ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

ভার্মি কম্পোস্টে স্বাবলম্বী কৃষক কাশেম

Daily Inqilab ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে :

২২ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী কৃষক আবুল কাশেম। কেঁচো সার উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন মাশরুম, পানের বরজ, শাক-সবজির বাগান, নার্সারি, মাছ চাষ ও গরুর খামারসহ সমন্বিত কৃষি খামার। কেঁচো সার, মাশরুমসহ খামারে উৎপাদিত শাক সবজি, মাছ ও গরুর দুধ বিক্রি করে প্রবাস ফেরত আবুল কাশেম এখন মাসে আয় করেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

সম্প্রতি মীরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায় পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে দোচালা টিনের ঘর। ঘরের নিচে সিমেন্টের তৈরি ৩৪টি রিং স্ল্যাব। এ সময় কথা হয় আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব রিং স্ল্যাবে ২ বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। রিং স্ল্যাবে গোবর, মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করা হয়। স্ল্যাবে ছেড়ে দেওয়া হয় কেঁচো। তারপর চটের বস্তা দিয়ে স্ল্যাব ঢেকে রাখা হয়।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া ৬টি রিং ও বাকি রিংগুলো নির্জ খরচে এবং ৩ হাজার কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেন। প্রথমে রিং ও ঘর নির্মাণসহ মোট খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এক মাসে উৎপাদন হয় ১০ মণ কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া মাশরুম, নার্সারির চারা, মাছ, গরুর দুধ বিক্রি করে উদ্যোক্তা আবুল কাশেমের এখন মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা। আয়ের অর্থ দিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।

এদিকে আবুল কাশেমের উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। করেরহাট ইউনিয়নের বিশ্বটিলা এলাকার কৃষক শিপন মিয়া জানান, আবুল কাশেমের কেঁচো সার ফসলে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। পাশাপাশি তার সমন্বিত কৃষি খামার আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমাদের দেশে যে হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে, তাতে ধানের চাষ করে লাভ হয় না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। উৎপাদিত জৈব সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি। এছাড়া পিচ হিসেবে অথবা কেজি দরে কেঁচো কিনতে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আসেন। পাশাপাশি মাশরুম উৎপাদন করে খরচের তুলনায় অর্ধেক লাভ করছি। সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করছি শুধুমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী একটি সার। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় উৎকৃষ্টমানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুতে খামারিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে আসছি। স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম ইতোমধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার, মাশরুম উৎপাদন ও সমন্বিত কৃষি খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে যারা বেকার ও হতাশ যুবকদের জন্য প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্বাবলম্বী প্রবীণ কৃষক আবুল কাশেম।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ