ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
প্রধানমন্ত্রী রংপুর যাচ্ছেন ২ আগস্ট তিস্তা মহাপরিকল্পনা আন্তর্জাতিক রাজনীতির গেম চেঞ্জার অর্ধশত বছরেও সুরাহা হয়নি তিস্তার পানি বণ্টন তিস্তা ঘিরে চীনের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আগ্রহ প্রকাশ আশায় বুক বাঁধছে রংপুর বিভাগের মানুষ

চমক দেখাবেন শেখ হাসিনা

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

৩০ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:২২ এএম

অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেও পথ খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ২০১১ সালে চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও শেষ মুহূর্তে চুক্তি হয়নি।
ভারতের তরফ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া না মেলায় অনেকটাই নিষ্ফল হয়েছে সে প্রচেষ্টা। তিস্তা নদীর উজানে খাল ও ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ভারত তিস্তার প্রায় সবটুকু পানিই প্রত্যাহার করে আসছে। আগামী বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর সফরকালে চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তয়ানের ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এমন আভাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, তিস্তা প্রকল্প রংপুরের মানুষের প্রাণের দাবি। প্রধানমন্ত্রী এবার সফরে এসে চমক দেখাবেন। এমন ইংগিত দিয়েছের রংপুর বিভাগের দায়িত্বরত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি। তিনি বলেছেন, রংপুরের মানুষকে এবার প্রধানমন্ত্রী এমন চমক দেখাবেন যা তারা কল্পনাও করেননি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চাইতে হয় না, তিনি নিজেই খোঁজ নিয়ে দেন। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মুখে একথা শুনে রংপুরের তিস্তাপাড়ের লাখ লাখ মানুষ ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তায়নের সিদ্ধান্তের ঘোষণা শোনার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।
পানিসঙ্কটে শুষ্ক মৌসুমে কৃষির প্রয়োজনীয় সেচে বিপাকে পড়েন উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষক। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে তিস্তার পাহাড়ি ঢলের তোপের মুখে ভারত তার ব্যারেজগুলোর মুখ খুলে দেয়ায় সেখান থেকে নেমে আসা পানিতে প্রতিবছরই বন্যায় প্লাবিত হয় এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। খরা মৌসুমে পানি না পাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে অতিপ্রবাহের কারণে তিস্তা নদী গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য। পাশাপাশি বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মাঝেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিস্তাকে ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনাসহ নদীকে ঘিরে নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। চীনের এ আগ্রহে হঠাৎ নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে তিস্তানদী। এ নিয়ে এখন সরগরম হয়ে উঠেছে রংপুরের রাজনীতি।
এদিকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অনেক পুরোনো। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরপরই ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, তিস্তার পানির ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ ও ৩৯ শতাংশ ভারতের প্রাপ্য ছিল। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ পানি ছিল নদীর নাব্য বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে এর মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোনো চুক্তি হয়নি।
তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চার বছর পর রংপুরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বুধবার রংপুরে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও বিশেষ করে এ বিভাগের ৮ জেলায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার, উন্নয়ন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা বৃদ্ধি ঘোষণার তুলবেন রংপুর বিভাগের মানুষ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রংপুরবাসীর নানা প্রত্যাশা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আশায় বুক বাঁধছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও তিস্তাপাড়ের মানুষ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণার দাবি জানাবে। তিস্তাপাড়ের সাধারণ মানুষ এবং তিস্তা নিয়ে যারা আন্দোলন করে আসছেন, তাদের আশা, প্রধানমন্ত্রী রংপুরের জনসভায় বহু আকাক্সিক্ষত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সুখবর নিশ্চয়ই দেবেন। কারণ, পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় তিস্তা এখন উত্তরের মানুষের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বন্যা এবং খরায় নদীপাড়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তিস্তার দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবিব রানা ইনকিলাবকে বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী রংপুরের তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় দুটি জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর পর তিনি আবারও রংপুরে আসছেন। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী তিস্তা নদী নিয়ে সুখবর দেবেন এটিই আমাদের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবর পৌঁছে গেছে তিস্তার চরাঞ্চলেও। সাম্প্রতিক বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগে থাকা পরিবারগুলো এতে আশায় বুক বেঁধেছে।
প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। গত ২০১৪ সাল থেকে ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার রাজাহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা, গাইবান্দার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত পাঁচ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল জিলা স্কুল মাঠ গত বুধবার পরিদর্শনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের জন্য অনেক সুখবর দেবেন। তার আগমনের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, অর্থনৈতিক অঞ্চল আর গ্যাস সংযোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করাসহ চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ ত্বরান্বিত হবে। আর এসব উন্নয়নের সুখবর প্রধানমন্ত্রী এই সফরে নিজের মুখে দেবেন। মন্ত্রী বলেন, আজ থেকে ১১ বছর আগে এই মাঠেই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং তিনি তা পালনও করেছেন। মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখেই দেশের বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়, তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে।
গত ২০১৭ সালে ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার এসকেএসের বাজার, পূর্ব ইচলী ও সিরাজুল মার্কেটের পাশ দিয়ে তিস্তা নদীর নতুন প্রবাহ তৈরি হয়। ওই বছর রেকর্ড পরিমাণ বন্যায় তিস্তার চর ও দ্বীপচর থেকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় স্পিডবোটে করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে কুড়িগ্রাম রংপুরসহ অন্যান্য জেলার বন্যা পর্যবেক্ষণ করেন সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। তিস্তা খনন না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছর পলি পড়ছে। এতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। পরবর্তীতে বর্ষায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় নতুন নতুন দিক থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, অবকাঠামো নদীতে চলে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে তিস্তার বামতীরে থাকা অধিবাসীরা তিস্তার কবল থেকে রক্ষা পেতে বাঁধের দাবি করে আসছে।
এদিকে গত বছরের ৯ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা সেতুসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিস্তাপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলাসহ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি এসেছেন বলে সেই সময় চীনা রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের ইতিবাচক সাড়ার কথা ব্যক্ত করেন।
চীনা রাষ্ট্রদূতের তিস্তা এলাকা পরিদর্শন দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল তিস্তাপাড়ের মানুষ। কিন্তু ৯ মাস পার হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সর্বদলীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধানসহ তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর গত ১ জুন রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করা হয়। গত ১৩ জুলাই ও ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে দেখা করে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক সাড়ার বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পুত্রবধূ। ২০১১ থেকে ২০১২ সালের দিকে যখন ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তি হলো না, তখন তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেই সময় তিস্তাপারের লক্ষাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যÑ সেটি এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। রংপুর বিভাগে দরিদ্রতার হার সর্বোচ্চ আর বরাদ্দ সর্বনিম্ন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অববাহিকার এক কোটি মানুষ উপকৃত হবে। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিস্তাপাড়ের ১৩ থেকে ১৪টি উপজেলা ও ১১টি সংসদীয় আসনের ২৫ থেকে ৩০ লাখ ভোটার প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা আনবে। তিনি বলেন, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও তিস্তাপাড়ের মানুষ ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণার দাবি জানাবে।
রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ ইনকিলাবকে বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে যুগের পর যুগ তিস্তাপাড়ের মানুষকে খরা-বন্যা ও ভাঙনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হবে। মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে, বাড়ছে নদীশাসনের চ্যালেঞ্জ। অপরদিকে তিস্তার প্রবাহ ঠিক না থাকলে সাগরের লবণপানি লোকালয়ে উঠে আসবে। এতে ফসল আবাদ, মাছ চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই আমরা চাই উত্তরের মানুষের কথা ভেবে এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে রংপুরবাসীর স্বপ্নকে একধাপ এগিয়ে নেবেন।
তিস্তা নদীর উজানে খাল ও ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ভারত তিস্তার প্রায় সবটুকু পানিই প্রত্যাহার করে আসছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষির প্রয়োজনীয় সেচে বিপাকে পড়েন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে তিস্তার পাহাড়ি ঢলের তোপের মুখে ভারত তার ব্যারেজগুলোর মুখ খুলে দেয়ায় সেখান থেকে নেমে আসা পানিতে প্রতিবছরই বন্যায় প্লাবিত হয় এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। খরা মৌসুমে পানি না পাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে অতিপ্রবাহের কারণে তিস্তা নদী গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য। পাশাপাশি বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মাঝেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিস্তাকে ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনাসহ নদীকে ঘিরে নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কথা জানায় বেইজিং। চীনের এ আগ্রহে হঠাৎ করেই নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে তিস্তা নদী।
ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদী তিস্তা
তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। চীনের তিব্বত সীমান্তবর্তী ভারতের সিকিমে হিমালয়ের ৫ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তিস্তা খাংগসে হিমবাহ থেকে নদীটির সৃষ্টি হয়েছে। সিকিমের পার্বত্য এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়। তিস্তা নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার, যার ১১৫ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশ ভূখ-ে অবস্থিত।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান

ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব

আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের

আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের