পদ্মা ও কির্তনখোলায় নদী শাসন সম্পন্ন করল খুলনা শিপইয়ার্ড
০২ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৬ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
দেশের সর্ববৃহৎ নদীভাঙন রোধ প্রকল্প সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করল বাংলাদেশ নৌ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত খুলনা শিপইয়ার্ড। দেড় সহস্রাধিক কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও বরিশালের কির্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার ভাঙন রোধ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের ফলে বিশাল জনপদ খরস্রোতো দুটি নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেল। নিরাপদ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা ও বিপুল ফসলি জমি। এর ফলে বরিশাল মহানগর সন্নিহিত একাধিক ডকইয়ার্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ফেরিঘাট ছাড়াও সিটি করপোরেশনের পানি শোধনাগারসহ বিপুল স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীগণ জানিয়েছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ক্রয় নীতিমালার ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড শরীয়তপুরের নড়িয়াতে প্রায় ১০ কিলিামিটার দীর্ঘ বৃহৎ এ নদী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। দেশে পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদী শাষণের পরে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া এলাকার প্রকল্পটিই অপর একক বৃহৎ প্রকল্প। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির পাশাপাশি প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীর পাশে কির্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধ প্রকল্পটিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। বরিশালের প্রকল্পটির আওতায় কির্তনখোলার ভাঙন থেকে মহানগর পানি শোধনাগারসহ বেলতলা ফেরিঘাট ও চরবাড়ীয়ার ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তির আওতায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে প্রথমে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার চুক্তি সম্পাদন হয়। পরবর্তিতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৩২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ৩ কোটি ৮ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করে ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে।
এছাড়া ভাঙনকবলিত শরীয়তপুরের ঠাকুর বাজার, বাঁশতলা, কুন্ডের চর সংলগ্ন প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার ২১ লাখ সিসি ব্লক, ৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ৩০ সেমি উচ্চতার ৪.৮৫ লাখ এবং ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার প্রায় ১৬ লাখ সিসি ব্লক দিয়ে পদ্মা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনকবিলত এলাকার নদী তীরে প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রায় ৬২ লাখ জিও ব্যাগ ফেলার পরে তার উপর বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৬২ লাখ সিসি ব্লক সন্নিবেশ করে ভয়াল পদ্মার ভাঙন থেকে ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত প্রায় ৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের মুখে ইতোমধ্যে হাসি ফুটে উঠছে। ভাঙন প্রতিরোধ এলাকায় ইতোমধ্যে পর্যটক আকর্ষণেও নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিদিন আশেপাশের এলাকা ছাড়াও দুর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ পদ্মা পাড়ে বেড়াতে আসছেন। নিকট অতিতে যে ভয়াল পদ্মার নাম শুনলে যেকোনো মানুষ আঁতকে উঠতেন, সেখানে এখন প্রশান্তি ও বিনোদনের স্থান খুঁজে পাচ্ছেন সব বয়সি মানুষ। খরস্রোতা সে পদ্মা এখন সবার চোখ জুড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান সিরাজ জানান, দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ নদী শাসন প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পদ্মার মতো ভয়াল ও খরস্রোতা নদীর ভাঙন রোধ ছিল অত্যন্ত দুরুহ বিষয়। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের রহমতে আমরা এ চ্যলেঞ্জ অতিক্রম করেছি’ বলে জানান তিনি। ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন এলাকায় নতুন করে কোনো বিপত্তি সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান প্রধান প্রকৌশলী।
এদিকে বরিশাল মহানগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে চরবাড়ীয়া হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে ২০৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি ক্রয় নীতিমালার ‘ডিটিএম’ পদ্ধতির আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় বরিশালের কির্তনখোলা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় পৌনে ৫ লাখ জিও ব্যাগ সন্নিবেশ করে তার উপরে ১২ লাখ ২০ হাজার সিসি ব্লক ফেরে নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পাশাপাশি ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে কির্তনখোলা নদীর প্রবাহ নিরাপদ এলাকায় ঘুরিয়ে দিতে ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ২৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩শ’ মিটার ‘সীট পাইলিং’ কাজও সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
ফলে ইতোমধ্যে খরস্রোতা কির্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও সদর উপজেলার চরবাড়ীয়ার বিশাল জনপদ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসহ ফসলি জমি কির্তনখোলার ভাঙন থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এছাড়া আরো ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্যাকেজে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চরকাউয়া থেকে উত্তরে সাহেবের হাট চ্যানেলের মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন। মোট ৮টি প্যাকেজের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়সহ মহানগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তে কির্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাধা না থাকলেও গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদকে মানুষ নির্বাচনে আসতে দেবে না : আখতার হোসেন
সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ!
শিল্পকলায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ভাস্কর্য প্রদর্শনী
এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসি
সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক ইকবাল হোসাইন
সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'