বাড়ছে গৃহপরিচারিকা চক্রের প্রতারণা
০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৫ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
রাজধানীতে গৃহপরিচারিকা সরবরাহ চক্রের প্রতারণা বাড়ছে। বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় বিত্তশালী পরিবারে গৃহপরিচারিকা দেয়ার পর নান্ াকৌশলে হয়রানীও করা হচ্ছে।
প্রতারণা, বাসায় চুরি ও লুটপাটের ঘটনায় গৃহপরিচারিকাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে কতিপয় দুনীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্থানীয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশের সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসিন্দাদেরও হয়রানী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহপরিচারিকাদের টেলিফোন বা বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে কতিপয় দুনীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ভূক্তভোগীরা বলছেন, অনেক সময় বড় ধরনের সমস্যা নিয়ে থানা পুলিশের কাছে গেলেও কোন সাহায্য পাওয়া যায় না। এমনকি নানা হয়রানীর শিকার হয়ে থানা পুলিশের কাছে গিয়ে কোন সাহায্য না পাওয়ার ঘটনা অনেক। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা গৃহপরিচারিকাদের সামান্য অভিযোগ ফেলেই আর রক্ষা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশানের একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, গত ৩ আগস্ট তার বাসার গৃৃহপরিচারিকাকে তার স্ত্রীর দ্রুত কাজ করার জন্য রাগারাগি করেন। এক পর্যায়ে সবার অগোচরে বাসা থেকে ওই গৃহপরিচারিকা বের হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা পর স্থানীয় পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ (এসআই) বাসায় গিয়ে অভিযোগ করে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমান না হওয়ায় এবং তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজের পরিচয় দিলে তার (ওই ব্যবসায়ীর) সামাজিক অবস্থান বুঝতে পেরে চলে যেতে বাধ্য হন।
তিনি আরো বলেন, যাওয়ার সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা ওই গৃহপরিচারিকাকে বলে জায়গা না বুঝে আমাদের জড়াবে না। এতে আমাদের সমস্যা হয়। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আমার সখ্যতার বিষয়ে জানতে পেরে ওই কর্মকর্তা বাড়াবাড়ি না করে চলে যান বলে ওই ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন।
ডিএমপির মুখপাত্র ডিসি মো. ফারুক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করাই পুলিশের কাজ। কোন অপরাধী বা অপরাধী চক্রের সাথে কোন পুলিশ কর্মকর্তার সখ্যতা বা যোগাযোগে তথ্য পাওয়া গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অনেক অপরাধী চক্রের সাথে গৃহপরিচারিকাদের যোগাযোগ থাকে বা অনেকেই নিজেরাও অপরাধী। কোন গৃহপরিচারিকা অপরাধ করলে আইন হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যারা বিত্তশালী বা সম্মাানিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে। পরে ওই সব বাসায় গৃহপরিচারিকা নিয়োগ দেয়। এক পর্যায়ে ওই গৃহপরিচারিকার মাধ্যমে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে। অভিযোগ পেয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য ওই পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাসায় হাজির হয় এবং টাকার বিনিময়ে বিষয়গুলো মিমাংসা করার চেষ্টা করে। তবে অনেক সময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের গুটিয়ে নেয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা। এমনকি গৃহপরিচারিকা দেয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গায়েব হয়ে যায়। একাধিকবার ফোন করেও ভ’ক্তভোগী তাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন না।
পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনোয়ার নিউ ইস্কাটনের বাসায় প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে কাজের সুযোগ দেন বিলকিসকে। এর তিন দিন পরেই ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় স্ত্রী ও গৃহপরিচারিকাকে রেখে অফিসে যান মনোয়ার। পরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ে তাকে ফোন করে জানান, তার মা ফোন রিসিভ করছেন না। বাসায় ফিরে মনোয়ার স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থান পান। পুরো বাড়ি তছনছ। গৃহপরিচারিকাও নেই।
হতভম্ব মনোয়ার আলী স্ত্রীকে নিয়ে দ্রুত মগবাজার ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকালে গৃহপরিচারিকা ও অজ্ঞাত একজন মিলে মনোয়ারের স্ত্রী রেজিনা রহমানকে (৫৫) অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে চার লাখ টাকা এবং একটি সোনার বালা ও চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়। স্ত্রী সুস্থ হলে এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন মনোয়ার।
মামলার পর হাতিরঝিল থানার এসআই রহমত উল্লাহ তদন্তভার পান। তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মনোয়ার না-রাজি দিলে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে প্রতারক চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করেন এবং গত বুধবার (২ আগস্ট) পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বিলকিসকে।
পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিলকিস জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে সে। মনোয়ারের বাসা থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে। বিলকিসের নামে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত