জামাতে শরিক হওয়ার বিড়ম্বনা
০৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
এ বছরের হজ ব্যবস্থানার কিছু ত্রুটি নিয়ে কয়েক জনের সাথে আলাপ করলাম, যারা দীর্ঘদিন থেকে মক্কা ও মদিনা শরিফে বসবাস করছেন। তাদের এক কথা সউদী আরব রাজতন্ত্রের দেশ, গত কয়েক বছর থেকে আরো অন্য রকম হয়ে গেছে। এখানে কোনো ব্যাপারে সমালোচনা করা যাবে না। পরামর্শও দেবেন কাকে, কীভাবে। ইতোমধ্যে মোবাইলে আরবিতে একটি ক্ষুদে বার্তা পেলাম। যার মূল কথা, হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে পড়লে বা পরামর্শ থাকলে দিতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাবে উপ-সম্পাদকীয় কলামে দু’টি লেখার মাধ্যমে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। এর একটি নব্বই-এর দশকের শুরুতে হজযাত্রীদের অগ্রিম বাড়ি ভাড়া করার শর্তসংক্রান্ত। অপরটি ২০০৭ সালে মিনায় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে কয়েকশ’ মানুষের প্রাণহানির পর লেখা। বলেছিলাম, জামারায় প্রবেশ পথ সংকীর্ণ করে স্তম্ভের চারপাশ এবং বের হবার পথ প্রশস্ত ও বহুমুখি করার কথা। সেই অভিজ্ঞতার মনোবল নিয়ে চিন্তা করলাম, এবারও লিখব।
প্রথমেই উল্লেখ করি, মোবাইলে যে নাম্বারে ক্ষুদে বার্তা এলো, সে সিম কিনতে হয়েছে এক মাসের জন্য ১০০ রিয়াল দিয়ে। তার মানে বাংলাদেশের তিন হাজার টাকা। হাজীদের জন্য এক মাসের মোবাইল সার্ভিস, তাতে হোয়াটস অ্যাপে কথা বলার মতো সব সুবিধাও নেই, অনেক বেশি মনে হওয়া স্বাভাবিক।
মক্কা শরিফে মিসফালাহ নামটি বাংলাদেশিদের কাছে বহুল পরিচিত। পাঁচতারা থেকে মধ্যমমানের সারি সারি ফুন্দুক (আবাসিক হোটেল) আছে ইবরাহিম খলিল রোড ও হিজরাহ রোডের দুই পাশ ছাপিয়ে। বাংলাদেশি ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক ও আফ্রিকান অনেক দেশের হাজীর বিচরণ এখানে। কবুতর চত্বর নামে পরিচিত এলাকাটির সবচে বড় অসুবিধা পাঁচওয়াক্ত নামাজের জামাতে শরীক হওয়া। মক্কা টাওয়ার ও দারুত তাওহিদ ভবনের মাঝখানের সামনের পথটি খোলা থাকলে অনায়াসে হারাম শরিফে বা বাইরের চত্বরে নামাজে শরীক হওয়া যায়। কিন্তু নামাজের সময় ঘনিয়ে আসলে পুুলিশ কখন পথটি ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেবে, তা বলার সাধ্য কারো নেই। সামনে হারাম চত্বর একেবারে ফাঁকা, এরপরও সোজা পথে যেতে দেবে না তারা। যেতে হবে অনেক দূর ঘুরে, জারওয়াল হয়ে। সেই সাথে শুনতে হবে সউদী পুলিশের কয়েকটি বিরক্তিকর কর্কশ শব্দ গিদ্দাম, হাররিক। গিদ্দাম মানে সম্ভবত সামনে আর হাররিক মানে সরে যাও। জামাতে শরীক হতে চাইলে অনেক দূর ঘুরে আসা বিরক্তিকর মনে হলেও উপায় নেই। অনেক সময় কবুতরের বিষ্ঠা বিছানো চত্বরে জায়নামাজ পেতে বা হোটেল লবিতে দাঁড়িয়ে হারাম শরিফের মাইকের অনুসরণ করে নামাজ পড়তে হয়।
সবচে বিড়ম্বনা হলো, অনেক দূর ঘুরে প্রবেশ করার পরও হারাম শরিফ চত্বরে বসতে দেবে না। বলবে মসজিদের ভেতরে যাও। তপ্ত দুপুরে মসজিদের ভেতরটা আরামদায়ক হলেও লোকদের মধ্যে অনীহার কারণ আছে। মসজিদটি হারাম শরিফের সাথে লাগোয়া বিশাল তিনতলা বিশিষ্ট। তবে তার দেয়াল হারাম শরিফের সাথে যুক্ত মনে হলেও আলাদা। সেখান থেকে হারামে বা মাতাফে (তওয়াফের স্থানে) যাওয়ার উপায় নেই।
পুলিশের তাগাদায় আপনি মসজিদে প্রবেশ করলেন তো শান্তি নেই বলবে, আগে ছাদে বা তিন তলায় চলে যাও। তারপর দুই তলা, নিচতলা ভর্তি করা হবে। ব্যাপারটা গাড়ির সামনের সিট খালি রেখে পেছন সিট থেকে যাত্রীদের আসন নিতে বাধ্য করার মতো। মানুষের কথা হলো, আগে নিচতলা, তারপর দোতলা ভর্তি করা হোক, তারপর দূরে অসুবিধার জায়গাগুলোতে বসতে বাধ্য হলে মনে দুঃখ থাকবে না।
বর্ধিত বিশাল মসজিদে প্রবেশ করতে অনেকের অনীহার কারণ হলো, তার অবস্থান কাবাঘর থেকে দূরে এবং মাঝখান দিয়ে কাবাঘরে বা মাতাফে যাওয়ার পথ নেই। এই অসুবিধাটি দূর করলে নামাজ ব্যবস্থাপনায় পুলিশের জানকান্দানি আর মানুষের বিরক্তি ও অসন্তুষ্টি দূর হয়ে যাবে এবং মদিনার মসজিদে নববীর মতো একটি শান্ত মনোরম পরিবেশ বলবৎ হবে।
মক্কা শরিফে যাওয়ার পর প্রথমদিকে বর্ধিত মসজিদে প্রবেশ করে এক পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম, মাতাফ কোন দিকে। সম্ভবত আমার ভাষাগত ত্রুটির কারণে পুলিশ হাতের ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন সামনে যাও। কিন্তু যতই যাই কাবাঘরের দেখা নাই। একজন বয়স্ক পাকিস্তানী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বুঝিয়ে বললেন, আপ পাহেলে মাসজিদ কে বাহার চালে যায়ে। ফের দায়ে তরফ যাতে রহে, খানায়ে কাবা ওহা হ্যায়। বুঝতে পারলাম, আমাকে প্রথমে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। তারপর বাম দিকে অগ্রসর হতে হবে। কাবাঘরের অবস্থান সেখানেই। তার এই পরামর্শে জামাতে শরীক হওয়ার বিড়ম্বনার সমাধানও বেরিয়ে এলো। লোকেরা প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতে চায় না, বরং কাবাঘরের চত্বরে যেতে চায়। আর পুলিশ চায় আগে মসজিদ ভর্তি করবে। তার জন্য মিসফালাহর দিক থেকে ব্যারিকেড দেয়। যদি মসজিদের ভেতর দিয়ে কাবাঘরে বা মাতাফ (তাওয়াফের স্থান) চত্বরে আসার জন্য একটি করিডোর খোলা রাখা হয়, যেখান দিয়ে লোকেরা জামাত শেষ হওয়ার পরপর তাওয়াফের জন্য আসতে পারে তাহলে মসজিদে প্রবেশে কারো অনীহা থাকবে না। তখন যারা আগে আসে সুবিধার জায়গায় তারাই আগে বসবে নিয়ম অনুসরণ করলে পুলিশ ও মুসল্লিদের বিড়ম্বনার অবসান হবে।
এখন সবার মনে প্রশ্ন, সামনে চত্বর খোলা রেখে অনেক দূর ঘুরতে বাধ্য করা হবে কেন। যাতায়াতের পথগুলো খোলা রাখার জন্য পুলিশ বলপ্রয়োগ করুক কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। সামনের চত্বর খোলা রেখে তপ্ত রোদের মধ্যে ঘুরতে বাধ্য করার মানে হয় না। মদিনার হারামে রিয়াজুল জান্নাহতে মাসে একবার প্রবেশ করার যে ব্যবস্থা বলবৎ আছে, তারপরও রিয়াজুল জান্নাহর কাছাকাছি যাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা না থাকায় বা কোনো একটি নির্দিষ্ট ভবনে যেতে বাধ্যবাধকতা না থাকায় সবাই প্রফুল্ল মনে জামাতে শরীক হয়। মাতাফে তওয়াফের ব্যাপারে যে কড়াকড়ি করা হয়, তাতেও কারো আপত্তি নেই।
সবার মনের কথা হলো, আগে আসলে আগে বসার সুযোগ দিন, সংলগ্ন হারামের মসজিদ পূর্ণ হওয়ার পর অন্যদিকে যেতে বাধ্য করুন, কারো আপত্তি থাকবে না। আপত্তি হয় সামনের চত্বর খালি রেখে বর্ধিত মসজিদে প্রবেশ করতে বাধ্য করা এবং সেখান থেকে মাঝখান দিয়ে মাতাফ বা হারামে আসার পথ না থাকার কারণে। বিষয়টি নিয়ে কি কর্তৃপক্ষ চিন্তা করে দেখবেন?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ