গারো পাহাড়ে কফি চাষের অপার সম্ভাবনা
০৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৯ পিএম
সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলা (উত্তর) ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়িসহ গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কফি পানীয় হিসেবে বিশ্বজুড়ে যেমন জনপ্রিয়, বাংলাদেশেও ঠিক তেমনিই শহর, বন্দর, গ্রামাঞ্চল সর্বত্রই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে যে কফি পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ আমদানিকৃত। আশার কথা, পার্বত্যাঞ্চলে চাষ হচ্ছে কফি। কফির আবাদে ইতোমধ্যেই বান্দরবানের চাষিরা সফলতা পেয়েছেন। পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ কফি ও কাজুবাদম চাষের জন্য উপযোগী।
ইতঃপূর্বে গারো পাহাড়ে ছিল নানা প্রজাতির পাহাড়ি ফলদ গাছ। সুতরাং এখানে কফি ও কাজু বাদাম চাষযোগ্যই হবে। কেননা বান্দরবান পাহাড় ও গারো পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া একই ধরনের। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে কফি চাষ হচ্ছে, কৃষকরা সফলতাও পাচ্ছেন। একই ধরনের মাটি ও আবহাওয়া গারো পাহাড়ে কফি এবং কাজুবাদাম চাষ সম্ভব বলে শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ¦ শরীফ উদ্দিন সরকার ও আলহাজ¦ গোলামসহ প্রবীণ লোকজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। তারা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে কফির চাষ হলে গারো পাহাড়ে হবে না কেন? মাটি ও আবহাওয়াতো একই। সুতরাং পাহাড়ে কফি-কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
চিম্বুক পাহাড়ের কফি চাষ সরেজমিন ঘুরে এসে একটি বেসরকারী কোম্পানী বাজাজের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা শেরপুর শহরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান সুজন বলেন, সেখানকার কফি চাষিদের সাথে আলাপ করে জেনেছি, চারা রোপণের ২ বছর থেকে ফলন দেয়। ৩য় বছর দেয়া শুরু হয় ফল। গাছ ৭০/৮০ বছর বাঁচে। জানুয়ারিতে ফুল আসে, সপ্তাহান্তেই ফলে পরিণত হয়। নভেম্বরে ফল পাকে। ফল সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। তিনি বলেন, আম, জাম, জাম্বুরাসহ ফলদ বাগানে সাথী ফল হিসেবে কফি চাষ করা হচ্ছে। চারা বর্ষায় রোপণ করতে হয়। ছায়া ও মাটির আর্দ্রতা লাগে। বেশি ছায়া হলে ফলন কম হয়। রোদ প্রয়োজন। সেখানে রোবস্ট ও অ্যারিয়েন নামে ২ ধরনের কফি চাষ হচ্ছে। কফির খোসাসহ প্রতি কেজি দুই-আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যেক গাছ থেকে বছরে ৫ থেকে ১৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। ফলন শুরু থেকে টানা ৪০-৫০ বছর কফি পাওয়া যায়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চাকরি শেষে তিনি বাড়ী এসে গারো পাহাড়ে কফির চাষ করবেন। সে জন্যই তিনি সব বিষয়ে জেনেছেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে চাহিদার তুলনায় কফি উৎপাদন হয় কম। ফলে ইথিওপিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অথচ পাহাড়ে চাষের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব।
এদিকে শেরপুর উত্তরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে কাজুবাদামের। ইতোমধ্যে এখানকার বাগানগুলোয় কাজুবাদাম পরিপক্বও হতে শুরু করেছে। চাষিদের মুখে দেখা যাচ্ছে হাসির ঝিলিক। ভারত সীমান্তঘেঁষা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এ সীমান্তে হাতির আক্রমণ এবং পানির অভাবে অনেক জমি পতিত পড়ে থাকে। শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের গারো পাহাড়ি অঞ্চলে ৩ বছর আগে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পর আওতায়’ ৩ উপজেলায় সাড়ে ১৮ একর জমিতে ৩৬টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কম্বোডিয়ান এম-২৩ জাতের কাজুবাদামের চারা বিতরণে এ অঞ্চলে কাজুবাদাম চাষ শুরু হয়। ৩ বছরের মাথায় প্রদর্শনী বাগানে ফুল ও ফল এসে বাদাম পাকতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাজুবাদাম। এসব গাছ থেকে ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। তবে প্রসেসিং ছাড়া ৪-৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। পাকার পর ওপরের অংশ আপেলের মতো খাওয়া যায় এবং নিচের অংশ নির্ধারিত যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় বাদাম বের করা হয়ে থাকে।
এদিকে আমদানিনির্ভর এ উচ্চমূল্যের কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে এ খবরে অনেকে উদ্যোক্তা ও বেকার যুবক বাগান দেখতে ছুটে আসছেন এবং তারাও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক কাজুবাদাম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ঝিনাইগাতি উপজেলার গজনীর বাগান মালিক সোয়েব হাসান সাকিল বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের এ পাইলট প্রকল্পে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম। আমার বাগানে গত বছর থেকে ফুল আসতে শুরু করে। এবার ফুল ও ফল পাকতে শুরু করছে। ৫০ শতক জমিতে ২শ’ গাছ রয়েছে। তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ফলন বাড়বে এবং প্রতি গাছে ১৫-২০ কেজি করে বাদাম পাওয়া যাবে। ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে এ বাদাম বিক্রি করা যাবে।
শেরপুর জেলা ‘কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের খামার বাড়ি উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) হুমায়ুন কবির ইনকিলাবকে বলেন, উচ্চ মূল্যের এ কাজুবাদাম দেশে একটি নতুন অর্থকরী ফসল। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কাজুবাদামের উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ ফসলের অনেক ঘাড়তি রয়েছে। প্রতি বছর আগাম আমদানি করতে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করতে এ ফসল শেরপুরের গারো পাহাড়সহ পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। হাতির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষকদের মাঝে কাজুবাদাম চাষে ব্যাপক সাড়া জাগবে।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ. হুমায়ুন দিলদার ইনকিলাবকে বলেন, কৃষি বিভাগ কফি ও কাজুবাদাম প্রদর্শনী প্লট করে ইতোমধ্যেই প্রবল্প হাতে নিয়েছে, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চিম্বুক পাহাড়ে কফির চাষ হলে গারো পাহাড়ে হবে না কেন? মাটি ও আবহাওয়াতো একই। সুতরাং পাহাড়ে কফি ও কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিনাইগাতী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক-আল-মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘সারা দেশের যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম এবং কফির চাষের সম্ভাবনা রয়েছে, তা চাষের আওতায় আনতে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গারো পাহাড়কে এ প্রকল্পের আওতায় এনে কাজুবাদাম ও কফির চাষ করা যেতে পারে এবং ব্যাপক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত কফি ও কাজুবাদাম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ছাড়াও অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা