যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ছেন হুস সেন
২৬ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৬ এএম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বলী হলেন কম্বোডিয়ার কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক হুন সেন। সাবেক এই খেমাররুজ নেতা ১৯৮৫ সাল থেকে কঠোর হাতে কম্বোডিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে রেখেছেন। জনগণের ভোটের অধিকার পায়ে দলিয়ে গত রোববার অনুষ্ঠিত ‘পাতানো নির্বাচনে’ কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) জয়ী হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুস সেন এবং তার দলের নেতাদের ওপর নির্বাচন কারচুপির অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় বিরোধী দল এবং জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন করে টিকে থাকলেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় টিকতে পারেননি। পাতানো নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দু’দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ৭০ বছর বয়সী হুন সেন গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, জনগণকে বোঝার জন্য বলছি, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর দায়িত্ব পালন করব না। এখন তার বড় ছেলে হুন মানেটকে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। উল্লেখ, স্বৈরশাসক হুন সেন জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় নিবন্ধনে ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ক্যান্ডললাইট পার্টিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বলছে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। প্রধান বিরোধী দলকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। এতে মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিফলন হয়নি।
সাবেক খেমাররুজ নেতা হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে কঠোর হাতে কম্বোডিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে রাখেন। ক্ষমতার প্রায় চার দশকে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী যেকোনো বিরোধী শক্তি বা বিরোধী দল নিষিদ্ধ করেছেন। তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছেন। জনগণের বাক্স্বাধীনতা হরণ করেছেন। কম্বোডিয়া বিরোধী দল ছাড়া একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করায় কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সেখানে বিদেশি কিছু সহায়তা কর্মসূচিও স্থগিত করেছে ওয়াশিংটন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যেমন সম্পর্ক তেমন সম্পর্ক কম্বোডিয়ার সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ লোক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন এবং কম্বোডিয়ার ৩ লাখ লোক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। গত রোববার পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নিরঙ্কুশ বিজয় ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সিপিপি কোনো কার্যকর প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি। তাই ওয়াশিংটন ‘বিচলিত’। কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ক্ষমতাসীন সিপিপি দলের কোনো শক্ত বিরোধী দল নির্বাচনে ছিল না। মিলার আরো জানান, নির্বাচনের আগে কম্বোডিয়ার সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে হুমকি দিয়েছে ও হয়রানি করে দেশের সংবিধানের মর্যাদাক্ষুন্ন করা হয়েছে। এছাড়া কম্বোডিয়ার নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়নি। এর পালটা পদক্ষেপ হিসেবে যারা গণতন্ত্রের মর্যাদাক্ষুন্ন করেছে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি সহায়তাও স্থগিত করা হয়েছে। মিলার কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত বিচারের অবসান ও সরকারি সমালোচকদের মুক্তি এবং ‘দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানের উন্নতি’ করার জন্য স্বাধীন মিডিয়াকে হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিন যুগের বেশি সময় ধরে কম্বোডিয়া শাসন করা সুচতুর হুন সেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বলী (পদত্যাগ) হলেও বড় ছেলে হুন মানেতকে ক্ষমতায় অভিষিক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার হাতে আগামী ১০ আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন। হুন মানেত এখন কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে আছেন। সিপিপি ও হুন সেনের শাসন চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে কম্বোডিয়ার ক্যান্ডেললাইট পার্টি। তবে এবারের নির্বাচনে এ দল অংশ নিতে পারেনি। তবে নির্বাচনে অংশ নেয় হুন সেন অনুগত তাবেদার ১৭টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু তারা খুবই ছোট দল অথবা নতুন দল অথবা সিপিপির সঙ্গে জোটে আছে।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না বলে এর নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম্বোডিয়ায় নাগরিক সমাজের কথা বলার জায়গা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। তাদের সেই জায়গাটাকে নিঃশ্বেষ করে দিয়েছেন কর্তৃত্ববাদী হুন সেন। অব্যাহতভাবে বিরোধীদের দমন চালিয়ে ভেঙেচুরে দিতে তিনি ২০১৭ সালে আদালতকে ব্যবহার করেছেন। বিলুপ্ত করে দিয়েছেন আরেকটি জনপ্রিয় দল সিএনআরপি। এর নেতাদেরকে হয়তো জেলে পাঠিয়েছেন, না হয় নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। হুন সেন ক্রমবর্ধমান হারে ভিন্ন মতাবলম্বী এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার কণ্ঠকে গলাটিপে ধরেছেন। দেশটির সবচেয়ে নিরপেক্ষ মিডিয়াকে বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ করে দেয়ার হুমকিতে আছে অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো, ট্রেড ইউনিয়ন ও এনজিওগুলো।
এর আগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে চারটি দেশের ৩৯ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশ চারটি হলো নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিকারাগুয়ার ১৩ জন, গুয়াতেমালার ১০ জন, হন্ডুরাসের ১০ জন ও এল সালভাদরের ৬ জনের নাম রয়েছে। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জনগণের ওপর কর্তৃত্ব নয় : সিনিয়র সচিব
তারাকান্দায় কালিয়ান নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা
মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক শিক্ষার্থী
আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে চাঁদাবাজি মুক্ত করতে চাই
ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে
আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স
সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা
খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট
আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'
ভারত দলে ফিরলেন শামি
কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন
বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত
সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি: ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রসচিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার
ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত
আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা
রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি
রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক