বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের ডজন খানেক নেতা নজরদারিতে
১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করেছে, তখন এই আন্দোলনে দলের সকল নেতাকর্মীকেই মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চায় হাইকমান্ড। কোন কর্মসূচিতেই বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠনের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। সকলকে সতর্ক করতে ও বার্তা দিতে ইতোমধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে সরিয়ে রাশেদ ইকবাল খানকে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন এমন দায়িত্বশীল ডজনখানে নেতাকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলছেন। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও। যদিও এসব নেতা প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন সামনের দিনে এমন ঘটনা ঘটবে না।
এক দফা দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। চলমান আন্দোলন সফল করতে প্রতিনিয়তই দলের শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা, পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাদের করা হয়েছে সক্রিয় এবং বহিষ্কৃতদের ফেরানো হয়েছে দলে। ফলে সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক জন¯্রােত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গত ২৯ জুলাইয়ের ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে দলটির মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে লাখ লাখ মানুষের জমায়েতের পরদিন অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হতাশ করেছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। ওই দিন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারেক রহমান।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ করে যেকোন আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলকে সামনের সারিতে দেখতে চান তিনি। এক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। যার একটি উদাহরণ ইতোমধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকায় গত ৮ আগস্ট সরিয়ে দেয়া হয়েছে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাশেদ ইকবাল খানকে। যা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলসহ বিএনপির নেতাদের মধ্যে একধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
অঙ্গসংগঠনগুলোর একাধিক নেতা জানান, ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি নিয়ে তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি, ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামনের দিনগুলোতে এর পুনরাবৃত্তি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তারা ভাবেননি। তারা বলেন, ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকেই অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে ৯ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেয়া এবং যুবদলের মহানগর কমিটি ঘোষণার বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউকেই বুঝতে দেননি। হঠাৎ করেই তিনি নির্দেশনা দেন। এমনকি যখন ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেয়ার চিঠি প্রকাশ করা হয় তখন তিনি ছাত্রদলের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। তারা বলেন, এটির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৃতপক্ষে নেতৃবৃন্দকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, পদ-পদবী নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। পদে থাকলে দায়িত্ব পালন করতেই হবে। অন্যত্থায় সরে যেতে হবে।
এদিকে ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরাই প্রশ্ন তুলছেন প্রকাশ্যে। বিশেষ করে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু মাতুয়াইলে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ দেখে হঠাৎ দৌড় দেয়ার পর সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নেতাকর্মীরাও শীর্ষ নেতার এমন আচরণে ব্যাপক সমালোচনামুখর হয়েছেন। যদিও মাতুয়াইলে প্রায় পুরোটা সময় তিনি সেখানে অবস্থান করেন। দলটির আরেক শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও ক্ষুব্ধ। ওইদিন উত্তরায় বিএনপি নেতাকর্মীরা যে স্থানে জমায়েত হয়েছিলেন সেখানে না হয়ে ভিন্ন আরেকটি স্পটে যুবদল নেতাকর্মীদের নিয়ে মিল্টন অবস্থান নেন বলে জানা যায়। এমনকি বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করার এবং একত্রে হওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি তা করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান মাতুয়াইল ও ধোলাইখালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এই দুটি স্পটে দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল বলেও জানা যায়। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানকে গাবতলীতে এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলীকে উত্তরায় দায়িত্ব দেয়া হয়। এই দুটি স্পটেই স্বেচ্ছাসেবক দল ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এর মধ্যে গাবতলীতে আমান উল্লাহ আমান উপস্থিত হওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে সাময়িক যে ধস্তাধস্তি, নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার সময়ও কোথাও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই। এটি নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটা প্রকাশ্যেই সমালোচনা হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্যতম এক শীর্ষ নেতা বলেন, ২৯ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। আমরা দায়িত্বে অবহেলা করেছি বলে তিনি মনে করছেন। আমরা ক্ষমা চেয়েছি এবং সামনের যেকোন কর্মসূচিতে শতভাগ উজার করে মাঠে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ওইদিনের কর্মসূচির জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করার কোন সুযোগ নেই। সেটির জন্য আমরা সম্মিলিতভাবেই দায়ী। নেতাকর্মীরা অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। কোথাও কোথাও একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।
আবার ওইদিন ধোলাইখালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ সেখানে যেসব নেতাকর্মী ছিলেন এবং ধোলাইখালে প্রতিরোধের যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রশংসা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান। ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দিলেও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বেশ কিছু নেতা ওইদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক নেতাকর্মীদের নিয়ে একক প্রচেষ্টায় যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সেটিকেও সাহসী হিসেবে দেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, একেকজন নেতাকে নেতাকর্মী কিংবা দেশের মানুষ সম্মান, শ্রদ্ধা করেন কারণ বিএনপি করার কারণে। তাই সবার উচিত জিয়া পরিবার আমাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন সেটির যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে জিয়া পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। এতকিছুর পরও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের মানুষকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রান্ত্রিক অধিকার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই সকলকেই এই ক্রান্তিকালে জীবন বাজি রেখেই মাঠে থাকতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা দীর্ঘদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের দাসে পরিণত হবে। তাই বিএনপিসহ সাধারণ মানুষের উচিত নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জীবন বাজী রেখে এই আন্দোলন সফল করা। তা না হলে কারো অস্তিত্ব থাকবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জমি দখল করে ছাদ ঢালাই
গুচ্ছ নয়, সঠিক সময়েই হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা - জবি শিক্ষক সমিতি
২৯ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
সোমবার বিপিএলের মিউজিক ফেস্ট, গাইবেন রাহাত ফাতেহ আলী খান
নকলায় শহীদ জিয়াউর রহমান স্মৃতি সংঘের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
রাবিতে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার হিসাব না দেওয়ার অভিযোগ, সাময়িক অব্যাহতি
রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত
স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন
মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক