দেশে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৫৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে জুলাই মাসের ২০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৫৬৯ জন।
দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর দেশে শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। বাংলাদেশে এর আগে এত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। এমনকি সে বছর প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল ডেঙ্গু। ভয়াবহ সে সময়ে সারা দেশে মারাও যায় অনেক। অনেকেই ডেঙ্গু সন্দেহে মারা যায়। শেষমেশ ২৬৬ জন ডেঙ্গু সন্দেহে মারা গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে বলা হয়। কিন্তু মৃতদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর আইসিডিডিআরবি জানায়, এর মধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। সেটিই ছিল দেশে এক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু।
পরবর্তীতে, ২০২১ সালেও মশাবাহিত রোগটিতে মৃত্যু শতাধিক বলে রেকর্ড হয়। সে বছর ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। মৃত্যুহার শনাক্তের তুলনায় সেবার বেশিই ছিল। তবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২০২২ সালে। ৬২ হাজার ৩৮২ জন শনাক্তের পাশাপাশি ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়। সেই রেকর্ড ছাড়াতে পারে চলতি বছর। কেননা এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১২৮ জনের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, জুলাই মাসের আরো বাকি আছে প্রায় ১০ দিন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এমনকি এবার ডেঙ্গুত যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তারা যে শুধু দিনের বেলা মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে এমন নয়। এবার মশা রাতের বেলাও কামড়াচ্ছে। আর তাই যেভাবে সংক্রমন শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। শুধু আক্রান্তই না, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মারা যান ৪৭ জন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্তের পরে প্রথম ৬ মাসে এত মৃত্যু কখনও দেখা যায়নি। তবে জুলাই মাসে ছাড়িয়ে যায় সেই সব পরিসংখ্যান। শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয় বরং দেশের অন্যান্য স্থানেও চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, পুরো বাংলাদেশেই এখন ডেঙ্গুর হটস্পট। আমাদের মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সামনে যেহেতু বৃষ্টি হবে, তাই আগেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানান, ডেঙ্গুর সেরোটাইপ বা ধরন চারটি। এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের ধরন জানতে রাজধানীর ৩০০ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর। নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-২ এ এবং ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-৩ এ। বাকি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী একই সঙ্গে ডেন-২ ও ডেন-৩ আক্রান্ত। ডেন ওয়ান ও ফোরে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, হটস্পট ব্যবস্থায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগী যেসব এলাকা থেকে বেশি আসে, সেখানে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে সেখানে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু এবার যেভাবে ইতোমধ্যেই ছড়িয়েছে তা আতঙ্কজনক। কারণ সারাদেশেই ছড়িয়েছে ডেঙ্গু।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৬ হাজার ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৫৬০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৫১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৪৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৭ হাজার ৬৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২ হাজার ২১১ জন। ঢাকায় ১৩ হাজার ৯৬৪ এবং ঢাকার বাইরে ৮ হাজার ২৪৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড