চট্টগ্রাম নগরীর ২১টি ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র
২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০৩ এএম
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ২১টিতেই মিলেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৪ জন। এ নিয়ে চলতি মাসে ১ হাজার ৭৭৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া এ দিন আরও একজনের মৃত্যুর হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৯ জন রোগী। এবছর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে চলতি জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মিলেছে ১ হাজার ৭৭৬ জন। অন্যদিকে এবছর ডেঙ্গুতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসেই মারা গেছেন ১৪ জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও যতœবান হওয়া জরুরি। যেকোনো সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এ রোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নগরের হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডেই মিলেছে এডিস মশার প্রজননস্থল। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের পাশাপাশি কোন কোন ওয়ার্ডের লার্ভার ঘনত্বও অনেক বেশি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপর পরিচালিত স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। গতকাল জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে সোমবার প্রতিবেদন সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। যেখানে আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চসিককে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়।
গত ৮ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিন নগরীতে এডিস মশার জরিপ পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চার সদস্যের একটি দল। এসময় তারা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে মশার প্রজননস্থল শনাক্তের পাশাপাশি এডিস লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করেন। যাতে সিটি কর্পোরেশনের ২১টি ওয়ার্ডের ৩২০ টি বাড়ি এবং ৪০০টি পাত্রের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যাতে বাসা বাড়ির পাশাপাশি পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র ও ফুলের টবে সবচেয়ে বেশি এডিসের উপস্থিতি পায় তারা। জরিপে বলা হয়, ৩২০টি বাড়ির মধ্যে ৯৭টিতে এডিসে লার্ভা পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে প্লাস্টিক কন্টেইনারের মধ্যে। ২১টি ওয়ার্ডের ৪০০ কন্টেইনারের মধ্যে ১৪৮টিতেই লার্ভা শনাক্ত হয়েছে। যা ৩৭ শতাংশ। এরবাইরে পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিক কন্টিনারের জমানো পানিতে সর্বোচ্চ শতকরা ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ, পরিত্যক্ত টায়ারে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্লাস্টিক ড্রামে শতকরা ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মাটির পাত্রে শতকরা ৮ দশমিক ১১ শতাংশ, পানির হাউস, ফুলের টব ও এলুমিনিয়াম সিটে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্লাস্টিকের বালতিতে ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং লিফটের গর্তে জমানো শতকরা ২ দশমিক ৭ শতাংশ এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চসিককে ৯ দফা সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য ডা. মো. মহিউদ্দিন। এরমধ্যে অফিস আদালত ও বাসাবিড়র আঙিনা ছাদ ও আশপাশ এলাকা সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং কোন ধরণের পাত্রে ৩ থেকে ৪ দিন বেশি পানি জমতে না দেয়া। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিলবোর্ড প্রদর্শন, নিয়মিত মাইকিং, লিফলেট বা পোস্টার বিতরণ এবং কাউন্সেলিং করা, জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশার প্রজনন স্থান নির্মূল করা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম যথাযথভাবে করা হলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার কম হবে, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরব্যাপী জরিপ পরিচালনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ, মশক নিধনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা, লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড সময়োপযোগী প্রয়োগ করা, সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এডালটিসাইড ফগিং করা, দক্ষ মশক নিধন কর্মীর দ্বারা কীটনাশক ছিটানোর সময় মনিটরিং টিম গঠন করে সুপারভিশন জোরদার করা এবং চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনপূর্বক আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইন ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম করার সুপারিশ করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ