হজ ব্যবস্থাপনা-২০২৩ : সউদী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ-৬

পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার হেফাজত

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদ

১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪২ পিএম

মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সউদী কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় কোনো ত্রæটি আছে বলে মনে হয়নি। সুখের বিষয় হলো, এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অধিকাংশ কর্মী বাংলাদেশের। যদিও তাদের বেতন-ভাতা নেহায়েত মামুলি, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়।

হারামাইন শরীফাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ যখন নেয়া হয় তখন অনেকগুলো গণ-শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। মক্কায় আবু জাহালের বাড়িকে একটি শৌচাগারে পরিণত করা হয়েছে বলে জানা যায়। এসব হাম্মামের নির্মাণ কৌশল ও স্থাপত্য পরিকল্পনা দেখে দীর্ঘ তিন যুগ পরও বারবার অভিভ‚ত হয়েছি। টয়লেটের দরজার নিচের অংশ জীর্ণ এবং মেরামতের দাবিদার হলেও পুরো কাঠামো এখনো অত্যাধুনিক। তবে ২০ বছর থেকে সউদীতে হারাম এলাকায় অবস্থানকারী একজন স্বদেশি বললেন, এসব শৌচাগার নির্মাণের পর হারামের আওতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। অথচ হাম্মামের সংখ্যা একটিও বৃদ্ধি করা হয়নি। রমজানে ওমরাযাত্রীদের ভিড়ের ছবি দেখিয়ে তিনি বললেন, একেকটি টয়লেটে ৫০ জনের মতো লোক লাইন দিয়ে দাঁড়ায়, কল্পনাও করা যায় না।
হারামাইন শরীফাইনে না হলেও মিনা মুযদালিফা আরাফাতে হাম্মমের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আগে সেখানে হাম্মাম আর পানির জন্য হাহাকার ছিল। মরুভ‚মির আরাফাত তো এখন নিমগাছের ছায়ায় সবুজ বনবীথি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকি গাছগুলো সউদী সরকারকে দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে নিমগাছগুলোর নাম জিয়াগাছ। তবে এ তথ্য কতখানি সত্য যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

হাজীদের পানি সরবরাহের (সেকায়ার) ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। ইসলাম-পূর্ব যুগেও তার দায়িত্ব ছিল নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিবের উপর। পানির চাহিদা পুরণের তাগিদেই নহরে জুবাইদার উৎপত্তি। খলিফা হারুনুর রশীদের স্ত্রী জুবাইদার বিস্ময়কর স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার প্রতিফলন আরাফাত মিনায় পানি সরবরাহের নিদর্শন নহরে জুবাইদার এখনো বিদ্যমান।

কয়েক বছর আগেও কাঁধে পানির পাত্র নিয়ে ঘুরতে হয়েছে হাজীদের। আলহামদুলিল্লাহ এবারে খাবার পানির কোথাও সমস্যা আছে বলে অনুভব হয়নি। মক্কায় ফুন্দুকে প্রতিদিন প্রত্যেক হাজীর জন্য তিনটি ছোট্ট বোতলে করে এক লিটার করে জমজম সরবরাহ করেছেন সউদী কর্তৃপক্ষ। মক্কা ও মদিনার হেরেমে তো জমজমের পানি অবারিত ছিল। তবে যে বিপত্তিটি পুরো পরিবেশকে আক্রান্ত করেছে তা ছিল হিমশীতল পানির ছড়াছড়ি। ৪৬ ডিগ্রি তাপদাহে শুকিয়ে যাওয়া কলিজা ভিজানোর জন্য শীতল জমজম ছিল সবার কাছে লোভনীয়। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া ছিল নির্মম। ঠান্ডায়, কাশি জ্বরে কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তা বুঝা যেত মসজিদে নামাজের জামাতে। কাশির একটানা আওয়াজ লেগেই থাকত রুকু সিজদায় যাওয়ার সময়।

আমি ডাক্তার নই, তবুও একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। অনেক বছর আগের কথা। প্রচÐ শীতে তেহরানে পাঁচতারা হোটেলের বাইরে দামাবান্দ পাহাড়ের সাথে সমগ্র তেহরান বরফে ঢাকা একাকার ছিল। রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানের মরহুম ফরিদ ভাই দেখা করতে আসলে বললাম, ঠান্ডায় নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, কি করি। বললেন, বরফভর্তি গøাসে কোক নিয়ে পান করুন। বাইরে ঠান্ডা। শরীরের ভেতরটাও ঠান্ডা করুন। সেরে যাবে। আশ্চর্য রকম ফল পেয়েছিলাম। মক্কা-মদিনার বাইরে প্রচÐ গরমের সময় যদি গরম না হলেও নরমাল পানি পানের ব্যবস্থা করা হয় এবং শীতল পানির সরবরাহ বন্ধ রাখা হয় তাহলে শতকরা আশি ভাগ হাজীর অসুস্থতা কমে যাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আরাফা মিনা মুযাদলিফায় হাম্মামের বিস্তার হলেও অনেকের অভিযোগ হঠাৎ নোংরা হয়ে পড়া টয়লেটগুলো পরিচ্ছন্ন বা মেরামত করার তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা ছিল না। একটি ঘোরতর অভিযোগ তাঁবু নিয়ে। ৮ জিলহজ রাতে আমাদেরকে গাড়িতে করে ৭৩ নং মুয়াল্লিমের একটি বিরাট তাঁবুতে রাখা হলো। কয়েকশ’ নারী-পুরুষকে এক সঙ্গে পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে পুরুষ মহিলাদের মাঝখানে কোনো আড়াল করা যায় কিনা অনেক চেষ্টা করেও সবাই ব্যর্থ হলো। কারণ মুয়াল্লিমের নির্মাণ পরিকল্পনায় তার কোনো চিন্তা ছিল বলে মনে হয় না। হজের মূল পর্বে এ ধরনের মানসিক কষ্টের জন্য মুয়াল্লিমরা অবশ্যই দায়ী। বাইরে হাম্মামের জন্য মেয়ে-ছেলেদের জন্য আলাদা ডিমার্কেশন থাকলেও মেয়েদের নিজস্বতা রক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুয়াল্লিমগণ হজ পালনকারীদের প্রতি কতখানি দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া এই তাঁবু ও হাম্মামের ব্যবস্থাপনা তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
আরও

আরও পড়ুন

রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত

রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত

স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।

স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন

১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান

সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান

মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন

মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন

মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি

মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি

মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম