নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে শিশুসহ নিহত ১৭ আহত ৩৫
২২ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
দেশের বিভিন্ন জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও আরো ৬০ আহত হয়েছে। এরমধ্যে ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে হানিফ পরিবহনের একটি বাস উল্টে একজন নিহত হয়েছে। বগুড়ার শাজাহানপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে একজন নিহত হয়েছে। কুলাউড়ায় বেপরোয়া অটোরিকশার ধাক্কায় এক যুবকের নিহত হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনÑ
রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসার স্মৃতি নামে একটি যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। এ ঘটনায় আরো অন্তত ৩৫ জনকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে সদর উপজেলার ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি পুকুরে বাসটি নিমজ্জিত হয়। বাসটি গতকাল শনিবার সকালে পাশ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। পথিমধ্যে বরিশাল খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি সদরের ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্নে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীসহ পুকুরে পড়ে যায়।
এদিকে এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পান্না মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৪৫), একই উপজেলার মুজাফফর আলী মোল্লার ছেলে ছালাম মোল্লা (৬০), ঝালকাঠির নিজামিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), মেয়ে খুসবু আক্তার (১৭), একই উপজেলার বলাই বাড়ি এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), ভান্ডারিয়া পৌরসভার ছালাম মোল্লার ছেলে শাহিন মোল্লা (২৫) ও লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), ছেলে আবুল কালাম, ভান্ডারিয়ার পশরবুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া (৬), ভান্ডারিয়ার শিয়ালকাঠি গ্রামের মৃত ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), বরিশালের চরবোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (৮), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের রিপন হোসেনের মেয়ে রিপা মনি (২) ও স্ত্রী আইরিন আক্তার (২২), ঝালকাঠির বাঁশবুনিয়া গ্রামের জিয়াউর রহমান খোকনের স্ত্রী ছালমা আক্তার মিতা (৪২)।
প্রত্যক্ষদর্শী আহত এক বাসের যাত্রী ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ভা-ারিয়া গ্রামের মো. রাসেল মোল্লা (৩৫) বলেন, আমি বাসের চালকের পিছনের সিটে বসা ছিলাম। বাসের চালক যাত্রার শুরু থেকেই বাড়িতে যাত্রী উঠানোর জন্য বারবার সুপারভাইজারপর সাথে কথা বলতেছিল। গাড়ি চালনায় তার মনোসংযোগ ছিল না। সদরের ছত্রাকান্দা পার হওয়ার পরেই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধানসিড়ি ইউনিয়ন সংলগ্ন একটি পুকুরে পড়ে ডুবে যায়। চালকের ভুলেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার বাবাকে দিয়ে বরিশালে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলাম। এই ঘটনায় আমার বাবা সালাম মোল্লা (৭৫) নিহত হয়েছে। আমার বড় ভাই মো. শাহিন (৪০) এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, রাজাপুর বলাই বাড়ি একই পরিবারের তিনজন, নিজামিয়ার ২ জন, বলাইবাড়ির নয়ন পিতা নুরুল ইসলাম, নয়নের বোন ও তার ভাগ্নী নিহত হয়েছে। অন্যান্যের পরিচয় এখন ও মেলেনি।
রাজাপুর ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত সাটেশন মাস্টার আবুল কালাম জানান, ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছি, অলোকিক ভাবে ৫-৭ বছরের বাচ্চাকে জীবিত উদ্ধার করেছি, পুকরে আর ও লাশ আছে কিনা? এজন্য পুকুর সেচ করা হচ্ছে। মাটিতে পুতে থাকতে পারে। বাসটি পুকুর থেকে উঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা দীন মোহাম্মদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ জনের লাশ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। এছাড়াও ২০ জন আহত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগীরা অতিরিক্ত পানি খেয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় আছেন। তাদেরকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় এখনো মেলেনি।
ঝালকাঠি সদর থানার এসআই গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের রেকার দিয়ে বাসটি উত্তোলন করা হয়েছে। বাসের মধ্যে আর কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও র্যাব সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হবে। দুর্ঘটনার বিষয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে হানিফ পরিবহনের একটি বাস উল্টে একজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১০ জন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার এক্সপ্রেসওয়ের মালিগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম হাবিব (৪৫)। তিনি হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এমরান আলী জানান, রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে বরিশালের উদ্দ্যেশে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে দোলা পরিবহনের একটি বাস ওভারটেক করার সময় হানিফ পরিবহনকে চাপ দিলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হানিফ পরিবহনের বাসটি উল্টে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই হানিফ পরিবহনের সুপারভাইভার হাবিব (৪৫) মারা যান। আহত হন আরো ১০ যাত্রী। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ার শাজাহানপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে রোকসানা খাতুন (৩৫) নামের এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে শিশুসহ আহত হয়েছেন আরো ১৫ জন। ধউপজেলার জামাদার পুকুরের নুনদহ এলাকায় বগুড়া-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কে গতকাল শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনাকবলিত গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসটি বরিশাল থেকে রংপুরের দিকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
নিহত রোকসানা খাতুন বরিশাল নগরীর সজীব মিয়ার স্ত্রী। তিনি স্বামীর বাড়ি বরিশাল থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন।
আহতরা হলেন- নাটোরের রামনগর এলাকার রোমান, কাকলি, বরিশালের নিশি, ইভা, আরতি, মুন্নি, রাজবাড়ীর হাদী, হারুন অর রশীদ, প্রবণ, লালমনিরহাটের সুজন, রিয়া, বগুড়ার ফজলুল হক, আব্দুস সবুর, টুম্পা ও অজ্ঞাত নামা মহিলা।
দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে বগুড়া কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার ওসি আব্বাস আলী জানান, বরিশাল থেকে গোল্ডেন লাইনের একটি বাস রংপুরে যাচ্ছিলো। পথে নুনদহ এলাকায় অজ্ঞাত একটি গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাসটি মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা বাসে থাকা ১৬ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকসানাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও আহতরা শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ায় বেপরোয়া অটোরিকশার ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে পৌর শহরস্থ দক্ষিণ বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মহসিন আহমেদ (৩৮) উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিংগাজিয়া গাজীপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি পৌর শহরের উছলাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন।
জানা যায়, শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে পৌর শহরের ফুটবল খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মহসীন। এসময় পেছন থেকে একটি বেপরোয়া অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দেয়। এতে মাথায় মারাত্মকভাবে জখম হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কুলাউড়া থানার এসআই মো. আব্দুল আলিম জানান, ঘাতক অটোরিকশা ও চালককে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক