সংস্কার কাজে বন্ধ কালুরঘাট সেতু
০১ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
সংস্কার কাজে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প হিসেবে ফেরি এবং কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কর্ণফুলী নদীর ওপর শত বছরের পুরাতন এ সেতুর দুই প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় গতকাল সকালে। নদীর ওই অংশ পারাপারের জন্য চালু হয়েছে ফেরি সার্ভিস।
তবে গতকাল প্রথম দিনেই প্রবল জোয়ারে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও ফেরিতে উঠার সংযোগ সড়ক, বেলি ব্রিজ এবং পল্টুন তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। ফেরিতে উঠা নামার পথে হাটু থেকে কোমর সমান পানি। ফেরি থেকে পানিতেই নামিয়ে দেওয়ায় হয় যানবাহন। লোকজনকেও কোমর সমান পানি ভেঙ্গে পার হতে হয়। পানিতে ডুবে বিকল হয়ে যায় বেশ কয়েকটি অটোরিকশা।
যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে দুটি ফেরি প্রস্তুত থাকলেও গতকাল একটি চালু করা হয়। তাতে সেতুর দুই প্রান্তে তীব্র যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হয়। মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয় জনসাধারণকে। ভিজে কাপড় পরেই কর্মস্থলে যেতে হয়েছে কর্মজীবীদের। জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া পল্টুন পাড়ি দিয়েই লোকজনকে উঠতে হয় তীরে। নদীর দুই তীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। ফলে দুই তীরেই কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট।
স্থানীয়রা জানান, নদীতে জোয়ারের কারণে এবং ভাটার সময়ও পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ফেরি সহজে চলাচল করতে পারছে না। ফেরির প্রবেশমুখের আরও অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ গজ দূরে সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে টোলবাক্স। গাড়ি প্রবেশের সময় সেখানে দাঁড়িয়ে প্রথমে টাকা জমা দিয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে। টোল নেওয়ার কাজও চলছে ধীরগতিতে। ফলে যানবাহন আটকে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, ধারণক্ষমতা অনুযায়ী গাড়ি পেতে ফেরিকে অপেক্ষা করতে হয় কমপক্ষে একঘণ্টা কিংবা তারও বেশি। একই অবস্থা নদীর অপর তীর বোয়ালখালী অংশেও। গাড়ি নিয়ে অপর তীরে গিয়ে সেই গাড়ি নামিয়ে সেখান থেকে আরও যানবাহন নিয়ে ফিরতে ফেরির একবার যাওয়া-আসায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এতে লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের কয়েক লাখ মানুষের মহানগরীতে যাতায়াতের মূল মাধ্যম কালুরঘাট সেতু। সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এ দুই উপজেলার লাখো মানুষ। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারা মানুষের পাশাপাশি রোগীদের দুর্ভোগের চিত্রও দেখা যায় সেতু এলাকায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে প্রবল জোয়ারের কারণে ফেরি এলাকা তলিয়ে গেছে। তাতে প্রথম দিনে ফেরি পারাপারে কিছুটা দুর্ভোগ হয়েছে। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল কারণে পল্টুন উচুঁ করা যায়নি। কারণ পল্টুন উচুঁ হলে ভাটার সময় ফেরি চলাচল করা যাবে না। এমনিতেই ভাটার সময় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে ধীরে ধীরে ফেরি পারাপার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও জানান পিন্টু চাকমা।
কক্সবাজারমুখি রেল চলাচলের জন্য ৪৩ কোটি টাকায় বড় ধরনের সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর এ কাজের জন্য সেতু যে বন্ধ রাখা হবে, সে ঘোষণা এসেছিল আগেই। সেজন্য গত ২০ জুলাই থেকে ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়। তৈরি করা হয় দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরির টোলও নির্ধারণ করে দেয়। দুটি ফেরি উভয়মুখী চলাচল করবে এবং একটি ফেরি ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকবে। ফেরিতে যানবাহন পারাপারে আকার ভেদে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা থেকে ৫৬৫ টাকা।
সওজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ৫৬৫ টাকা টোল দিতে হবে ট্রেইলার পারাপারের জন্য। বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ৪৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২২৫ টাকা, মিনি ট্রাকে ১৭০ টাকা দিতে হবে। বড় বাস পারাপারে ২০৫ টাকা; মিনি বাস ও কোস্টারে ১১৫ টাকা; মাইক্রোবাস, পিকাপ, জিপ ৯০ টাকা; কার ৫৫ টাকা; ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ১৩৫ টাকা; তিন চাকার অটোরিকশা ২৫ টাকা; মোটর সাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল ৫ টাকা দিতে হবে।
সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেনও চলে। চট্টগ্রাম থেকে যখন কক্সবাজারে ট্রেন যাবে, এই কালুরঘাট সেতু দিয়েই কর্ণফুলী পার হতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালুর আশা করেছে রেলওয়ে। কক্সবাজারে রেলস্টেশন নির্মাণসহ প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কথা ছিল জুনেই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। কিন্তু টেন্ডারসহ নানা প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হয়েছে আগস্টে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করত দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলত। ৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
২০১০ সালে তৃতীয় কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল। কালুরঘাটে একটি নতুন সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের পনের বছর পার হলেও সেই সেতু আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা