রাস্তাঘাট-সড়কে অজগরের হা!
০৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৯ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
সক্রিয় বর্ষার মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে সামুদ্রিক প্রবল জোয়ারের পানি। গত চার দিন যাবৎ হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ঘন ঘন তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর অনেক এলাকা। পাহাড়-টিলা কাটার কারণে পাহাড় ধোয়া বালিমাটি সয়লাব হচ্ছে শহরময়। সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা-জঞ্জাল, কাদা-পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায়। গতকালও থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক এলাকা ডুবে যায়। পানিবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর নানামুখী দুর্ভোগ অসহনীয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামসহ চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
টানা অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে নগরীতে পানিবদ্ধতা অব্যাহত আছে। সেই সাথে বিশেষত নগরীর প্রাণপ্রবাহ খাল-নালা-ছরা ভরাট ও বেদখল হয়ে গেছে আরও আগেই। এ কারণে মারাত্মক পানিবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। টানা বৃষ্টি ও পানিবদ্ধতায় মহানগরীর রাস্তাঘাট, সড়ক এমনকি অলিগলি ভেঙেচুরে খানাখন্দে ও গর্তে ভরে গেছে। যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ অজগরের মতো হা করে আছে। কোথাও কোথাও ধসে পড়েছে কিংবা ফাটল ধরেছে সড়ক, রাস্তাঘাটে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির সাথে রাস্তাঘাটের খানাখন্দ একাকার হয়ে যাওয়ায় গর্তে পড়ে যাচ্ছে সব ধরনের যানবাহন। এতে করে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহন চলাচল হচ্ছে ব্যাহত, যাত্রী সাধারণের ভোগাান্তি অবর্ণনীয়। যানবাহনে যথেচ্ছ বেশিহারে ভাড়া আদায়ও চলছে। তাছাড়া অনেক রুটে মিলছে না যানবাহন। হাজারো যাত্রী রাস্তায় ভিড় করেও গন্তব্যে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
গত জুন ও জুলাই মাসে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ভরা বর্ষা মৌসুমেও অনাবৃষ্টি-খরা পরিস্থিতি বিরাজ করে। জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫১ শতাংশই কম। তবে জুলাইয়ের শেষে এসে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আগস্টের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় বিশেষত চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রাবণের মুষলধারায় বর্ষণ। যোগ হয় প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার। এতে করে গত ৫ দিন যাবৎ বন্দরনগরীতে পানিবদ্ধতা ভয়াল রূপ নেয়। সেই সাথে ময়লা-আবর্জনা, কাদা-পানির জঞ্জাল সয়লাব হয়ে পড়েছে বাড়িঘর, দোকান-পাট, গুদাম, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মক্তব। মুরাদপুর, ষোলশহর, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রাজাখালী, মোহরা, আগ্রাবাদ, হালিশহর, কাট্টলী, সাগরিকাসহ নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা অতিবৃষ্টি ও জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে।
নগরবাসী বাড়িঘরের মেঝে থেকে কাদা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করতে গিয়ে গত ক’দিনে নাকাল। সর্বস্তরের জনসাধারণ চট্টগ্রামবাসীর ‘সেবা’ দানকারী প্রতিষ্ঠান, সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ ও হতাশ। অন্যদিকে পানিবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, পাউবো একে অপরকে দুষেই চলছে। কেউই দায় নিতে চায় না। গত ক’দিনের মারাত্মক পানিবদ্ধতার সঙ্কটে প্রায় অচলদশায় পড়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীর ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, আমদানি-রফতানি পরিবহন এমনকি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অথচ নাগরিক ‘সেবা’য় নিয়োজিত এক ডজনেরও বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বিভাগের কর্তা-ব্যক্তিরা নির্বিকার। নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নেতারা।
গত শনিবার কাদা-পানিতে থৈ থৈ বহদ্দারহাটের সড়ক রিকশায় অতিক্রম করে কোনোমতে নিজবাড়িতে পৌঁছান চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেন, পানিবদ্ধতা ও খাল-নালা-ছরা ভরাট হয়ে নগরবাসীর কষ্ট-দুর্ভোগের জন্য সাধারণ মানুষ আমাদের গালি দিচ্ছেন। কিন্তু এজন্য সিডিএর যে প্রকল্প তাতে নগরবাসীর কোনো উপকার হয়নি। কাজ তাদের, জওয়াব দিতে হচ্ছে আমাদের। প্রসঙ্গত চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা নিরসন, খাল-নালা সংস্কারসহ সিডিএর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে নগরবাসী আজও কোনো সুফল পায়নি। বরং বছর বছর চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা, খাল-নালা-ছরা উপচে গিয়ে নগরময় ময়লা-আবর্জনা, কাদা-পানির ঢেউ বেড়েই চলেছে। খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।
পাহাড়-টিলা ধসের সতর্কতা : আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত) বর্ষণ হতে পারে। অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৩২৩ মিলিমিটার। চট্টগ্রামে ৩০৬ ও বান্দরবানে ২৫৩ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ আবহাওয়ার শিকার দেশের উত্তরাঞ্চল তথা রাজশাহী, রংপুর বিভাগজুড়ে বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টিও ঝরেনি। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে গত তিন দিনে শ্রাবণের এ সময়ের তুলনায় স্বাভাবিকের কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় মাত্র ৫ মি.মি. বৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকায় ৬ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে আজ সোমবার দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা বলা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে পরবর্তী ৫ দিনে বর্ষণ হ্রাস পেতে পারে। বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত