যথাসময়ে নির্বাচন প্রস্তুতি নিন
০৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৩ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
নিজেদের মধ্যে বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনগণের কাছে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ‘উন্নয়ন চিত্র’ তুলে ধরার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক ভাবে আরো শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান তিনি। সভায় তৃণমূল নেতারা নিজ নিজ এলাকার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতিঅভিযোগ তুলে ধরেন। সে সব অভিযোগ শুনে সে বিষয়ে যথাযথ সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের গতকাল সবার দৃষ্টি ছিল গণভবনের দিকে। দলীয় প্রধান কী বার্তা দেন তা জানার জন্য মুখিয়ে ছিলেন সবাই। গণভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শুরু হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভায় সারাদেশ প্রায় তিন হাজার
তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মোট ৪৩জন নেতা দলীয় প্রধানের সামনে বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-দলকে কুক্ষিগত করাসহ নানা অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতারা। এর বাইরে অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও অনেকে সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগ শুনে দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় বিষয়গুলোর নোট নিয়ে রাখা হয়েছে। দলীয় প্রধান বলেছেন, যথাযথ সময়ে বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এর বাইরে দলীয় তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ শুনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, এসব অনিয়ম-অন্যায় বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। যার যার কর্মকান্ড দেখে তিনি আগামী নির্বাচনে নিজে থেকে মনোনয়ন দেবেন।
সভা সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস সভায় বলেন, এমপিরা দলকে পকেটে ঢুকিয়েছে। দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে কর্মসূচিগুলো দেন তা তৃণমূলে পালন করা হয় না। এ বিষয়গুলো মনিটরিং করার জন্য একটি টিম গঠনের অনুরোধ করেন তিনি। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও ঘুড়িয়ে অভিযোগ উঠে আসে। সভা সূত্র জানিয়েছে, সভায় আওয়ামী লীগের গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্ল্যাহ খান বলেন, নেত্রী আপনি বলেছেন, বাগানে শতফুল ফুটতে দাও। কিন্তু ফুল ফোটার আগেই সেই ফুল কিভাবে শেষ করে দেওয়া যায়, সে কিভাবে শেষ করে দেওয়া যায় সে জন্য কাজ করে। তিনি আরো বলেন, অনেক বড় নেতারাই ফুলকে বিকশিত হতে দেয় না। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, আমি সভাপতি, কাউকে দলের পদ দিলে ভাল। আর না দিতে পারলে খারাপ হয়ে যাই। আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হয়। সভা সূত্র জানিয়েছে, সভায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাতজোড় করে বললেন, এমপিদের দলের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে অনুরোধ করলেন। এমপিরা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করে ভাই লীগ করার চেষ্টা করে। নিজের মর্জি মতো কর্মসূচি দিচ্ছেন। ভাই লিগ বাদ দিয়ে নেতা কর্মীদের সঙ্গে মিলে থাকার অনুরোধ জানান।
সভা শেষে বেরিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত বলেন, বৈঠকের আমাদের কথা শুনেছেন দলীয় প্রধান। তা তিনি নোটডাউন করেছেন। আমরা যারা তৃণমূলের নেতারা আগামী নির্বাচনে তিনি যে নির্দেশনা দেবেন আমরা তা পালন করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমরা তার জন্যই কাজ করবো। এ শপথ নিয়েই আমরা সভা থেকে বেরিয়েছি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মেজবাহুর ভূইয়া রতন বলেন, নেত্রীর বার্তা একটাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে কোন মূল্যে আমরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা জনগণকে উন্নয়নের কথা বলবো। তিনি আরো বলেন, দলীয় বিভেদ মিমাংসার জন্যই আজকের সভা।
দলীয় কোন্দল নিয়ে সভা থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ করার একটা উদাহরণ আমরা আজকে সৃষ্টি করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে কর্মীদের ঐক্য থেকে দেশের রাজনীতিকে যাকে সুষ্ঠু ধারায় পরিচালনা করা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশ শান্ত রেখে আস্তে আস্তে আমরা যেন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি সে বিষয়ে সভায় কথা হয়েছে।
দলের বিরোধ নিয়ে তিনি আরো বলেন, অপেক্ষা করেন, নির্বাচন শুরু হলে হলের বিরোধী ম্লান হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হবে।
এর আগে ‘বিশেষ বর্ধিত সভার’ শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র দেশের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। মানুষের শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে কাজ করি। নির্বাচনের সময় জনগণের কাছেই আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা দেই- কতটুকু করতে পেরেছি, ভবিষ্যতে আমরা কি করবো। তিনি বলেন, সকলের জন্য আমরা কাজ করবো এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য আওয়ামী লীগই কাজ করেছে। আগে অন্য কেউ কোনদিন মানুষের কথা ভাবেওনি, কিছু করেওনি। সেই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা যে উন্নয়ন করেছি, পরিবর্তন এনেছি সেই তথ্যগুলো মানুষের কাছে দিবো, সেগুলো আপনারা মানুষের কাছে পৌঁছে দিবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল এই সাড়ে ১৪ বছরে এই বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে, সুষ্ঠু রিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে বলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে।
দেশে দারিদ্র বিমোচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে দারিদ্রের হার ৪১ ভাগে ছিল সেখান থেকে নামিয়ে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আগামীতে ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দারিদ্রের হার আরও কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
ড. ইউনুসের প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোন এক বিশেষ এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দেশে দারিদ্র কমেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই তো আজকে আমরা দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোন বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র কমে তবে এই ১৮ ভাগ আগে কেন হয়নি। যারা বলে এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র কমেছে তারা কোন অংকে হিসাব করেন। দারিদ্র বিমোচন হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী। তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র মুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া, তৃণমূল পর্যন্তÍ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এই দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে। কোন এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র হ্রাস পায় নাই। শেখ হাসিনা আরো বলেন, উচ্চ সুদে যারা কাজ করবে তারা দারিদ্র মুক্ত হতে পারে না বরং তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে, ঋণের ওপরই জীবন যাপন করতে হয়। কখনো তাদের আত্মহত্যা করতে হয়েছে, কখনো জমি-জমা সব বেচতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি