২৫০০ কি.মি নৌপথে বহন হচ্ছে পণ্য
০৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
সারাদেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথের নাব্য বাড়ানোর খসড়া মহাপরিকল্পনার প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নৌপথে পণ্য ও মানুষ পরিবহণের সুবিধার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নৌযান চলাচলের রুটে নাব্য উন্নত করা হয়েছে। ২৪টি নদীর ২ হাজার ৩শ’ ৪০ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং কাজ শেষ। ২৪টি নৌপথ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং-এর পর সার্বক্ষণিক কার্গো জাহাজ চলাচল করছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ১৭৮টি নদী খননের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাধীনতার পর দেশে ৩৭ শতাংশ মালামাল পরিবহণ হতো নদীপথে। তখন ১৬ শতাংশ যাত্রী নৌপথে যাতায়াত করত। এখন এ হিসাব কমে যথাক্রমে ১৬ শতাংশ এবং ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলা হয়। নদী খননের আগে ও পরে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে রেকর্ড রাখা বাধ্যতামূলক করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এ পরিপত্রে নদী খননে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ১৬ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। ইতোমধ্যে রিভার, ডেল্টা এন্ড কোস্টাল মরফোলজি ডিভিশন, সিইজিআইএস প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ প্রকল্পটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় যুক্ত করা হচ্ছে।
নৌপরিহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সারাবছর নৌপথ সচল রাখতে নৌপথে পণ্য ও মানুষ পরিবহণের সুবিধার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নৌযান চলাচলের রুটে নাব্য উন্নত করা হয়েছে ২৪টি নদীর ২ হাজার ৩শ’ ৪০ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং কাজ শেষ। খনন কাজ আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ড্রেজিং এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ। নৌপথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫৫টি হাট-বাজার, ২০২ বিঘা অকৃষি জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর, সারাবছর নৌপথ সচল রাখতে খনন কাজ আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। প্রকল্পটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, নৌপথ বৃদ্ধিতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে গত ২০১৯ সালে গেজেট অনুসারে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে ৮ থেকে ১০ ফুট পানির গভীরতা বজায় রাখার জন্য নদীটি ড্রেজিং করা হয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ১৪ হাজার ৩৮ কিলোমিটার। পাকিস্তান আমলে পানির মৌসুমে ছিল প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার, শুকনো মৌসুমে ৮ হাজার কিলোমিটার। ১৯৮০-এর দশকের শেষ ভাগে পানির মৌসুমে নৌপথ ছিল ৫ হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার, আর শুকনোর সময় ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। (সার্ভে অন ইনল্যান্ড ওয়াটার অ্যান্ড পোর্টস ১৯৬৩-৬৭ নেডেকো)। ৩০ বছরে সার্বিক কোনো জরিপ হয়নি। গত কয়েক বছরে ব্যাপক খননকাজ হয়েছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে ৭ হাজার ৫০ কিলোমিটার নৌপথ আর শুকনো মৌসুমে ৬ হাজার ২০ কিলোমিটার থাকছে।
বেসরকারী ড্রেজারে ৮৫৮.৯১ লাখ ঘনমিটার, বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব ড্রেজারে ৮৯.৭০ লাখ ঘনমিটার এবং এক্সকাভেটর দিয়ে প্রায় ৮২.৩৪ লাখ ঘনমিটার অর্থাৎ সর্বমোট ১০৩০.৯৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করে প্রায় ২৩৪০ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য করা হয়েছে। গত বছরে জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং ব্যয় হয়েছে ১৬১৭.০২ কোটি টাকা। প্রকল্পভুক্ত নদীগুলো হচ্ছে, এমজি চ্যানেল, খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, তিতাস, সুরমা, বাউলাই, নতুন নদী, রক্তি, রকশা নালা, মগড়া, কংস, ভোগাই-কংস, চলতি বুড়ি, ইছামতি, কর্নতলী, আপার কুমার, পালরদি, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, মধুমতি, ভৈরব, আত্রাই, দুধকুমার, নরসিংদী জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদ।
প্রকল্পের আওতায় বর্ণিত নৌ-পথগুলো ড্রেজিং করে প্রায় ২৩৪০ কিলোমিটার নৌ-পথ নাব্য করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌ-পথ) ২য় সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এমজি চ্যানেল ড্রেজিং করে ২০১৫ সালে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চ্যানেল দিয়ে গত জুন ২২ পর্যন্ত ২৬০০টি ৮-১৪ ফুট ড্রাফটের ভেসেল চলাচল করেছে। বর্তমানে এ চ্যানেলে সর্বনিম্ন ১২ ফুট এবং জোয়ারের সময় ২০ ফুট পর্যন্ত পানির গভীরতা পানি থাকে এবং প্রস্থ ২০০-৩০০ ফুট রয়েছে। নাব্য সঙ্কটে খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, কর্নতলী দিয়ে কার্গো লঞ্চ চলাচল করতে পারত না, প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং-এর পর নাব্য ফিরিয়ে এনে এখন সারা বছর চলাচল করছে। ভৈরব-ছাতক নৌপথে নাব্যতা সঙ্কটের কারণে শুকনা মৌসুমে হাফলোড দিয়ে কার্গো চলাচল করত, ড্রেজিং-এর পর এ রুটে সারা বছর ফুললোডে কার্গো চলাচল করছে। এরুটে দৈনিক গড়ে ২০০ পাথর, সিলেট বালু, সিমেন্ট, কয়লা ইত্যাদি মালবাহী কার্গো চলাচল করছে। খুলনা-নোয়াপাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এ নৌপথে প্রতদিনি গড়ে ৪০-৪৫টি সার, সিমেন্ট, চাল, গম কয়লা ইত্যাদি মালবাহী কার্গো চলাচল করে। এ নৌপথে প্রকট নাব্য সঙ্কট ছিল, জোয়ারের সুবিধা ছাড়া এ গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দিয়ে কার্গো চলাচল করতে পারত না। ২৪টি নৌপথ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং-এর পর সার্বক্ষণিক কার্গো জাহাজ চলাচল করছে।
ড্রেজিংয়ের ফলে গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে সারা বছর পানি থাকছে, ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ হচ্ছে। ড্রেজিং এর মাটি দিয়ে নিচু জমি ভরাট করে উচু করায় সেখানে বিভিন্ন প্রকার গাছ-পালা রোপণ হচ্ছে, সবুজায়ন হচ্ছে। বিভিন্ন নিচু জায়গায় পানি জমে থাকত, ময়লা-আর্বজনা ফেলা হত, এগুলো পচে র্দর্গন্ধ ছড়াত, পরিবেশের ক্ষতি করত। এসব নিচু জায়গা ভরাট করে দেয়ায় এখন আর হচ্ছে না। সর্বোপরি বলা যায় ২৪টি নৌরুট ড্রেজিং হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশের ওপর ব্যাপক পজেটিভ প্রভাব ফেলেছে। বিআইডব্লিউটিএ এ বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।
বর্তমানে সংস্থাটির তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। এগুলোর আওতায় তিন হাজার ৩১৫ কিলোমিটার নদী খনন কাজ চলছে। আরো দুটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। শিগগিরই এ দুটি প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৩৯৩ কিলোমিটার খনন শুরু হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২১৩ কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। শুষ্ক মৌসুমে যেসব নৌপথ নৌ-চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেসব নৌপথ খনন করে তা আবার চলাচল উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৩৫ কিলোমিটার নৌপথের চলাচল সচল হয়েছে। নৌপথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫৫টি হাট-বাজার। এছাড়াও নদী খননের মাটি (বর্জ্য) দিয়ে ২০২ বিঘা অকৃষি জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। বিশেষ করে বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও নেত্রকোণা সদর এ তিন উপজেলায় এখন সুদিন ফিরে এসেছে।
বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো. ছাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, খননকৃত নদীর নাব্য ও প্রবাহ ক্ষমতার উন্নয়ন হয়েছে। সে অনুযায়ী নৌযান চলাচল উক্ত নৌপথ ব্যবহারকারী যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে। ড্রেজিং করার ফলে মোট ১৩৫ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ