ক্যামেরা ট্রায়ালে সাজা দেয়ার নীল নকশা করছে সরকার : বিএনপি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়েদা রহমানকে ক্যামেরা ট্রায়ালে সরকার সাজার দেয়ার নীল নকশা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের লাখ লাখ মামলার জট থাকলেও তাদের (তারেকে রহমান-জোবায়দা রহমান) এই মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাক্ষী নেয়া হয়েছে। আমাদের আইনজীবীরা এই ধরনের বিচারকাজের বৈধ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকার দলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আদালত কক্ষে থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিচারের ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মামলায় রায় ঘোষণার একদিন আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের নীল-নকশায় পরিচালিত এই তথাকথিত বিচার প্রক্রিয়ায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানকে ফরমায়েসি রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হতে পারে। অতীতে বেগম খালেদা জিয়াসহ আমাদের অনেক নেতাকে ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদেরকে ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা দেয়ার এই চক্রান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এতকিছুর পরেও দেশের মানুষ ন্যায় বিচার আশা করে। যদি অন্যায়ভাবে কোনো কিছু করা হয় তবে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের সর্বশেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যাবে, আস্থা হারাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহে আমরা আশঙ্কা করছি যে, আমাদের প্রিয় নেতা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানকে সরকারি নীল নকশায় মিথ্যা মামলায় হয়তবা সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ এই মামলা চলার মতো আইনগত কোনো উপাদানই নেই। কারণ তারেক রহমানের সম্পদ বিবরণীয় ২০০৭ সালে জমা দেয়া হয়েছিলো, তা পুরোপুরিভাবে আয়কর জমা দেয়া হয়েছিলো। পাশাপাশি ডা. জোবায়েদা রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হচ্ছে যে, ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর এই এফডিআর মামলা দায়েরের আগেই ২০০৫-০৪ অর্থ বছরে ট্যাক্স রিটার্ন দেয়া হয়েছিলো।
তারেক রহমানের মামলা ও আন্দোলনের কোন সম্পর্ক আছে কিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই সম্পর্ক আছে। যখনই তারেক রহমান সাহেব অ্যাকটিভ হয়েছেন, দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ঠিক তখনই অতি দ্রুততার সঙ্গে এই মামলাকে সামনে নিয়ে এসে মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করে এই মামলা শেষ করা হচ্ছে। এটা হচ্ছে, পুরোপুরিভাবে একেবারে পরিকল্পিতভাবে তাকে সাজা দেয়ার চেষ্টা। শুধু এটা নয়, তালিকা করা হয়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের যে, অতি দ্রুততার সঙ্গে মামলাগুলো শেষ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে লিখিতভাবে। যে প্রক্রিয়াটা প্রজেক্টটা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের আগেই বিএনপির বা বিরোধী দলের নেতারা যারা নির্বাচন করেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া আর একই সঙ্গে মূল নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলা, এটা হচ্ছে তাদের লক্ষ্যে। এটা করে তো কোনো লাভ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এই সমস্ত ঝারি-জুরি সব তারা বুঝে গেছে। তারই ফলোশ্রুতিতে আপনারা দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ রাজপথে আসছে, সমবেত হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের জন্য তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা এখন ছায়া (তারেক রহমান ও তার পরিবারে) দেখলেও ভয় পায়। এখানে ডা. জোবায়েদা রহমানের নামের পেছনে রহমান, যেহেতু তারেক রহমানে স্ত্রী, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধুৃ সুতরাং তাকেও কি করে দূরে রাখা যায় রাজনীতির সম্ভবনা থেকে সেটাও ওদের এই প্রক্রিয়ার অংশ। জোবায়েদা রহমানের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দেখি না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সব মিলিয়ে একটা জিজ্ঞাসা কাজ করছে এখানে।
রায়ে আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে না মন্তব্য করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এটা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, এরা (সরকার) বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছে। এরা এখন বিচার ব্যবস্থাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে এটা (সাজা) আন্দোলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এজন্য প্রভাব ফেলবে না যে, মানুষ বুঝে গেছে এই সমস্ত রায়-টায় দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
দুদুককে বিরোধী দলীয় দমন কমিশন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানই নয়, বিরোধী দল দমন কমিশনের পরিণত হয়েছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে বিচারের নামে প্রহসন প্রত্যক্ষ করছি। ইতোপূর্বে আমাদের দলীয় প্রধান দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। তাকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কারান্তরীণ এবং এখন গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। বিগত ১৪ বছরে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে আসামী করা হয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। মিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
এটিকে মূল নেতৃত্বকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দিক নির্দেশনাদানকারী তরুন প্রজন্মের তরুন নেতা বাংলাদেশের মানুষের আশা-ভরসার স্থল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করা হয়েছে। আবার নতুন করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানসহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। ইতোমধ্যে আমাদের দুইজন সিনিয়র নেতাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহকে সাজা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে পুনরায় একদলীয় বাকশালে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
কুমারখালীতে রাতের আঁধারে সড়কের অর্ধশতাধিক গাছ কর্তন
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
আরও

আরও পড়ুন

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

পাকিস্তান থেকে জাহাজে এবার যা যা এসেছে

পাকিস্তান থেকে জাহাজে এবার যা যা এসেছে

জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু

জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি

ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২

ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়

ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু

ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে

কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি

কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও   ১৪ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি

ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী

আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে