শতবার পেছাল সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ
০৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:০২ পিএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১০০তম বার পেছালো। গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা র্যাব গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
সূত্র জানায়, র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আদালতের নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত ১০০তম বার সময় দিলেন।
তবে ১০০তম বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা বলে মন্তব্য করেন সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, কেন ১০০তম বার সময় নিয়েও র্যাব আলোচিত এই সাংবাদিক দম্পতি খুনের মামলার তদন্ত শেষ করতে পারল না, আদালত র্যাবের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। ১০০তম বার সময় চাওয়া অগ্রহণযোগ্য। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিতে পারেন।
অন্যদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার প্রকৃত অপরাধীরা এখনও শনাক্ত না হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে দেরি হচ্ছে। এ হত্যা মামলার তদন্ত আমরা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে করছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে ডিএনএ স্যাম্পল পাঠিয়েছি। ওখান থেকে আসা প্রতিবেদনে দুইজন সাসপেক্টের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। এই দুইজন সাসপেক্টকে আমরা এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আমরা করছি। আমরা যে তদন্ত প্রতিবেদন দেব এখানে যেন কোনোভাবেই কোনো নির্দোষ ব্যক্তি দোষী না হয়, মূলত এই বিষয় আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, খুব কম হত্যাকা-ের ক্ষেত্রে এমনটি হয়, যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিতে আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তবে এই মামলার ক্ষেত্রে আমরা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পাঠিয়েছি। শুধুমাত্র এই হত্যা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে। প্রাথমিকভাবে যাদের সন্দেহ করা হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে যাদের র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাদের আলামতও পাঠানো হয়েছে।
১০০ বার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকের বিষয় না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা। কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন এখানে দোষী না হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি একদম ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না তারপরও আদালতে প্রতিবেদনে তার নাম চলে যায়। আবার অনেকে আছেন যিনি ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। আমরা এই ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ করতে আগেও দেখা গেছে যে বেশি সময় লেগেছে।
এখন পর্যন্ত র্যাব-পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে ওই দুইজন সন্দেহভাজন ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহ হয় আমরা ২৫ জনের আলামত ডিএনএর পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম। যাচাই-বাছাই করে আমরা দুজন সন্দেহভাজন পেয়েছি যাদের শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করা গেলে এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় প্রকৃত কারা জড়িত এই ধরনের সঠিক তথ্য আমরা পাইনি। এখন পর্যন্ত যে ২৫ জন গ্রেফতার হয়েছে তাদের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কিনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যে তদন্ত হয়েছে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সুনিশ্চিত না তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ডিএমপির ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হওয়ার দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। খুনের দুই দিন পর আইজিপি হাসান মাহামুদ খন্দকারও বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এখন ১১ বছরের মাথায় তদন্ত সংস্থা র্যাব বলছে, যত দ্রুত সম্ভব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
নিহত সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। অথচ ১০০তমবার সময় নিয়েও র্যাব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে না। এত বছরেও যখন কিছু হলো না, তখন আমার মনে হচ্ছে, এই খুনের কুলকিনারা করতে পারবে না র্যাব। র্যাব যদি কিছু করতে না পারে, তাহলে আদালত অন্য কোনো সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দিক। এভাবে তো চলতে পারে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত