ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
কৃষিতে নিরব বিল্পব সৃষ্টি হতে চলেছে

বাগান ও পতিত জমিতে বস্তায় আদা ও সবজি চাষ

Daily Inqilab মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে

০৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

জনসংখ্যার বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে আবাদি জমি। কমছে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে চাহিদা। এর উপর যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্র্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মাথার ঘাম পায়ে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের নাকাল অবস্থা। অর্থনৈতিক সঙ্কট মধ্য ও নিম্ন স্তরের মানুষদের নিষ্পেষিত করে তুলেছে। দু-বেলা খেয়ে পড়ে চলার লক্ষ্যে খেটে খাওয়া মানুষেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুন। অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর করতে কৃষকদের সামনে অল্প জমিতে অধিক উৎপাদন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

শহরাঞ্চলে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাকা বাড়ীর অভাবে গ্রামাঞ্চলে ছাদ বাগানের সুযোগ নেই। রয়েছে অব্যবহৃত ও পতিত জমি। শহরের ছাদ বাগানের মতোই দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলে বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে এবং বাড়ীর আশেপাশের পতিত জমিতে বস্তা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বস্তায় আদা চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। কৃষি বিভাগ বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে।

দিনাজপুর রংপুর মহাসড়কের পার্শ্বে ভূষিরবন্দর এলাকার বৈকুন্ঠপুর গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় এখন বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে হাজার হাজার লিচু আম বাগান রয়েছে। এমনি এক লিচু বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্লাস্টিকের বস্তায় ফসল উপযোগী মাটি ভরে আবাদ করা হচ্ছে আদা। মসলার অন্যতম উপদান আদা অনেক মুল্যবান। ৫ টাকার একটি পুরাতন প্লাস্টিকের বস্তাকে দুই ভাগ করে মাটি ভর্তি করে বীজ বোপন। মাঝে মাঝে পরিচর্য়া আর বেশী রৌদ্রতাপ হলে একটু পানি দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ফলে খরচ নাই বললেই চলে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। প্রতিটি বস্তায় তিনি এক থেকে দেড় কেজি করে আদা পান। যেখানে মাটিতে একটি গাছ থেকে এক পোয়া আদা পাওয়া যায়। আর বস্তায় আবাদে খরচ যেমন কম। তেমনি বাড়ীর আশেপাশে, বাগানে গাছের গাছের ফাঁকে ফাঁকে এমনকি রাস্তার ধারেও বস্তায় আদা চাষ করা যাচ্ছে। এর জন্য আলাদা কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপক মান্নান সরকার চাকরিকালীন সময়ে দেখেছেন শহরের ছাদ বাগান। গ্রামে তার মতো আর দশ জনের বাড়ীও পাকা কিন্তু টিনের ছাদ। তাই ছাদ বাগানের সুযোগ নেই। ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি দেখে তিনি বাড়ীর উঠোনে মাত্র ১২টি বস্তায় আদা চাষ করেন। এবার তিনি ১২শ’ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আগামীবছর ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। তার দেখাদেখি আশপাশের শতশত বাড়ি ও বাগানে বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে।

বস্তায় আদা চাষের উদ্যেক্তা অধ্যাপক মান্নান সরকার জানান, যে গ্রামে বাড়ি জমি ও বাগান থাকলেও মূলত চাকরিকালীন সময়ে এসব দেখাশোনা করতো মুজুরেরা। অবসরের পর গ্রামে আসলে দেখি জমির বাজার মুল্যের তুলনায় উৎপাদিত ফসলের প্রাপ্ত মূল্য প্রকৃত অর্থে অলাভজনক। শহরে ছাদের উপর ড্রাম ও প্লাস্টিক বস্তায় বিভিন্ন ফলের আবাদ করে কিছুটা অর্থের সাশ্রয় হতো। গ্রামে সেমি পাকা বাড়িতে ছাদ নেই। ফলে ফল ও মসলা জাতীয় ফসল ক্রয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে না অতিরিক্ত কোনো অর্থ। ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্যোগ নেই আমার বাড়ির আঙ্গিনা ও লিচু বাগানের নিচে পতিত পড়ে থাকা জায়গায় প্লাস্টিকের বস্তায় আদা চাষের। প্রথমে ৫ টাকা করে ৬টি পুরাতন প্লাস্টিক বস্তা কিনে তা কেটে দু-ভাগ করে ১২টি বস্তায় মাটি ভর্তি করে আদার বীজ বোপন করি। প্রতিটি বস্তা থেকে ১ থেকে দেড় কেজি করে আদা পাই। যার বাজার মূল্য ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। পরের বছর ১২ বস্তায় আদা আবাদ করি। আমার দেখাদেখি আশপাশের কৃষক এমনকি অন্যান্য এলাকার লোকজনও বস্তায় আদা আবাদ শুরু করেছে।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা। তিনি বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে কিছুটা আশ্চর্য হোন। উপজেলা কার্যালয়ের সামনে বস্তায় আদা আবাদ শুরু করেন এবং কৃষকদের উৎসাহিত করেন। তিনি ইনকিলাব বলেন, সংবেদনশীল ফসল হওয়ায় আদা মুলত ছায়া ও দোআঁশ জাতীয় মাটিতে আবাদ করতে হয়। বস্তায় দোআঁশ মাটি ভর্তি করে আবাদ করলে দেখা যাচ্ছে এর ফলন ভাল হচ্ছে। মাটিতে একটি বীজ থেকে ১ পোয়া আর বস্তায় ১টি বীজ থেকে এক কেজি আদা পাওয়া যাচ্ছে। যা অধ্যাপক মান্নান সাহেব পেয়েছেন। এছাড়া পরিচর্য়া খরচ নাই বললেই চলে। তিনি বলেন, শুধু আদা নয় মসলা জাতীয় ফসল ও ফল উৎপাদন ভাল হবে।

কৃষি বিভাগের স্থানীয় সুপারভাইজার ও কর্মীরা বস্তায় আদা চাষের বিষয়টি তাদের কাছে খুব ভাল হয়েছে। তারা গ্রামে পড়ে থাকা বাগান, পুকুরপাড়, রাস্তার ধারে বস্তায় চাষাবাদের বিষয়টিকে কৃষি ক্ষেত্রে একটি নিরব বিল্পব সৃষ্টি হবে বলে মত প্রকাশ করেছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন